আফ্রিদির স্লেজিং, শচীনের গ্রেট নাইন্টি এইট

সাধারণত ক্রিকেট মাঠে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে চাপে রাখার জন্য উপহাস কিংবা মন্তব্য ছোঁড়াকে স্বাভাবিক ধরা হয়। এরূপ আচরণকে ‘স্লেজিং’ বলে উড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তার একটা সীমা অবশ্যই আছে।

সীমানার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে মাঠের ক্রিকেটের লড়াই, ভারত-পাকিস্তানের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচনাটা ঘটে যেন ভ্রূণের মাতৃগর্ভে থাকাকালই। এ যেন খুব সহজ একটা সমীকরণের মতো। ভারতে জন্মালেই যেন অবশ্যম্ভাবী পাকিস্তান বিমুখ হতে হবে, আর শিরায় পাকিস্তানি রক্ত বইলেই যেন ভারত বিদ্বেষটা আচরণে আপনা- আপনি চলে আসে। এই যে ভারত- পাকিস্তান যখন ক্রিকেটে মুখোমুখি লড়াইয়ে মাঠে নামে, পৃথিবীটা যেন কিছু মুহুর্তের জন্য থমকে যায়।

সম্ভবত টিভি পর্দার সামনের পৃথিবীটাও তখন তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি দল ভারত সমর্থন করে, অন্য দল তখন পাকিস্তান। আর একটি দল থাকে যারা স্রেফ ক্রিকেটীয় আনন্দ উপভোগ করতে বসে। গ্যালারিতেও ওই একই ঘটনাই ঘটে যায়।

এই তো গেল মাঠের বাইরের আলাপ, কিন্তু বাইশ গজে দুই দেশের যে বাইশজন মুখোমুখি তাঁদের কথাটা ভাবুনতো। তাঁরাও তো মস্তিষ্কে ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ শব্দটা বহাল রেখেই খেলা চালিয়ে যান। যা অনেক সময় তাঁদের ক্রিকেটীয় আচরণকে গর্হিত করে তিক্ত কিছু ঘটনার জন্ম দেয়। সাধারণত ক্রিকেট মাঠে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে চাপে রাখার জন্য উপহাস কিংবা মন্তব্য ছোঁড়াকে স্বাভাবিক ধরা হয়। এরূপ আচরণকে ‘স্লেজিং’ বলে উড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তার একটা সীমা অবশ্যই আছে। যখন স্রেফ ‘স্লেজিং’ এর ঘটনা থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণে রূপ নেয় ও সীমা লঙ্ঘন করে ফেলে তা নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য ঘটনা বলে বিবেচিত।

ভারত- পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালীন দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে এরূপ বিতর্কিত আচরণের অহরহ নজির রয়েছে। ২০১০ সালের এশিয়া কাপের মঞ্চে গৌতম গম্ভীর ও কামরান আকমলের মধ্যকার তুমুল ঝগড়া, হরভজন সিং ও শোয়েব আখতারের মধ্যকার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এমন ঘটনা ইতিহাস ঘাটলেই পাওয়া যাবে।

এবার ঠিক এশিয়া কাপ চলাকালে ভারতীয় ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেবাগ পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক এক অভিযোগ আনলেন। ঘটনাটি ২০০৩ বিশ্বকাপের। এই বিশ্বকাপের মঞ্চেই মাস্টার ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকারকে প্রতিপক্ষ দল পাকিস্তান দ্বারা হেনস্তা হতে হয়েছিল এমনটাই দাবি করেছেন ভারতের সাবেক এই ওপেনার। পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি সেদিন শচীন টেন্ডুলকারকে উদ্দেশ্য করে বাজে মন্তব্য করেছিলেন।

টেন্ডুলকার মাত্র ৭৫ ডেলিভারিতে ৯৮ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। পায়ে ক্র্যাম্পের কারণে শচীন দৌড়াতে পারছিলেন না। তাই রানার হিসেবে শেবাগ মাঠে নেমেছিলেন। স্টার স্পোর্টস থেকে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে শেবাগ বলেন, ‘আমি খেলার সময় তার জন্য দৌড়াতে এসেছি কারণ তার ক্র্যাম্প ছিল। তখন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি তাঁকে গালি দিচ্ছিলেন এবং কোনও না কোন মন্তব্য করতে থাকলেন। কিন্তু টেন্ডুলকার নিজ খেলায় মনোযোগী ছিলেন। কারণ তিনি জানতেন ক্রিজে থাকাটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। টেন্ডুলকার সাধারণত রানার নিতেন না। কিন্তু তবুও তিনি জানতেন যে আমি যদি আসি, আমি তাঁর মত দৌড়াতে পারব। আমাদের বোঝাবুঝিতে ঝামেলা হবে না।’

বীরেন্দ্র শেবাগ আরও বলেন, যে সিরিজই হোক না কেন (আইসিসি টুর্নামেন্ট বা দ্বিপাক্ষিক) ভারত- পাকিস্তানের ম্যাচ সবসময়ই তীব্র লড়াইয়ের হয়। এবং আমরা সব সময় উভয় দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে ঝগড়া বা উত্তপ্ত ঘটনা ঘটতে দেখব। এবং আমার মনে আছে শোয়েব আখতারের একটি বিবৃতি ছিল যে, সে ভারতের টপ অর্ডারকে একেবারে ধ্বংস করবে। আমি বা শচীন ম্যাচের আগে বিবৃতিটি পড়েনি। কিন্তু শচীন আমাদের ইনিংসের প্রথম ওভারেই আঠারো রান নিয়ে এর তীব্র জবাব দিয়েছিল।’

সেই ম্যাচটিতে টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি থেকে দুই রান দূরে থেকে সাঁজঘরে ফিরেছিলেন। পঞ্চম উইকেটে রাহুল দ্রাবিড় ও যুবরাজ সিংয়ের ৯৯ রানের দারুণ জুটি ভারতকে জয় এনে দেয়। সেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টেন্ডুলকার বেশ অভিজ্ঞ ছিলেন, কারণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনেক ম্যাচ খেলেছিল তিনি। তাই হয়তো শহীদ আফ্রিদি তার মন্তব্য দিয়ে ভারতের তুরুপের তাস শচীনকে বিচলিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

সেই ঘটনার পর প্রায় উনিশ বছর কেটে গেলেও সেদিনের ঘটনা ভোলেননি শেবাগ। উনিশ বছর পর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের প্রাক্বালে তাই পুষে রাখা ক্ষোভটা প্রকাশ করেই ফেললেন। তবে সেইদিন আসলে কি ঘটেছিল? কেবল স্লেজিং? গালাগালি? নাকি অন্য কিছু? তা অন্তত শহীদ আফ্রিদির জবানবন্দি না পেলে নিশ্চিত করা সম্ভব না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...