চেকমেট ক্রিকেট!

যুজবেন্দ্র চাহালের বাজিমাত করার কথা ছিল দাবার দুনিয়াজুড়ে। কিন্তু তিনি বাজিমাত করলেন ভারতীয় ক্রিকেটের দুনিয়া।

যুজবেন্দ্র চাহালের বাজিমাত করার কথা ছিল দাবার দুনিয়াজুড়ে। কিন্তু তিনি বাজিমাত করলেন ভারতীয় ক্রিকেটের দুনিয়া। ‘কপালের লিখন যায়না খণ্ডন’ বলে যে একটা কথা প্রচলিত, ব্যাপারটা এরকমই আরকি। পুরো নাম যুজবেন্দ্র সিং চাহাল। জন্মেছেন ১৯৯০ সালের ২৩ জুলাই।

তিনি একজন ডানহাতি লেগ ব্রেক বোলার, যিনি ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টুয়েন্টি ফাইনালে বোলিং একশন দিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে হরিয়ানা ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেন। প্রথম দিকে, চাহাল একজন মিডিয়াম পেসার ছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তিনি লেগ স্পিনে তাঁর ফোকাস স্থানান্তরিত করেন। দ্রুতই তিনি লেগস্পিনে দক্ষতা অর্জন করে ফেলেন।

সাত বছর বয়স থেকেই চাহালের দাবা এবং ক্রিকেট উভয়ের প্রতিই গভীর আগ্রহ ছিল। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে দাবাতে তিনি ভালো করছিলেন। কৈশোরে চাহাল দাবাতে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তাকে এখনও FIDE-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তালিকায় দেখা যায় এবং একবার ১৯৪৬ রেটিং পেয়েছিলেন।

স্পন্সরের অভাবে বাধ্য হয়ে চাহালকে দাবা ছেড়ে দিতে হয়। দাবাতে ক্যারিয়ার গড়তে চাহালের বার্ষিক ৫০ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু একজন স্পনসরের অভাবে চাহালের দাবা ক্যারিয়ার দেখেনি আলোর মুখ। এখন দাবাটা নেহায়েতই তাঁর সখ।

চাহাল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ২০১১ সংস্করণে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দ্বারা প্রথম চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু পুরো মৌসুমে একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ পাননি। ভাগ্যক্রমে পরে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টোয়েন্টি-টোয়েন্টি এর ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। চাহাল সেই ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন এবং তাঁর তিন ওভারে মাত্র নয় রান দিয়ে দুটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন।

২০১১-১৩ সময়কালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সাথে তাঁর তিন বছরের চুক্তির সময়, চাহাল শুধুমাত্র একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। পরের বছর ২০১৪ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু তাঁকে কিনে নিয়েছিল দশ লক্ষ রুপির বিনিময়ে। ব্যাঙ্গালুরুর সাথে তাঁর প্রথম বছরে ১৪ টি ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে মোটামুটি ভাল পারফরমেন্স করেছিলেন। পরের মৌসুমে, চাহাল ১৫ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়ে ব্যাঙ্গালুরুর সবচেয়ে সফল এবং সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার বনে যান।

আবার তিনি ২০১৫ মৌসুমের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন এবং তিনি ২০১৬ সালে ১৩ ম্যাচে ২১ টি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়ে দারুণ ফর্ম অব্যাহত রাখেন। চাহাল আইপিএল ২০১৬ এর মৌসুমে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়ের পুরস্কারেও ভূষিত হন। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু তাঁকে ১০ লক্ষের জায়গায় ২০১৮ সালে তাঁকে ৬০০ লক্ষ রূপিতে আবার দলে ভেড়ায়। কারণ তিনি তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন।

আইপিএল ২০১৬ তে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরে, চাহালকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের জন্য ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলে ডাকা হয়েছিল। সেখানে তিনি তিনটি ওয়ানডে ম্যাচে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন, আর টিটোয়েন্টিতে তিনটি উইকেট শিকার করেছিলেন। সেই সফরে তাঁর সেরা স্পেলটি আসে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে, যেখানে তিনি ভুসি সিবান্দা, সিকান্দার রাজা এবং এলটন চিগুম্বুরার মত খেলোয়াড়দের উইকেট তুলে নেন এবং ছয় ওভারে দুটি মেইডেন দিয়ে মাত্র ২৫ রান খরচ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে চাহাল তার বাবাকে তাঁর আইডল হিসাবে মানেন এবং যখন ক্রিকেটের ক্ষেত্রে তাঁর আইডল প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ান লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন, যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বশ্রেষ্ঠ লেগিও। ক্রিকেট এবং দাবার পাশাপাশি চাহাল ফুটবলও দেখতে পছন্দ করেন।

ক্লাব ফুটবলে তিনি রিয়াল মাদ্রিদ এবং বিখ্যাত ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর একজন বড় ভক্ত। চাহালের মতে, দাবায় দক্ষতা তাঁকে মেজাজ ঠাণ্ডা রাখতে এবং ক্রিকেট মাঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা সাজাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। যা তাঁর ভালো বোলিং এর পেছনের রহস্য। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...