সেই সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাশরাফি বিন মুর্তজা এক জাদুকরের মত ছিলেন। মাঠে যা করতে চাইতেই তাতে সোনা ফলতো। বড় মঞ্চে মাশরাফির আরেকটা বাজি ক্লিক করে গেল। তখন ছয় জাতির এশিয়া কাপের আসর জমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেই টুর্নামেন্টে ওপেনিং নিয়ে দারুণ সংকটে ভুগতে থাকা বাংলাদেশের হয়ে সেদিন ওপেন করলেন মেহেদী হাসা মিরাজ। লিটন দাসের সাথে দারুণ এক জুটি গড়লেন তিনি।
লিটন তাঁর ক্যারিয়ারের সুন্দরতম ইনিংসটি খেললেন। তৃতীয়বারের মত এশিয়াকাপের ফাইনাল খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ আবার আশা বুক বেঁধেছিল ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখার। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আসা সবচেয়ে নানন্দিক ব্যাটসম্যানদের একজন যে লিটন সেটা নিয়ে খুব বেশি সংশয় থাকার কথার না।
লিটন তাঁর ব্যাটিংটা যে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটা সেদিন নির্ধ্বিদায় স্বীকার করেছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। লিটন-মিরাজের ১২০ রানের জুটির পর বড় স্কোরের স্বপ্নই দেখছিল বাংলাদেশ। তবে হঠাৎই এক দমকা হাওয়া বয়ে গেল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের মধ্য দিয়ে।
একটু ম্যাচের আগের সময়টাতে ফিরে যাওয়া যাক। বাংলাদেশ দলের আসলে সেদিন অনেক কিছু প্রমাণ করার ছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটে দারুণ সময় পাড় করা বাংলাদেশের তখন একটা শিরোপা ভীষণ প্রয়োজন। আর সেটা যদি হয় এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়ে তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
এর আগেও দুইবার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানের হার তো এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলোর একটি।
এছাড়া সেই ফাইনালে প্রতিপক্ষটা ছিল ভারত। ভারতের সাথে বাংলাদেশের ম্যাচ মানে দর্শকদের মধ্যে কাজ করতো ভিন্ন উত্তেজনা। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের একটি অবস্থানে নিয়ে যাওয়া মাশরাফি বাহিনী তাই মরিয়া ছিল আরেকধাপ উপরে উঠার। এখনো বাংলার দর্শকদের চোখে সেই দৃশ্য ভাসে। সেঞ্চুরি করার পর লিটনকে মাশরাফি বেলকুনি থেকে ইশারায় বলছিলেন আরো বড় ইনিংস খেলার জন্য।
লিটন ফিরেছিলেন ১১৭ বলে ১২১ রান করে। তবে ততক্ষণে অন্য ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে খাঁদের কিনারায়। দারুণ শুরুর পরে ৪১ তম ওভারে ১৮৮ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। শেষ দিকে সৌম্যের ৩৩ রানের ইনিংসে কোনো ক্রমে ২২২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল বাংলাদেশ।
সেদিন ২২৩ রানের মামুলি টার্গেটকেও এক বিশাল পাহাড় বানিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ভারত। একটা সময় এই ম্যাচেও জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ১৬০ রানের মাথায় ফিনিশার খ্যাত মহেন্দ্র সিং ধোনি ফিরে গেলে ভালো ভাবেই ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ।
তবে তখন কে জানতো ভারতের বিপক্ষে আরেকবার স্বপ্ন ভঙ্গের পথে হাটছে বাংলাদেশ। সাত নম্বরে নেমে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন কেদার যাদব। ৫০ ওভারের ম্যাচে শেষ বলে গিয়ে নিশ্চিত হয় ভারতের বিজয়। আরও একটা এশিয়া কাপ ফাইনাল হয়ে থাকবে বাংলাদেশের কালো অধ্যায়। আবারো শেষ বলে গিয়ে হৃদয় ভাঙবে বাংলার ক্রিকেট ভক্তদের।
পরের বছরই আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের আক্ষেপ ঘুঁচায় বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ডের মাটিতে জিতে নেয় ত্রিদেশিয় সিরিজ। তবে, এশিয়ার সেরা হওয়ার লড়াইয়ে আজো সর্বোচ্চ প্রাপ্তি বাংলাদেশের রানার আপ হওয়া। তিনবার ফাইনাল খেলেও স্বপ্নের ট্রফি জেতা হয়নি বাংলাদেশ দলের।