রিয়াদের ক্যারিয়ার কি শেষ!

হ্যাঁ, রিয়াদের ক্যারিয়ার একরকম শেষ বলে দেওয়াই যায়।

অলিখিত এক সেমিফাইনাল। উত্তেজনার পারদ তখন আকাশচুম্বী। ম্যাচ পরিচালনাকারী কর্তাদের সাথে একটা বাকবিতণ্ডার পরিসমাপ্তিও হয়ে গেছে। থমথমে অবস্থা। অন্যদিকে জয়ের জন্য চাই চার বলে ১২ রান। এমন এক মুহূর্ত লাল-সবুজ রঙে রাঙিয়ে নিজেদের করে নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইসুরু উদানাকে মারা শেষ ছক্কাটা তো আর চাইলেই ভুলে যাওয়া যায় না।

তাছাড়া ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের মহামঞ্চে পর পর দুই খানা শতক করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাও আবার ওসেনিয়ার বৈরি কন্ডিশনে। সেটাও তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে অনন্য এক নজির। কতশত ম্যাচ জয়ের কাণ্ডারি রিয়াদ, সে ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করা তো দায়। তবে গেল প্রায় কয়েক বছর ধরেই কেমন যেন মলিন হয়ে গেছেন রিয়াদ। আগের সে তেজ, আগের সে বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং এখন আর দেখাই যায় না। তিনি যেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। একটা আবরণে মুড়িয়ে গেছেন তিনি।

সে আবরণটা বয়সের। বয়স তো কম হল না আমাদের সাইলেন্ট কিলারের। ৩৬ বছর থেকে খানিকটা বেশি। একটা ক্লান্তি এসে যাওয়া বড্ড স্বাভাবিক। একটা লম্বা সময় ধরে তো টানতে হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট নামক এক রণতরী। তবে সমস্যাটা হচ্ছে রিয়াদ বুঝতে পারছেন না তাঁর এখন বিশ্রাম দরকার অথবা তিনি বুঝতে চাইছেন না। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা নিশ্চিতরুপেই তা আন্দাজ করে ফেলেছেন।

তবে তা আরেকটু আগে নিশ্চয়ই করা যেত। দেরিতে হলেও তা হচ্ছে। প্রশ্ন জাগছে তবে কি রিয়াদের ক্যারিয়ার শেষ? হ্যাঁ, একরকম শেষ বলে দেওয়াই যায়। টাইগার ক্রিকেট পাড়ায় তো খবর রটেই গেছে। জিম্বাবুয়ে সফরের জন্যে টি-টোয়েন্টি দলের নতুন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। এই পরিবর্তনটা একটা নতুন দিনের বার্তা দেয়। কেননা শুধু অধিনায়কত্ব হস্তান্তর করাই না, মাহমুদউল্লাহকে রীতিমত বিসিবির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বিশ্রাম।

এই পদক্ষেপে একটা বিষয় স্পষ্ট। হয়ত বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট রিয়াদকে আর বিবেচনা করছে না টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। করবার কথাও নয়। শেষ ১০ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ২২ রানের ইনিংস। এছাড়া এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচও ভীষণ প্রশ্নবিদ্ধ। বয়সের ভারে মূলত ফ্লেক্সিবিলিটি কমেছে। আর সে কারণেই রান করার সক্ষমতাও কমেছে রিয়াদের। মূলত একটা জোর গুঞ্জন রয়েছে সাকিব আল হাসান হতে পারেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের পরবর্তী অধিনায়ক।

এমনটাই যদি হয় তবে রিয়াদের দলে থাকার বিষয়টা খানিক অসম্ভব। কেননা সাকিব সাধারণত পারফর্ম না করা খেলোয়াড়দের তাঁর দলে রাখতে চাননা। তেমনটা হয়ে থাকলে রিয়াদ চলে গেলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আড়ালে সে কথা বলতে দ্বিধা নেই। তবে ওয়ানডেতে এখনও রিয়াদের ভবিষ্যৎ রয়েছে দোলাচলে। তাঁকে অবশ্য ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল দলে চান। তিনি অকপটে স্বীকারও করেছেন যে রিয়াদসহ বাকি তিন সিনিয়র খেলোয়াড়দের নিয়ে তামিম খেলতে চান ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ।

টিম ম্যানেজমেন্টের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অধিনায়ক। তবে তিনি সর্বেসর্বা নন। দলে কোন খেলোয়াড় থাকবেন সে সিদ্ধান্তটা সবার সম্মতিতেই নির্ধারণ করা হয়। আর টিম ম্যানেজমেন্ট যদি আস্থা হারিয়ে ফেলেন মাহমুদউল্লাহর উপর থেকে তবে তাঁকে হয়ত ওয়ানডে ক্রিকেটটাও ছেড়ে দিতে হতে পারে। তবে তিনি আবারও নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রিয়াদ থাকছেন। স্বাভাবিকভাবে ইনজুরি মুক্ত থাকলে একাদশে তাঁর সুযোগ পাওয়াটা যেন অবধারিত।

এই সিরিজেও যদি রিয়াদ নেতিবাচক ব্যাটিং প্রদর্শনই উপহার দেন তবে তা বেশ মুশকিল হয়ে যাবে তাঁর জন্য। তিনি সাধারণত পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাট করে থাকেন। তাঁর সে পজিশনটা নিজেদের করে নেওয়ার মত তরুণ খেলোয়াড়দের একটা ছোটখাটো তালিকা রয়েছে। সোহান, ইয়াসির আলী চৌধুরি রাব্বি, আফিফ হোসেনদের মত তরুণরা স্রেফ সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। সুযোগ পেলেই লুফে নিতে তাঁদের কালক্ষেপন করবার কথা নয়।

তাছাড়া বোর্ড সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনও বেশ একটু চটেই রয়েছেন রিয়াদের উপর। ২০২১ সালে রিয়াদ হুট করেই অবসর নিয়ে নেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে। অথচ তিনি এর আগে নাকি বোর্ড সভাপতিকে জানিয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি সবগুলো ফরম্যাটেই খেলতে চান। এমন হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার কারণে বেজায় চটেছিলেন পাপন। সে রাগটা হয়ত ক্রমেই বেড়েছে রিয়াদের অফফর্মের কারণে।

রিয়াদের এই অফফর্ম কাটিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময় যে তিনি পেয়েছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখনও পাচ্ছেন। তবে নিজেকে ফিরে পাওয়া আর হচ্ছে না। বয়সকেও পাশে পাচ্ছেন না রিয়াদ।

তাঁর পেছনে সময় ব্যয় করা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘ব্রডার পিকচার’-কে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। এখন সময় তরুণদের জায়গা করে দেওয়া। তাঁদেরকে প্রমাণের সুযোগ করে দেওয়া। একদিন এই তরুণদের থেকেই টাইগাররা খুঁজে পাবে আরও একজন ‘সাইলেন্ট কিলার’।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...