যুবরাজ সিং ও ললিত মোদির পোর্শে!

পৃথিবীর যত বিলাশবহুল গাড়ি রয়েছে, তাদের মধ্যে পোর্শে নামক গাড়ির অবস্থান তালিকার উপরের দিকেই। আজ থেকে প্রায় দেড় দশক আগেও এই গাড়ির মালিক হতে হলে প্রয়োজন পরত প্রায় লাখ খানেক ডলার। টাকার হিসেব কষতে বসলে কোটি খানেক টাকা। ২০০৭ সালের টাকার মানের বিবেচনায় আজকের বাজারে মূল্যটা আরেকটু বেড়ে যাবারই কথা। এই টাকার লোকশান সইতে হয়েছিল লোলিত মোদিকে। আর লোকশানের কারণ ছিলেন যুবরাজ সিং।

যুবরাজ সিংকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন নেই। ভারতের এক সময়কার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন তিনি। দলের প্রয়োজনে অধিকাংশ সময়ই গর্জে উঠেছে তাঁর ব্যাট। বল হাতেও মাঝে মধ্যে তিনি দলকে দিয়েছেন ব্রেক থ্রু। দুইটি ভিন্ন ফরম্যাটের বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর অবদান নিশ্চয়ই ভুলে যাবার কথা নয়। অন্যদিকে ভারতের ক্রিকেটের খোঁজ-খবর রাখা মানুষদের কাছে লোলিত মোদি অচেনা কোন নাম নয়।

ভারতের ক্রিকেটে বহু আগে থেকেই যুক্ত আছেন তিনি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মত জমজমাট ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের প্রতিষ্ঠাতাও এই লোলিত মোদি। ভারত ক্রিকেট সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার ( সাথে একটা লম্বা সময় ধরে যুক্ত আছেন তিনি। গুঞ্জন আছে তিনি হয়ে যেতে পারেন বোর্ড সভাপতি। তবে সে এক অন্য আলাপ। ২০০৭ সালের সে ঘটনায় ফেরা যাক।

২০০৭ সাল, ক্রিকেটের বদলে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদানটাই বোধহয় রেখেছিল সে বছরটা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জয়যাত্রার শুরুর বছর। সেবার ভারত জিতেছিল প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তবে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ভারত দলের পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধার ছিল না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে লোলিত মোদি চলে গেলেন ভারতের ড্রেসিং রুমে। সেখানে গিয়ে তিনি ঘোষণা দিলেন, যে এক ওভারে ছয়টি ছক্কা হাঁকাতে পারবে অথবা যে এক ওভারে ছয় উইকেট নিতে পারবে, তাঁকে তিনি সে সময়ের অত্যাধুনিক মডেলের গাড়ি উপহার দেবেন।

তিনি হয়ত ঘুনাক্ষরে ভাবতে পারেননি যে তাঁর কোটি খানেক রুপি খরচ হতে চলেছে। সে চ্যালেঞ্জটা যেন দু’হাতে লুফে নিলেন যুবরাজ সিং। তিনি ধারণ করলেন রুদ্রমূর্তি। স্টুয়ার্ড ব্রড হয়ত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সাল দিনটা কোনদিনই ভুলতে পারবেন না। আমৃত্যু হয়ত একটা দুঃস্বপ্নের মত করে তারা করে যাবে সে স্মৃতি। ব্রডের এক ওভারে যুবরাজ মেরে দিলেন ছয়টি ছক্কা। মাঠের প্রতিটা অঞ্চলের উপর দিয়েই তিনি ছক্কা হাকিয়েছিলেন। ব্রড শুধু একরাশ হতাশাভরা চোখে তাকিয়ে দেখেছেন ব্রড।

আর সীমানার বাইরে বসে বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন লোলিত মোদি। সেদিনে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লোলিত মোদি বলেন, ‘আমি সাইডলাইনে বসেছিলাম। ব্রডের প্রথম বলে যুবরাজ সিং ছক্কা হাঁকালো। এরপর দ্বিতীয় বলে, এরপর তৃতীয় ছয়। আমি যেন জেগে উঠলাম। আমি নিজেকে বললাম ‘শেষ!’ যুবরাজ আমার দিকে তাকালো। সে চতুর্থ ছয় মারল। এরপর পঞ্চম। তারপর ষষ্ঠ। তারপর সে ছুটে এলো আমার দিকে, আর বলে উঠলো আমার পোর্শে! আমার পোর্শে!’

খানিকটা বিস্ময় নিয়ে লোলিত মোদি সেদিন বলে দিলেন ‘হয়ে যাবে’। মোদি আরও বলেন, ‘সে ছুটে চলে যাচ্ছিল। আমি তাঁকে বললাম দাঁড়াও। তোমার ব্যাটটা দিয়ে যাও। সে ব্যাট দিয়ে অন্য আরেকটি ব্যাট নিয়ে নিলো। আমি তাঁকে তখন বললাম, আজ থেকে এই ব্যাট আমার।’সেদিনের যুবরাজ সিংয়ের সেই অতিমানবীয় পারফরমেন্স তাঁর নামটি লিখিয়ে ফেলে রেকর্ড বইয়ে। ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্রতম সংস্করণে এক ওভারে ছয়টি ছক্কা হাঁকানো প্রথম খেলোয়াড়ে পরিণত হন যুবরাজ সিং।

শুধু রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েই থেমে যাননি। জিতে নিয়েছিলেন এক অত্যাধুনিক পোর্শে গাড়ি। আর শেষ অবধি সেবারের টুর্নামেন্টটা রাঙিয়েছিলেন শিরোপা জয়ের হাজারো রঙে। সেবারের সেই বিশ্বকাপ পরবর্তীতে উদ্বুদ্ধ করেছিল লোলিত মোদিকে আইপিএল আয়োজনে। আর এরপর তো গোটা ক্রিকেটের দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু করে। সেই বিশ্বকাপ কোন ব্যক্তি হলে, তাঁকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করতেন হয়ত লোলিত মোদি কিংবা বিসিসিআই অথবা বিশ্ব ক্রিকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link