যুবরাজের বীরত্বে আটক অজি শ্রেষ্ঠত্ব

সেদিনও হয়তো খাতা-কলমে অনেকেই অজিদের এগিয়ে রেখেছিলেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত যাদের সাথে হ্যাটট্রিক শিরোপা সঙ্গী হয়েছে, বিশ্বকাপের মঞ্চে যাদের এক যুগ ধরে হারের ইতিহাস নেই, তাদেরকে হারানোর সাধ্যি কার! তবে আহমেদাবাদের মোতেরায় দিনটা ছিল ভারতেরই। দীর্ঘ ২৪ বছর পর, বিশ্বকাপে ভারতের ক্যাঙ্গারুবধ হয়েছিল ঐ দিনই।

সেদিনও হয়তো খাতা-কলমে অনেকেই অজিদের এগিয়ে রেখেছিলেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত যাদের সাথে হ্যাটট্রিক শিরোপা সঙ্গী হয়েছে, বিশ্বকাপের মঞ্চে যাদের এক যুগ ধরে হারের ইতিহাস নেই, তাদেরকে হারানোর সাধ্যি কার! তবে আহমেদাবাদের মোতেরায় দিনটা ছিল ভারতেরই। দীর্ঘ ২৪ বছর পর, বিশ্বকাপে ভারতের ক্যাঙ্গারুবধ হয়েছিল ঐ দিনই।

২৪ মার্চ, ২০১১। কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি ভারত আর অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ। তাই ভারতকে নিয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশা ছাড়িয়েছে অনেকদূর। কেউ কেউ তো ১৯৮৩ বিশ্বকাপেরই পুনরাবৃত্তির দিকে চোখ রেখেছিলেন। তাই ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ হলেও, ভারতের বিশ্বকাপ দলটার কাঁধে ভর করেছিল অসম চাপ।

তার উপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যুবরাজ। ২০ মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাট করার সময় আচমকাই বমি করতে শুরু করেছিলেন সে সময়ের ভারতীয় দলের অন্যতম এ অলরাউন্ডার। তবে পাঞ্জাবে বেড়ে ওঠা দুরন্ত ছেলেটাকে আটকায় কে!  কোনো মতে নিজেকে সামলে ব্যাট হাতে সেদিন ১২৩ বলে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন যুবরাজ সিং।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সে ম্যাচ না জিতলেও সমীকরণে ভারতের কোনো হেরফের হতো না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মঞ্চটা যখন নকআউট পর্ব, তখন তো এক প্রকার বাঁচা মরার লড়াইয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভারত। এমন একটা ম্যাচে তাই যুবরাজ সিংকে নিয়েই মাঠে নামলো টিম ইন্ডিয়া।

টসে জিতে প্রথম ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন অজি অধিনায়ক রিকি পন্টি। মোতেরার সে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন পন্টিং। এক ব্র্যাড হাডিন তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন। বাকিরা ছিলেন আসা যাওয়ার মাঝেই। তবে রিকি পন্টিং একাই অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গেলেন লড়াকু এক সংগ্রহের দ্বারপ্রান্তে। রিকি পন্টিংয়ের সেঞ্চুরিতে ২৬০ রানের সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া।

জবাবে ব্য়াট করতে নেমে গৌতম গম্ভীর ও শচীনের জোড়া ফিফটিতে শুরুটা ভালই করেছিল ভারত। তবে একটা সময়ে ২৬১ রানের লক্ষ্যে ১৮৭ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে টিম ইন্ডিয়া। এর ফলে ম্যাচ জয়ের পথে অনুমিতভাবেই চাপ তৈরি হয়েছিল ভারতের ইনিংস। কিন্তু সেখান থেকেই খেলা ঘুরিয়ে দেন যুবরাজ। যোগ্য সঙ্গ পেয়েছিলেন রায়নার।

দু’জনে মিলে অপরাজিত ৭৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন। আর এতেই চাপ সামলে জয়ের পথে এগিয়ে যায় ভারত। ইনিংসের ৪৮ তম ওভারে ব্রেট লিকে কভারের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতান যুবরাজ। উইনিং শট খেলার পর ক্রিজেই বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন ৬৫ বলে ৫৭ রান করা যুবরাজ সিং। কারণ ঐ জয়টাই যে বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের পাওয়া শেষ ২৪ বছরে পাওয়া প্রথম জয় ছিল।

এরপর সেমিতে পাকিস্তান ও ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সে বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ৩৬২ রানের পাশাপাশি বল হাতে ১৫ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হন যুবরাজ। তবে সফল বিশ্বকাপ অভিযান শেষে ক্যান্সার ধরা পড়ে যুবরাজের। একটা সময় পর সুস্থ হয়ে বাইশ গজে প্রত্যাবর্তনও হয়েছিল। তবে আগের সেই ঝাঁঝ আর ফেরেনি যুবির ব্যাটে কিংবা বলে। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার। তবে ভারতের ইতিহাসে যুবরাজ সিং নামটা ততদিনে পৌঁছে গেছে কিংবদন্তিতুল্য আসনে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...