২৫ বলে অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংস। ৩ চার আর ৪ ছক্কায় সাজানো দুর্দান্ত একটি ইনিংস। বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে আজ এমনই একটা ইনিংস খেলেছেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু জিয়ার এই ঝড়ো ইনিংসও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হার ঠেকাতে পারেনি। সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালের কাছে তারা হেরেছে ২৬ রানে।
চট্টগ্রামের হয়ে আজ পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করতে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। বরিশালের রানপাহাড়ে লক্ষ্যটা তখনও অনেক দূরে। শেষ ৪৬ বলে প্রয়োজন ছিল ১১৫ রান। বাংলাদেশের মাটিতে কিংবা প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশি কোনো ব্যাটার এমন প্রায় অসাধ্য পথ পাড়ি দিবেন- সেটা ভাবাই যেন বাহুল্য। জিয়াউর রহমানও অনুমিতভাবেই সে কঠিন পথ পাড়ি দিতে পারেনি।
কিন্তু অন্যরা যেটা পারেন না, সেই প্রতিরোধ গড়ার অন্তত চেষ্টা করেছেন তিনি। সময়োপযোগী দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছেন। চার, ছক্কার ফুলঝুরিতে অন্তত লক্ষ্যের পথে ছুটেছেন। ফিনিশিং রোলে যেমন ব্যাটিং করা প্রয়োজন ঠিক তেমনটাই করেছেন। হ্যাঁ। দিনশেষে ঠাই হয়েছে বিজীতদের দলেই। কিন্তু জিয়ার এই ইনিংসকে কোনোভাবেই ফেলে দেওয়া যায় না। বিশেষত, বাংলাদেশি কোনো লোয়ার অর্ডার ব্যাটার মাঠে পাওয়ার হিটিং করছেন, এমন দৃশ্যই বেশ নগণ্য। সেখানে জিয়ার এমন ব্যাটিং নিশ্চিতভাবেই প্রশংসনীয়।
টুকটাক ব্যাটিং, টুকটাক বোলিং- জিয়াউর রহমানের প্লেটিং রোলটাই এমন। ক্যারিয়ারে কখনোই খুব বেশি ধারাবাহিক ছিলেন না। তারপরও এই ৩৬ বছর বয়সের জিয়ার বিকল্প বের করাটা বেশ কঠিন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পাওয়ার হিটিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জিয়া এ ক্ষেত্রে খুব ধারাবাহিক না হলেও ম্যাচ বের করে দেওয়ার মতো ইনিংস খেলার সক্ষমতা রয়েছে তাঁর। একই সাথে বোলিংটাও তিনি করতে পারেন। এই যেমন আজকের ম্যাচেই তিনি তাঁর পূর্ণ ৪ ওভারের বোলিং কোটা শেষ করেছেন। একটি উইকেট পেয়েছেন। আর নিজ দলের দেশিয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে মিতব্যায়ী বোলার ছিলেন তিনি।
জিয়ার ৪৭ রানের ইনিংসে ফেরা যাক। মিডল অর্ডারে এমনিতে তাঁকে ব্যাট করতে দেখা যায় খুব কম। সেই অনভ্যস্তাতে পাঁচে ব্যাটিং করতে এসে কেমন করবেন তা নিয়ে একটা শঙ্কা ছিলই। শুরুর ব্যাটিং এপ্রোচে সেই শঙ্কা বরং তীব্রই হয়েছিল। তবে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন যখন করিম জানাতের বলে একটি ছক্কা হাঁকালেন।
এরপরে পাওয়ার হিটিংয়ের মোমেন্টামটা পান খালেদ আহমেদের করা ওভারে। সেই এক ওভারেই তিনি হাঁকান দুইটি ছক্কা আর একটি চার। হিটিংয়ে এপ্রোচ বজায় রাখেন পরের ওভারেও। করিম জানাতের করা সে ওভারে এবার জিয়া দুটি চার ও একটি ছক্কার মার মারেন। ইনিংসের শেষ ওভারে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তবে সে ওভারের চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিলে আর স্ট্রাইক প্রান্তে সুযোগ হয়নি জিয়ার। তাই ৪৭ রানেই আঁটকে থাকতে হয় তাঁকে।
যেহেতু চট্টগ্রাম ম্যাচ জেতেনি, তাই জিয়ার এ ইনিংস সম্ভবত ব্যর্থ চেষ্টার কাতারেই চলে যাবে। তবে নিজের খেলা শেষ ১১ বলে যে জিয়া যে ৩ টা ছক্কা আর ৩ টা চার মেরেছেন- সেই ব্যাটিং এপ্রোচটা তাঁকে অবশ্যই আলোচনার কেন্দ্রে আনার দাবি রাখে। সেটা হয়েছেও বটে। জনপ্রিয় ক্রিকেট পোর্টাল ইএসপিএন ক্রিকইনফো বলছে, আজকের ম্যাচে সবচেয়ে ইম্প্যাক্টফুল পারফর্মার ছিলেন জিয়াউর রহমান। দল হারার পরেও কিভাবে তিনি এই প্রভাব রাখলেন?
বল হাতে জিয়া উইকেট পেয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। এখন সেই উইকেটটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বুঝতে ফিরে যেতে হবে ম্যাচের দিকে। রিয়াদ তখন ২৫ রানে ব্যাট করছিলেন। দুই চার ও দুই ছক্কায় বেশ সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন তিনি। এমন সময়ে তাঁর উইকেটটা ছিল খুবই জরুরি। আর সেই সময়েই রিয়াদকে আউট করেন জিয়া। আর ব্যাটিংয়ে এসে ২৫ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে দলকে হয়তো জেতাতে পারেননি।
কিন্তু দলকে একটা সম্মানজনক জায়গায় স্কোর নিয়ে যেতে জিয়ার এ ইনিংসের গুরুত্ব ছিল অনেক। মূলত চট্টগ্রাম ম্যাচ হেরেছে নিজেদের বোলিং ব্যর্থতায়। আবু জায়েদ আর মৃত্যুঞ্জয়- এই দু’জনের ৮ ওভারেই বরিশাল তুলেছে ১০২। কার্যত ম্যাচটা ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছে।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ পেরিয়ে জিয়া এখন রয়েছেন ক্রান্তি লগ্নে। জিয়ার এমন পারফরম্যান্সে তেমন কিছু বদলে যায়নি। কিন্তু ক্রিকেটারদের ঐ যে প্রমাণ করার ক্ষুধা সেটা তিনি ঠিকই পেরেছেন। এমন পারফরম্যান্সের জন্য সেই ক্ষুধার্ত কিংবা তৃষিত জিয়াকেই তো বারবার চাই।