যে বিন্দুতে একাকার বুলবুল-জাকির

সেই কালো মেঘকে অবশ্য বৃষ্টি হয়ে ঝরতে দেননি তরুণ জাকির হাসান। ঝড়ো বাতাসের মত করে উড়িয়ে দিয়েছেন দূরে। তামিম ইকবালের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছিলেন জাকির। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে সেরা পারফর্মার বনে গিয়েছেন। ব্যাটিং আর ধৈর্যের পরীক্ষায় মুগ্ধ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের।

ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছেন তামিম ইকবাল, এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই চিন্তার ভাজ পড়েছিল ভক্ত-সমর্থকদের কপালে। ভারতের বোলিং লাইনআপ আর বাংলাদেশের নড়বড়ে টপ অর্ডারের মাঝের লড়াইয়ে একমাত্র তামিমের উপরই আশা রেখেছিল সবাই। কিন্তু ইনজুরির কারণে এই অভিজ্ঞ ব্যাটার মাঠের বাইরে চলে গেলে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমা হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে।

সেই কালো মেঘকে অবশ্য বৃষ্টি হয়ে ঝরতে দেননি তরুণ জাকির হাসান। ঝড়ো বাতাসের মত করে উড়িয়ে দিয়েছেন দূরে। তামিম ইকবালের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছিলেন জাকির। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে সেরা পারফর্মার বনে গিয়েছেন। ব্যাটিং আর ধৈর্যের পরীক্ষায় মুগ্ধ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের।

শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি, ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২০ রান করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন জাকির হাসান। তবে ৪৫ বলের এই ইনিংসেই নিজের সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়েছিলেন তিনি। আর এই সামর্থ্যের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসেই। ভারতের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে অভিষেক দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি।

রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বলে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১০০ রান করেছিলেন এই ব্যাটার; আর এই রান তুলতে ২২৪টি বল খেলেছেন তিনি। ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠা জাকিরের ইনিংসে রয়েছে ১২টি চার এবং একটি ছয়ের মার।

মাত্র চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে অভিষেকে শতকের দেখা পেয়েছেন জাকির হাসান। এর আগে ২০০০ সালে আমিনুল ইসলাম, ২০০১ সালে মোহাম্মদ আশরাফুল এবং ২০১২ সালে আবুল হাসান রাজু নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেলমেট উঁচিয়ে উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। অর্থাৎ দীর্ঘ এক দশক পর কোন লাল-সবুজের প্রতিনিধি ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

সেখানেই শেষ নয়, সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও ব্যাটার জাকির হাসানের দেখা পাওয়া গিয়েছে। মিরপুরের বোলিং স্বর্গে প্রথম ইনিংসে ক্রিজে সেট হওয়ার কঠিন কাজটা করেই ফেলেছিলেন তিনি, কিন্তু ৩৪ বলে ১৫ রান করে সাঁজঘরে ফিরতে হয় তাঁকে। পরের ইনিংসে আরো সতর্ক এই তরুণ; ৫১, রান করতে মোকাবিলা করেছেন ১৩৫টি বল। যদিও বাজে শটে আউট হওয়ার আক্ষেপ নিয়েই এরপর বাইশ গজ ছাড়তে হয় তাঁকে।

নিজের অ‌ভি‌ষেক টে‌স্টেই সেঞ্চু‌রি; এরপরের ম্যাচে করেছেন হাফসেঞ্চুরি। জাকির হাসানের জন্য এমন অর্জন বিশেষ কিছুই; শুধু জাকিরের জন্যই নয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এমন কীর্তি বিরল-ই বটে। এর আ‌গে কেবল আ‌মিনুল ইসলাম বুলবু‌ল করতে পেরেছিলেন এমনটা।

২০০০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১৪৫ রান করেছিলেন তিনি।

পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৭৪ রানের একটি ইনিংস। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন বুলবুল, এরপর দীর্ঘ ২২ বছরের অপেক্ষা শেষে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে এমন কীর্তি গড়লেন ২৪ বছর বয়সী জাকির হাসান।

অনেকটা সময় ধরেই তামিম ইকবালের যোগ্য উত্তরসূরীর খোঁজে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। অনেক ওপেনারের উপর ভরসা করা হলেও তেমন কেউই পারেননি আস্থার প্রতিদান দিতে। তবে এবার সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান জাকির হাসান আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন, নিজের সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। স্বয়ং হার্শা ভোগলের প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি।

জাকির হাসানের মতই টেস্ট ক্যারিয়ারে স্বপ্নীল শুরু হয়েছিল সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়ের। সাদমান তো এখন বিবেচনার বাইরে, জয়ও ধুঁকছেন রান খরায়। যেই সম্ভাবনার আলো জাকির হাসান দেখিয়েছেন সেই আলো কতটা দূর বয়ে নিতে পারবেন তিনি – সেটাই এখন প্রশ্ন; কেবল সময়ই দিতে পারবে এটির উত্তর।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...