চাই ধারাবাহিক নান্দনিকতা

বাংলাদেশের ক্লাসিকাল ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিত ওপেনার লিটন কুমার দাস। তাঁর প্রতিভা কিংবা সামর্থ্য নিয়ে কারোই প্রশ্ন নেই। লিটনের টেকনিক নিয়েও কারো সংশয় নেই। কিন্তু ৬ বছরের ক্যারিয়ারে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সামর্থ্যের কতটুকই বা তিনি দিতে পেরেছেন? তাঁর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অধারাবাহিকতা! দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেললেও এখনো ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতার ছাপ রাখতে পারেননি লিটন।

অবশ্য পাইপলাইনে ওপেনার সংকটে টানা ব্যর্থতার পরেও ঘুরেফিরে লিটন-সৌম্যদের উপরই আস্থা রেখেছে নির্বাচকরা। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লিটন নিজের সেরাটা দিতে পারবে বলেও প্রত্যাশা তাঁদের। আর সেই আস্থার জায়গা থেকেই বাংলাদেশের স্কোয়াডে আছেন লিটন।

আছে বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য, পাওয়ার প্লে তে দ্রুত রান তুলতেও বেশ সক্ষম তিনি। তাঁর দৃষ্টিনন্দন শট, স্টাইলিশ ব্যাটিং ওপেনিংয়ে নতুন এক সম্ভাবনা জাগিয়েছিলো। কিন্তু ভালো শুরুর পরেও ভুল শটে উইকেট দিয়ে আসা, ধারাবাহিক রান না পাওয়া – এসবের কারণে প্রায়ই তিনি সমালোচিত হয়েছেন।

লম্বা সময় সুযোগ পেলেও তার প্রতিদান দিতে পারেননি তিনি। তবে তাঁর সামর্থ্যের উপর ভরসা করেই বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের প্রত্যাশা আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে লিটনকে দেখা যাবে স্বরূপে।

চলতি বছর ব্যাট হাতে মোটেই সুবিধে করতে পারেননি লিটন। ৯ টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ৯ গড়ে ৭৫ রান করেছেন তিনি। নেই কোনো ফিফটি! সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ঘরের মাঠে পাঁচ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৬৫ রান! বিশ্বকাপের আগে এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স অবশ্যই বাংলাদেশ দলের জন্য চিন্তার কারণ।

তবে, পূর্বের ব্যর্থতা কাটিয়ে তিনি যে নতুন রূপে আবারো শুরু করতে প্রস্তুত তার প্রমান ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ। খেলেছিলেন অধিনায়ক হিসেবে! ওপেনিংয়ে দুর্দান্ত ব্যাট করে ৩৩ বলে ৫৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংসও উপহার দিলেন দলকে। সেই সাথে ইঙ্গিত দিলেন বিশ্বমঞ্চে নামার আগে ফর্মে ফেরারও।

বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য যেমন রাখেন, একই সাথে দ্রুত রান তুলতেও বেশ পারদর্শী লিটন। তবে হুট করেই ভুল শট খেলার অভ্যাসটা বদলাতে পারলে ওপেনিংয়ে লিটন হতে পারেন অদম্য। একই সাথে ধারাবাহিকভাবে রানও করতে হবে। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স অবশ্যই আত্মবিশ্বাস যোগাবে লিটনকে।

লিটনের অ্যাবিলিটি নিয়েও কারো সংশয় থাকার কথা নয়। তিনি যে অধারাবাহিক এটি নিয়ে অবশ্য আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। তবে, বড় রান তাড়া করতে নামলে লিটন হতে পারেন দলের জন্য ‘কি’ প্লেয়ার। সব মিলিয়ে আপাতত ওপেনিংয়ে নাইম-লিটন জুটিতেই হয়তো ভরসা রাখবে টিম ম্যানেজমেন্ট।

এক সাক্ষাৎকারে লিটন বলেছিলেন, নতুন বলে খেলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। একই সাথে বিশ্বকাপের আগে নিজের ব্যাটিং নিয়েও কিছু কাজ করেছেন। চেষ্টা করেছেন ভুল-ত্রুটি শুধরে নিজেকে শেষ সময়ে ঝালিয়ে নেওয়ার।

প্রায় ছয় বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার পরেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি লিটন। ৩৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২০ গড়ে ১৩০ স্ট্রাইক রেটে ৭১১ রান করেছেন তিনি। ধারাবাহিকতা না থাকলেও স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে তিনি বেশ উপরেই। সাম্প্রতিক সময়ে ওপেনিংয়ে বাংলাদেশ দলের যে অবস্থা এতে শঙ্কার মেঘটা জমাট বেঁধে আছে! আর সেই জমাট মেঘ সরিয়ে আলোর দেখা দিতে পারে যদি ওপেনিংয়ে লিটন নিজের সেরাটা দিতে পারেন।

সবকিছু ঠিক থাকলে বিশ্বকাপের মঞ্চে শুরুর দিকে নাইম শেখের সাথে ওপেনিংয়ে জুটি বাঁধবেন লিটন। চলতি বছর ব্যাট হাতে বেশ বাজে সময় কাটালেও বিশ্বকাপের মঞ্চে নির্বাচক, কোচ এবং সমর্থকদের আস্থা থাকবে লিটনের উপর।

ক্লাসিকাল তকমা নিয়ে খেলে যাচ্ছেন লম্বা সময়। পাইপলাইনে ওপেনিং সংকট যেনো আরো সুযোগ করে দিয়েছে লিটনদের। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে লিটন হতে পারেন দলের সেরাদের একজন।

সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পারবেন সেটা সময়ই বলে দিবে। আপাতত ওপেনিংয়ে লিটন, নাইম, সৌম্যদের উপর ভরসা রাখা ছাড়া বিকল্প কিছুও নেই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link