সুপার লিগের ভাগ্য/দুর্ভাগ্য

প্রশ্ন তৈরি হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা আর জুভেন্টাসের বেলায়। তাঁদের কাছ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা আসেনি। অর্থাৎ সুপার লিগ প্রস্তাবনায় তারা এখনও সোচ্চার। উয়েফা থেকে সরে গিয়ে তৈরি করা সুপার লিগ এখনও মাঠে নামাতে প্রস্তুত তারা। তাই তাদের জন্য শাস্তি আগের মতই আছে। যদি তারা ফেরত না আসে, তবে আগের পদ্ধতিতেই হাঁটবে উয়েফা।

দুই সপ্তাহ আগে মনে হচ্ছিল ফুটবলের অবস্থা নেটফ্লিক্সের তৈরি করা ডেভিড ফিঞ্চারের লেখা কোনো এক টিভি সিরিজ। যার পরতে পরতে রোমাঞ্চ, কী হয় না হয় বোঝা যায়। কে কার পেছনে না ছোঁড়া বসিয়ে দেয়?

প্রথম ছোঁড়া মেরেছিল ১২ বড় ক্লাবই। সবাই মিলে হুট করে একদিন উয়েফার পিঠে ছোঁড়া বসিয়ে দিল। দিল তো দিল সেই সাথে আরো লোকজনদের নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েই নিলো। লোকজনই ঝাপিয়ে পরলো সেইসব ‘বিদ্রোহী’ ক্লাবের বিপক্ষে। ফুটবল শেষ হয়ে যাচ্ছে, ফুটবল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আরো কত কী?

দুইদিন যেতে না যেতেই হুট করে ঘুরে গেল চিত্রনাট্য। যে বারোজন মিলে ছোঁড়া বসিয়েছিল উয়েফার পিঠে, তারা নিজেরাই মুখ ঘুরিয়ে নিলো। বরং ছোঁড়া বসিয়ে দিয়ে গেল শুরু থেকেই টুর্নামেন্টের মাথা হয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের উপর। প্রথমেই বেঁকে বসলো ছয় ইংলিশ ক্লাব।

ছয় ইংলিশ ক্লাবের মালিক প্রথমে রাজি হলেও বেঁকে বসল সমর্থকদের দাবিতে। তাদের কথা অনুযায়ী সমর্থকদের কথা শুনে পুরো টুর্নামেন্ট থেকে পিছু হটছে তারা। তাদের পর আস্তে আস্তে পিছু হটলো দুই মিলান। আর শেষমেশ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। হারাধনের ১২ ছেলে থেকে বাকি রইল মাত্র তিন!

এই তিন ক্লাব ছাড়া বাকি আট ক্লাব আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছে এই সুপার লিগ ছাড়ার। যদিও এসি মিলান সরাসরি কিছু বলেনি, কিন্তু কথাবার্তায় তারাও নরম হয়ে সরে আসার পথে। ফলে এই তিন ক্লাব এখনও রাজি সুপার লিগ মাঠে নামানোর ব্যাপারে। আর সেখানেই কথা তুলেছেন উয়েফা সভাপতি আলেক্সেন্দার সেফেরিন।

চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমি ফাইনাল শেষ হতে না হতেই উয়েফা ঘোষণা করেছে, যে ৯ ক্লাব ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছে, তাঁদের জন্য জমা আছে বিশাল এক লিস্ট। জরিমানার লিস্ট। এই সব শর্ত নেমেই তবে তাদের ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে উয়েফা।

আগামী মৌসুম থেকে এই নয় ক্লাব (ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, আর্সেনাল, টটেনহাম, ইন্টার মিলান, এসি মিলান ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ) যদি আবারও ইউরোপে ফিরতে চায়, সম্পর্ক আগের মতন করতে চায় তবে বেশ ঝক্কি পোহাতে হবে। প্রথমত ক্লাবগুলোকে মিলিতভাবে মোট ১৫ মিলিয়ন ইউরো দিতে হবে ইউয়েফাকে। যার পুরোটাই খরচ হবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ফুটবলের উন্নয়নে।

দ্বিতীয়ত যে পরিমাণ রেভিনিউ পাবে দলগুলো ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্ট থেকে, তার ৫% জরিমানা হিসেবে দিতে হবে ইউয়েফাকে। আর সেই টাকাও চলে যাবে ছোট ছোট ইউরোপিয়ান দলগুলো সাহায্যার্থে।

আর সর্বশেষে যদি তারা আবারও এরকম কোনো কিছু করতে চায় তবে তার জন্য প্রতি ক্লাবকে ১০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা দিতে হবে।

আর এই তিন শর্ত মেনে নিয়েই নয় ক্লাব আবারও ফেরত এসেছে উয়েফার কাছে। উয়েফার সাথে এক হয়ে ভবিষ্যতে চলার পরিকল্পনা গড়েছে তারা। সে কারণে তাদের উপরে শাস্তির পরিমাণও বেশ কম।

কিন্তু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা আর জুভেন্টাসের বেলায়। তাঁদের কাছ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা আসেনি। অর্থাৎ সুপার লিগ প্রস্তাবনায় তারা এখনও সোচ্চার। উয়েফা থেকে সরে গিয়ে তৈরি করা সুপার লিগ এখনও মাঠে নামাতে প্রস্তুত তারা। তাই তাদের জন্য শাস্তি আগের মতই আছে। যদি তারা ফেরত না আসে, তবে আগের পদ্ধতিতেই হাঁটবে উয়েফা।

ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমেও গুঞ্জন, উয়েফার ফেরত আসার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে এখনোও সুপার লিগ আকড়ে থাকলে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হতে পারে তাদের। এমনকি বড় অংকের জরিমানাও পরিশোধ করতে হতে পারে নিজ নিজ লিগ খেলার জন্য।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের পরই এই প্রস্তাব তুলবেন সেফেরিন। যেটি নিয়ে সরাসরি তিন ক্লাবকে চিঠি পাঠিয়েছে উয়েফা। এখন দেখবার পালা উয়েফার দিকে কী ছুঁড়ে দেন সুপার লিগের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...