স্পিড, বাউন্স, পেস ও কার্টলি অ্যামব্রোস

গতি, নিখুঁত বোলিং ও উইকেটের পাওয়ার তৃষ্ণা - এই বৈশিষ্ট্য গুলো দিয়ে প্রায় এক যুগ রাজ করেছেন পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায়। ছয় ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার লোকটা আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন দানবীয়। যেমনটা উচ্চতায়, তেমনি পেস বোলিং দিয়েও। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকের ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপন ধরানো এক নাম - স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস। তিনি নিজে কম কথা বলতেন, তাঁর ডেলিভারিগুলোই সকল প্রশ্নের জবাব দিত তাঁর হয়ে।

গতি, নিখুঁত বোলিং ও উইকেটের পাওয়ার তৃষ্ণা – এই বৈশিষ্ট্য গুলো দিয়ে প্রায় এক যুগ রাজ করেছেন পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায়। ছয় ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার লোকটা আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন দানবীয়। যেমনটা উচ্চতায়, তেমনি পেস বোলিং দিয়েও। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকের ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপন ধরানো এক নাম – স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস। তিনি নিজে কম কথা বলতেন, তাঁর ডেলিভারিগুলোই সকল প্রশ্নের জবাব দিত তাঁর হয়ে।

যতদিন খেলেছেন ততদিন বিশ্বসেরা হয়েই খেলেছেন। নিখুঁত বোলিং করাটাই ছিল তাঁর একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। তাইতো সংবাদ মাধ্যমে রটে গিয়েছিল, ‘অ্যামব্রোস ডাজেন্ট টক ট্যু এনিওয়ান।’

অ্যান্টিগুয়ার একটি ছোট্ট গ্রামে জন্ম অ্যামব্রোসের। কাঠমিস্ত্রী বাবা, মা ও সাত ভাইবোন মিলে তাঁদের পরিবার। তাঁর পরিবার বা ভাই-বোনদের কেউই কখনো ক্রিকেট খেলেনি। তবে তাঁর মা ক্রিকেটের বেশ বড় ভক্ত ছিলেন। অ্যামব্রোস মাঝেমাঝে ক্রিকেট খেললেও সেটা ব্যাটসম্যান হিসেবে।

তিনি যে এক সময় দুনিয়ার সেরা বোলার হয়ে উঠবেন তা বোধহয় নিজেও কখনো কল্পনা করেননি। তবে পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন ১৭ বছর বয়সী এই কিশোর। পাশাপাশি বাবার সাথে কাজেও যেতেন। ফলে তাঁর জীবনযাত্রার কোথাও ক্রিকেটের কোনো অস্তিত্ব ছিল না।

তবে কিশোর বয়সের একদম শেষ সময়ে এসে হঠাৎই একটু দ্রুত লম্বা হতে শুরু করলেন। ফলে উনিশ বছর বয়সে অ্যামব্রোসের উচ্চতা হলো ছয় ফুট সাত ইঞ্চি। এই উচ্চতা ও তাঁর ক্রিকেট ভক্ত মা-ই তাঁর জীবনে নিয়ে এলেন ক্রিকেট নামক এক অধ্যায়। যেই অধ্যায় পরবর্তীকালে হয়ে উঠবে ক্রিকেটের স্বর্নাক্ষরে লেখা এক ইতিহাস। অ্যামব্রোস তাঁর মায়ের পরামর্শেই উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে পেস বোলিং এ মনোযোগ দিতে শুরু করলেন।  বিশ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো তাঁর ক্রিকেট যাত্রা।

কলেজের হয়ে অসাধারণ পারফর্ম করার পর দ্রুতই সুযোগ পান অ্যান্টিগুয়া দলে। অ্যান্টিগুয়ার হয়ে এক ম্যাচে সাত উইকেট তুলে নিলে বাইশ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন তিনি। ১৯৮৬ সালে ভিভ রিচার্ডস স্কলারশিপ পেয়ে ইংল্যান্ডে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে যান তিনি। সেখানে লিভারপুল কম্পিটিশনে সে বছর মাত্র ৯.৮০ গড়ে নেন ৮৪টি উইকেট। পরের বছর ইংল্যান্ডের আরেকটি লিগে তুলে নেন ১১৫ উইকেট। ইংল্যান্ডে এই অসাধারণ সময় পাড় করে আবার নিজ দেশে ফিরে আসেন তিনি।

তারপর ১৯৮৮ সালে ২৫ বছর বয়সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে অভিষিক্ত হন এই পেসার। পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে ৩৯ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। সিরিজের পরের দুই ম্যাচে আরও ছয় উইকেট নেন এই পেসার। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টেও অভিষিক্ত হন তিনি। তবে টেস্টের শুরুটা ভাল হয়নি অ্যামব্রোসের। নিজে ১২১ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘরের মাটিতে ১০ বছর পর ম্যাচ হেরেছিল।

তবে পরের ইংল্যান্ড সফরে প্রথম ক্রিকেট বিশ্ব তাঁর আসল রূপ দেখে। সেখানে পাঁচ টেস্টে মাত্র ২০.২২ বোলিং গড়ে নিয়েছিলেন ২২ উইকেট। চতুর্থ টেস্টে সাত উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরাও হয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে ক্যারিয়ার শেষ হবার আগ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণের পরিকল্পনাই হতো অ্যামব্রোস ও তাঁর বোলিং পার্টনার কোর্টনি ওয়ালশকে নিয়ে।

১৯৯২ সালে তিনি উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন। সেই সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানরাও অ্যামব্রোসকে সামলাতে হাঁপিয়ে উঠতেন। বিশেষ করে ছয় ফুট সাত ইঞ্চির একজন পেসার যখন প্রায় ১০ ফুট উচ্চতা থেকে বল ছোড়ে সেই বলের বাউন্স বোঝাটা প্রায় অসম্ভবই ছিল। তাছাড়া অ্যামব্রোসের নিখুঁত লাইন লেন্থ ও গতি তাঁর সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল। তাঁর ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই তিনি ছিলেন আইসিসি র‍্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বের সেরা বোলার।

১৯৯৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলিং স্পেলটি করেন। সেই ম্যাচে তাঁর প্রথম স্পেলে অস্ট্রেলিয়ার সাত উইকেট নিতে খরচ করেছিলেন মাত্র এক রান। তাছাড়া ১৯৯৪ সালে ইংল্যান্ডকে ৪৬ রানে অল আউট করতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। সেখানে মাত্র ২৪ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। ফলে কালক্রমে তিনি সর্বকালের সেরা ম্যাচ উইনিং বোলারে পরিণত হন।

২০০০ সালে অবসর নেয়ার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে মোট ৯৮ টি টেস্ট খেলে নিয়েছেন ৪০৫ টি উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর বোলিং গড় মাত্র ২০.৯৯। ওয়ানডে ক্রিকেটেও ২২৫ টি উইকেটের মালিক তিনি। ওয়ানডে তে তাঁর ইকোনমি রেট ছিল মাত্র ৩.৪৮।

এই সংখ্যাগুলোই প্রমাণ করে ওই এক দশক কী করে পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায় রাজত্ব করেছেন এই গ্রেট বোলার। তবে নিজ চোখে ওই দানবীয় লোকটার ছোড়া অগ্নিগোলা গুলো না দেখলে, ব্যাটসম্যানের সেই অসহায়ত্ব না দেখলে কোনো পরসিংখ্যান দিয়েই যে স্যার কার্টলি অ্যামব্রোসকে ব্যাখ্যা করা যাবে না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...