নিউজিল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেট সুপারস্টার

একালের বিবেচনা করলে, তাঁকে সবাই চেনেন সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার স্যার রিচার্ড হ্যাডলির বাবা হিসেবে। তার পাঁচ ছেলের মাঝে তিন ছেলেই গায়ে জড়িয়েছেন নিউজিল্যান্ডের জার্সি। ছেলেদের পরিচয়ে তাঁকে পরিচিত করতে গিয়ে অনেকেই ভুলে যায় তাঁর নিজের পরিচয়। তিনি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট সারথীদের একজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের সময়কালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটকে সামনে টেনেছেন একা হাতে।

একালের বিবেচনা করলে, তাঁকে সবাই চেনেন সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার স্যার রিচার্ড হ্যাডলির বাবা হিসেবে। তার পাঁচ ছেলের মাঝে তিন ছেলেই গায়ে জড়িয়েছেন নিউজিল্যান্ডের জার্সি। ছেলেদের পরিচয়ে তাঁকে পরিচিত করতে গিয়ে অনেকেই ভুলে যায় তাঁর নিজের পরিচয়। তিনি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট সারথীদের একজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের সময়কালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটকে সামনে টেনেছেন একা হাতে।

তিনি ওয়াল্টার আর্নল্ড হ্যাডলি; নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট আজকের দিনে যে অবস্থানে আছে – তার পেছনে এই ওয়াল্টার হ্যাডলির অবদান বলে শেষ করা যাবে না।

মূলত ক্যান্টাবুরিরর বাসিন্দা হলেও ওয়াল্টার হ্যাডলি সিনিয়র ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ১৮৬৯ সালে ডানেডিনে চলে আসেন। সেখানেই ১৯১৫ সালে জন্ম হয় ওয়াল্টার হ্যাডলির। ছোটবেলায় ক্রাইস্টচার্চ বয়েজ স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হন তিনি। স্কুলে পড়াকালীন কিছু সময় রাগবিও খেলেছেন তিনি।

১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে ক্যান্টাবুরির হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় ওয়াল্টার হ্যাডলির। নিজের প্রথম মৌসুমেই প্রতিভার জানান দেন তিনি, দশ সেঞ্চুরিতে প্রায় ৫০ গড়ে ৬৩১ রান করেন। অবসরের আগে ক্যাটাবুরির হয়ে ৪৪ ম্যাচ খেলে ৪৩.৬০ গড়ে ৩,১৮৩ রান করেন তিনি।

এমসিসির বিপক্ষে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলার পর, ১৯৩৭ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। তিনি ছিলেন তার সময়ে খেলা অন্যতম সেরা আক্রমণাত্নক ব্যাটসম্যান। ওপেনিংয়ে নেমে প্রতিপক্ষ বোলিংকে ছিন্নভিন্ন করতে তার জুড়ি মেলা ভার।

নিজের অভিষেক ইনিংসে ৩৪ রান করেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই ৯৩ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন তিনি। সেবছর তিনি সবমিলিয়ে ১,২২৫ রান করেন। এরপরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে পুরো বিশ্ব স্থবির হয়ে যায়, ক্রিকেটজীবনে ছেদ পড়ে ওয়াল্টার হ্যাডলির।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি ক্রাইস্টচার্চ চলে আসেন এবং নিজের প্রথম ইনিংসেই অকল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৭ রান করেন। পরের মাসেই এমসিজির সাথে রে লিন্ডওয়াল, ইয়ান জনসন, বিলি ও’রিলিদের মতো বোলারদের বিপক্ষে করেন ১৯৮ রান। ১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ড সফরের সময় নিউজিল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। সেই সফরে ৩৬ গড়ে প্রায় ১,৪৩৯ রান করেন তিনি।

৩৫ ম্যাচের মধ্যে কেবলমাত্র অক্সফোর্ডের সাথে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে হেরে যায় কিউইরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার ম্যাচ সিরিজ শেষ হয় ০-০ সমতায়। ১৯৫২ সালে সবধরনের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। ১১ টেস্টে ১৯ ইনিংসে ৩০.১৬ গড়ে ৫৪৩ রান করেন তিনি। ক্যারিয়ারে কখনোই এক অংকের ঘরে আউট হননি তিনি। ১৯৪৭ সালের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরি করেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১৭ ম্যাচে ১৮ শতকের সাহায্যে ৭,৫২৩ রান করেন তিনি।

খেলা ছাড়ার পর দায়িত্ব পালন করেছেন নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক, ম্যানেজার, কন্ট্রোল বোর্ডের সদস্য হিসেবে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত বোর্ড চেয়ারম্যান এবং এরপর তিন বছর ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। খেলোয়াড়ী জীবনের মত প্রশাসক হিসেবেও তাঁর জীবনটা বেশ স্মরণীয়।

ওয়াল্টার ও রিচার্ড হ্যাডলি

২০০১ সালে বার্ট সাটক্লিফ মেডেল পান। ২০০৪ সাল থেকে হ্যাডলি এবং চ্যাপেল পরিবারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ‘চ্যাপেল-হ্যাডলি’ ট্রফি খেলে থাকে। ২০০৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ৯১ বছর বয়সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর কি আর সাধ্য আছে ওয়াল্টারকে ভুলিয়ে দেওয়ার!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...