সিরিজটাই শুরু হয়েছিল বড়সড় এক ধাক্কার মধ্যে দিয়ে। ধাক্কা না বলে অবশ্য প্রশ্ন বলাই ভাল। প্রথমে এসেছিল প্রশ্ন- ‘মাশরাফি কি দলে থাকবেন?’ সেই প্রশ্ন থেকে গুঞ্জন, গুঞ্জন থেকে সিদ্ধান্ত, সিদ্ধান্ত থেকে ধাক্কা – ‘উন্ডিজের বিপক্ষে মাশরাফি দলে নেই।”
মাশরাফির এই দলে না থাকার অবশ্য বেশ বড় একটা কারণও ছিল – বিশ্বকাপ পরিকল্পনা। তা সেই পরিকল্পনার গীত নিয়েই শুরু হওয়া এই সিরিজ শেষ হয়েছে গতকাল, উইন্ডিজের মোটামুটি তৃতীয় সারির দলের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। আজকের এই আলোচনাতে আমরা আসলে একটু বোঝার চেষ্টা করব এই সিরিজ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কি, অপ্রাপ্তিই বা কি? যে গীত নিয়ে শুরু হয়েছিল এই সিরিজ, সেই গীতের কতখানি সুরই বা আয়ত্ত হয়েছে দলের?
- আবার এসেছি ফিরে
জীবনানন্দ দাস বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছিলেন শঙ্খচিল, ভোরের কাক, কুয়াশা হয়ে। সাকিব আল হাসান কবি নন, তিনি ক্রিকেটার। এই সিরিজে তিনি ফিরে এসেছেন তাই ক্রিকেটার হয়েই। সত্যি কথা বলতে, আমি যদি এই সিরিজের প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা করতে বসি, তাহলে সেই প্রাপ্তির তালিকার সবার উপরেই থাকবেন সাকিব আল হাসান। সেই প্রাপ্তি যে তিনি শুধু দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন সেটা নিয়েই তা কিন্তু নয়। সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবেন এর মধ্যে আশ্চর্যান্বিত হবার কোন ব্যাপার নেই। আশ্চর্যান্বিত ব্যাপার হল সাকিব আল হাসানের ফর্ম।
এমনিতেই দীর্ঘ একটা বছর তিনি ছিলেন ক্রিকেটের বাইরে, তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞার আগে দুর্দান্ত ফর্মে ব্যাট বল চালিয়ে সবার মধ্যেই এক ধরণের আশার সঞ্চার করে গেছিলেন তিনি। তাই সাকিবের ফেরাটা কেমন হবে সেটা নিয়ে একটা কৌতুহল সবারই ছিল। কৌতুহলের সাথে প্রশ্নও ছিল- সাকিব কি শুরু থেকেই আগের মতই ফিরবেন? না ফিরলে কত সময় নেবেন? এই প্রশ্ন উদ্বেগে রূপ নিল যখন তিনি বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপে মনমত পারফর্ম করতে পারলেন না। তবে এই সিরিজেই তিনি সব প্রশ্নের উত্তর যেমন দিয়েছেন, তেমনই দূর করে দিয়েছেন সব উদ্বেগ।
পুরো সিরিজেই ৫৬.৫০ গড়ে করেছেন ১১৩ রান। বল হাতেও ৮.৩৩ গড়ে নিয়েছেন ৬ উইকেট। সাকিব আল হাসানের এভাবে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন সম্ভবত তিনি নিজেও ভাবেননি, অন্তত শুরুর সিরিজ থেকেই। তবে এটা সত্যি, শুরুর সিরিজেই তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেয়ে যাওয়ায় কাজটা সহজ হয়েছে সাকিবের জন্যে। তবে প্রতিপক্ষ আরেকটু কঠিন হলে প্রত্যাবর্তনের সিরিজে নিজেকে আরেকটু ভালভাবে যাচাই করে নিতে পারতেন তিনি, ব্যার্থ হলেও ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সামনের দিকে দেখতে পারতেন, কাজ করতে পারতেন। তবে আপাতত এটুকু তো আমরা সবাই জানি- “মহারাজ ফিরেছেন”
- একই মুদ্রার দুই পিঠ
এই সিরিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি লিখতে বসলে দুই দিক থেকেই একটা সাধারণ ব্যাপার চোখে পড়বে আর তা হল তামিম ইকবালের ব্যাটিং। তামিমের ব্যাটিংয়ের সমালোচনা হচ্ছিল বেশ অনেকদিন ধরেই। সে সমালোচনার কারণও আছে বেশ শক্ত- স্ট্রাইক রেট! তামিম ইকবাল আমাদের বলেছেন তিনি স্ট্রাইক রেট নিয়ে কোন কথা শুনতে চান না। কী তাজ্জব কথা, একজন ব্যাটসম্যান তাঁর ব্যাটিংয়ের দুর্বলতম দিকটা নাকি একেবারেই শুনতে চান না!
যা হোক, তামিম শুনতে চাননি, এবারও তিনি খেলেছেন খুব ধীরগতিতেই। তবে সত্যি বলতে, এই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তামিমের ধীরে খেলাটাকে খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় না। যে ধরণের পিচে প্রথম দুই ওয়ানডে খেলা হয়েছে, তাতে এমনভাবে খেলাই ছিল সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, কেবল বাউন্ডারি নির্ভর নয় – তিনি স্ট্রাইক রোটেট করে খেলেছেন। সে হিসেবে আমরা তামিমের ব্যাটিংকে সেন্সিবলই বলতে পারি। দীর্ঘকালীন করোনা বিরতি আর আস্ত একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের পর তামিমের এই ব্যাটিংকে তাই প্রাপ্তি বলা যায়।
কিন্তু, আমরা যদি শেষ ওয়ানডের দিকে তাকাই তাহলে এই ব্যাটিংকেই আর মহৎ করে দেখার সুযোগ নেই। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে প্রথম দুই ওয়ানডের মত জুজু ছিল না, বড়সড় টার্নও পাচ্ছিল না বল। কিন্তু সেখানেও তামিম সেখানে খেলেছেন ধীরলয়ে। অবশ্য লিটন দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ায় একটা চাপ ছিল তাঁর ওপর। কিন্তু তবুও এই ওয়ানডেতে তামিমের ব্যাটিং ঠিক আগের দুই ওয়ানডের মত ‘সময়োপযোগী’ লাগেনি।
আরো কিছু বাজে বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর যেমন সুযোগ ছিল, তেমনি তামিমের সামনে সুযোগ ছিল রানিং বিটুইন দা উইকেটে আরো স্বছন্দ্য হওয়ার। কিন্তু দেখা গেছে তিনি তা হননি, তিনি ব্যাট করার সময় পিচকে অনেক কঠিনই মনে হচ্ছিল। অথচ এই পিচেই কী সাবলীল ব্যাটিংটাই না করলেন মুশফিক-রিয়াদ। এ হিসাবে তামিমের ব্যাটিংকে আবার এই সিরিজের অপ্রাপ্তিও বলা যায়।
মুদ্রার দুই পিঠই তো হল, নাকি?
- ভুল স্বরে ভুল সুর
সৌম্য সরকারকে এই সিরিজে খেলানো হয়েছে লোয়ার অর্ডারে। বাংলাদেশ দলের লোয়ার অর্ডারটা সবসময়ই একটা মিউজিক্যাল চেয়ারের মত হয়ে থেকেছে। নানা সময়ে এখানে নানা জনকে সুযোগ দেওয়া হলেও দীর্ঘ সময়ে টিকে থাকতে পারেনি কেউই। এদের মধ্যে নাসির আর সাব্বির ছাড়া আর কেউ তো ন্যূনতম আশাটুকুও দেখাতে পারেনি।
এবার সেই লোয়ার অর্ডারে পরখ করা হচ্ছে সৌম্য সরকারকে। মজার ব্যাপার হল, সৌম্যকে লোয়ার অর্ডারে পরখ করা এবারই প্রথম হচ্ছে না। এর আগেও তাকে নানা সময়ে লোয়ার অর্ডারে নিয়ে পরখ করা হয়েছে, সেই পরখ করার ফলাফল আসলে সুখকর হয়নি। তাই সৌম্য বারবারই টপ অর্ডারেই ফিরে এসেছেন। তা আসবেন নাই বা কেন ? সৌম্য তো লোয়ার অর্ডারের খেলোয়াড় নন। তিনি টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যান। পাঁচ, ছয় আর সাত নম্বরে তাঁর ব্যাটিং গড় ৩, ১৯ আর ১৫.৩৩ হলেও ওপেনিং আর তিন নম্বরে সৌম্যর ব্যাটিং গড় ৩৩.৯৭ আর ৩৯.৩৮!
এছাড়াও লোয়ার অর্ডার দলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গার একটি। টপ অর্ডার ব্যার্থ হোক বা সফল , লোয়ার অর্ডারের নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে সবসময়ই। টপ অর্ডার ব্যার্থ হলে যেমন দলের হাল ধরতে হয়, তেমনি টপ অর্ডার সফল হলেও দলের রানটাকে আরো বাড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানেরা। এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে সৌম্যকে খেলিয়ে শুধু যে সৌম্যর ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, বরং লোয়ার ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে দল যে ধরণের সুবিধা চায় সেটাও ঠিকঠাকভাবে বাংলাদেশ পাচ্ছে না/ পাবেনা!
- মিলন হবে কত দিনে
নাজমুল হোসেন শান্তর ওপর ভরসা আর আশা দুটোর পারদই ছিল অনেক বেশি। বিসিবিও শান্তকে তৈরি করেছিল ওভাবেই। গত কয়েক বছরে শান্তকে বেশ কয়েকটা এইচপি ট্যুরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে যে শান্ত পারফর্ম করেননি তাও কিন্তু না। সেখানকার পারফর্ম্যান্সটাই শান্তকে নিয়ে আশার বেলুন ফোলাতে বাধ্য করেছে। এইচপি থেকে ফিরে ঘরোয়া ক্রিকেটেও রান করেছেন শান্ত।
শান্তর ওপর দলের এই ভরসার পারদ তাই এতটাই চড়ে গেছিল যে তিন নম্বরে দলের ইতিহাসসেরা পারফর্মার সাকিব আর চারে দলের সবচাইতে সেরা ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং পজিশনও এক ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অবশ্যি ভুল কিছু নেই। শান্তর আসল জায়গা তিন নম্বর, তাকে ওখানে রাখাটাই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে শান্ত হলেন পুরোপুরিভাবে ব্যার্থ। তাঁর রান না করাই শুধু না, ব্যাটিংয়েও ছিল আত্মবিশ্বাসের অভাব।ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা শান্তকে দেখেছেন তাঁরা ঠিক মেলাতে পারবেন বলে মনে হয়না।
তবে সত্যি বলতে, শান্তকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেবার সময় এখনও আসেনি। শান্ত এর আগে যে কয়টা ম্যাচ খেলেছে সবকটিই ছিল পরিকল্পনাহীনভাবে। নির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনাতে শান্তকে ওয়ানডে খেলানো হচ্ছে, এরকম সিরিজ এটাই প্রথম। তাই শান্তকে আরো কিছু সময় দিয়ে পরখ করাটাই ভাল হবে, অন্তত শান্ত সেরকমটা পেতেই পারেন।
- বলেনি বীর, করেনি উন্নত মম শির
এই সিরিজের সবচাইতে হতাশার জায়গা এটিই। একে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই তৃতীয় সারির দল, তার ওপর খেলা হচ্ছে ঘরের মাঠে। দলেও শেখ মেহেদী, শরিফুলের মত খেলোয়াড়রা ছিলেন। বাংলাদেশ দল চাইলেই এদের কাউকে অভিষেক করিয়ে দেখে নিতে পারত। সত্যি কথা বলতে, এই দেখে নেওয়া ব্যাপারটির জন্যে এটাই সবচাইতে উপযুক্ত সিরিজ ছিল।
সামনের সিরিজ নিউজিল্যান্ডে, সেখানে গিয়ে নিশ্চয়ই কাউকে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করবেনা দল। তাই উইন্ডিজের এই দলটার বিপক্ষে ঘরের মাঠে নতুনদের সুযোগটাই কাম্য ছিল। তাছাড়াও, দল হিসেবে আমরা যদি আরেকটু উপরে উঠতে চাই তাহলেও আমাদের মধ্যে আরেকটু সাহস থাকা উচিত, আরেকটু পরিকল্পনা থাকা উচিত। এ ধরণের হোম সিরিজেও যদি আমরা নিজেদের সাহসটুকু না দেখাই তবে সেটা আর কবে দেখাব?
- মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
সেই পুরনো বুলি- লিটনের ট্যালেন্ট নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। নাহ, আমারও নেই। কিন্তু যে ব্যাপারে সন্দেহ আছে তা হল ধারাবাহিকতা। লিটন কখনই ধারাবাহিক নন। তবে শেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর মনে হচ্ছিল, লিটনের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। হয়তো সত্যি এসেছেও, কিন্তু অন্তত এই সিরিজে সেটা মনে হয়নি। তৃতীয় সারির একটা দলের বিপক্ষে খেলেও তিনি তিন ম্যাচের তিনটিতেই হয়েছেন ব্যার্থ।
লিটনকে তাই আরেকটু মনোযোগ দিতেই হবে। এশিয়া কাপ-২০১৮ এর পরও মনে হচ্ছিল লিটন বোধহয় ছন্দে ফিরে এসেছেন। কিন্তু তারপরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত জিম্বাবুয়ে সিরিজের পরও মনে হচ্ছিল একই কথাই। এখন সেটাকে সত্যি প্রমাণ করার দায় তো লিটনেরই। এমন মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া রান নিয়ে তা তো আর ট্যালেন্ট মিশিয়ে দেখানো যাবেনা, তাইনা?
- শ্রাবণের এই নবধারা
এই সিরিজে সাকিবের প্রত্যাবর্তন নিয়ে প্রাপ্তির কথা বলছিলাম । তবে সেটাই একমাত্র বড় প্রাপ্তি নয় বাংলাদেশের জন্যে। বড় প্রাপ্তি হিসেব করতে হলে মুস্তাফিজের আরেকবার ফিরে আসাটাও রাখতে হবে এই তালিকাতে।
মুস্তাফিজ দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন, নিজের বোলিংয়েও দীর্ঘদিন কোন উন্নতি করেননি তিনি। ফলে যেটা হয়, বাঁহাতি বোলারদের ডানহাতিদের জন্যে যে সবচাইতে বড় অস্ত্রটা – ভেতরে ঢুকে যাওয়া বল সেটা মুস্তাফিজের মধ্যে ছিল না। এই না থাকার জন্যে বড় সাফল্যও ধরা দিচ্ছিল না মুস্তাফিজের হাতে। একটা অস্ত্র দিয়ে কতদিন তিনি টিকে থাকবেন এরকম একটা প্রশ্নও মৃদুভাবে শোনা যাচ্ছিল।
তবে এই সিরিজেই মুস্তাফিজের বলে বৈচিত্র্য চোখে পড়েছে। শুধু কাটারেই নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে তিনি বলকে সুইং করিয়েছেন, ভেতরে ঢুকিয়েছেন। এই একটা অস্ত্রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুস্তাফিজকে আরো শক্তিশালী করবে। আশা করা যাচ্ছে, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনেও বাতাসের গতিকে ব্যাবহার করে বলকে সুইং করাতে সক্ষম হবেন তিনি।
মুস্তাফিজ এর আগেও ফিরেছেন অনেকবার। কিন্তু এবারের টার সাথে আগেরগুলোর সত্যিই পার্থক্য আছে। এখন দরকার শুধু সেই মারণ ইয়োর্কারগুলো। তাহলেই মুস্তাফিজকে ষোলআনা ফিরে পাওয়া যাবে আগের মতই।
এখানে আরেকটু না বললেই নয় যে – নিজেকে ফিরে পাওয়ার পথে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। তিন ম্যাচে সাত উইকেট পেয়েছেন ১০-এর আশেপাশে গড় নিয়ে।
- ফুরিয়ে গিয়েও ফিরিয়ে দেওয়া সময়
উনিশ বিশ্বকাপের পর মাহমুদউল্লাহর ফর্মটা ভাল যাচ্ছিল না। উইন্ডিজের সাথে তৃতীয় ওয়ানডেতে যে হাফ সেঞ্চুরি করলেন, তার আগে বিশ্বকাপের পর থেকে মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং গড় ছিল পনেরোর আশেপাশে। মাহমুদুল্লাহর মত কারো ওয়ানডেতে এমন ফর্ম বাংলাদেশ দলের জন্যে হুমকির মতই ছিল।
মাহমুদউল্লাহ সেই হুমকি উড়িয়ে দিয়েছেন। উইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে রানে ফিরেছেন তিনি। করোনা পরবর্তী সময়ে এমন ফর্মে ফেরাটা সত্যিই আশাব্যাঞ্জক।
- বুঝতে যদি চিনতে আমায়
এই সিরিজের আগে তামিমের অধিনায়কত্ব নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে। সাকিব আল হাসান ফেরায় আর মাশরাফিকে অব্যাহতি দেওয়ায় অনেকেই অধিনায়ক তামিমকে মানতে পারেননি। কিন্তু, মাঠের অধিনায়কত্বে তামিম এই সিরিজে অন্তত পাশমার্কই পাবেন। বোলিং পরিবর্তন, মাঠে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া- সব মিলিয়ে তামিমকে বেশ স্বতঃস্ফূর্তই লেগেছে সিরিজে।
আরেকটি ব্যাপার নজর কেড়েছে- বোলার সাকিব আল হাসানকে যেভাবে ব্যাবহার করেছেন তামিম। আগে দেখা যেত পাওয়ারপ্লেতেই সাকিবকে ব্যাবহার করা হত, ফলে মাঝের ওভারে প্রতিপক্ষের রান বাড়তে থাকত একটু বেশিই। কিন্তু তামিম সাকিবকে বলে এনেছেন পাওয়ারপ্লের পর। এতে যেটা হয়েছে, উইন্ডিজ মাঝের ওভারগুলোতেও রান বাড়িয়ে নেওয়ার কোন সুযোগ পায়নি।
হ্যা, এই সিরিজে হয়তো খুব বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল না, সামনের দিনে কি হবে তাও জানিনা, তবে এই সিরিজে মাঠের অধিনায়কত্বে তামিম ভালভাবেই পাশ করছেন।
- তোমার এই দুনিয়ার ঝাপসা আলো
বিশ্বকাপের আগে একটা তাল বেশ শোনা যাচ্ছিল- বিশ্বকাপ পরিকল্পনা। কিন্তু পুরো সিরিজ শেষে দেখা গেল, সেই পরিকল্পনার ধারেকাছে দিয়েও যাচ্ছেনা বাংলাদেশ। খুব স্বাভাবিক কয়েকটা অনুসিদ্ধান্তেই এটা বোঝা সম্ভব। বাংলাদেশ যে পিচে খেলেছে, এ ধরণের পিচে তো বিশ্বকাপ হবেনা। তাহলে বিশ্বকাপ পরিকল্পনার ধোয়া তুলে এই পিচ বানানোটা তো সিরিজে শুরুর তালের সাথে ছন্দে মিলল না। আবার, আসলেই বিশ্বকাপ পরিকল্পনার কথা মাথায় রাখলে তরুণদের পরখ করার সেরা মঞ্চ ছিল এটা, সেটাও করা হয়নি। মোটা দাগে, বাংলাদেশের বিশ্বকাপ পরিকল্পনার তালের সাথে সুর মেলেনি একদমই।
- তোমায় নিয়ে আমার বাহাদুরি
এই ব্যাপারে বলা অবশ্য বাহুল্য। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সিনিয়রেরা। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শেষ ম্যাচে চার সিনিয়রের চারজনই হাফ সেঞ্চুরি পেয়ে তো এক রকম সাড়াই ফেলে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ দলে সিনিয়রদের পারফর্ম করা অবশ্য খুব বড় কোন ব্যাপার না, এটা তাঁরা করেই থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির পর আবার জ্যেষ্ঠ সদস্যদের এভাবে পারফর্ম করা এই সিরিজের একটা প্রাপ্তি হয়েই থাকবে।