ক্রিকেটে মাঠে একজন অল রাউন্ডার থাকা মানে একজন অতিরিক্ত বোলার এবং অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান নিয়ে মাঠে নামা। কারণ একজন ক্রিকেটারের থেকে দুই ভূমিকাতে সুবিধা পাওয়া যায়। এমন কিছু ক্রিকেটার আছেন যারা মাঠে অলরাউন্ড পারফর্ম করে একাই দলকে জিতিয়ে থাকেন। এত কার্যকর ক্রিকেটারের দেখা তো রোজ মেলে না। তারপরও তাঁরা আছেন।
কিছু ক্রিকেটার আছেন যারা একই ওয়ানডে ম্যাচে বল হাতে কমপক্ষে চার উইকেট এবং ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেছেন। তাঁদের নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।
- পল কলিংউড (ইংল্যান্ড)
পল কলিংউড একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং চার উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৫ সালে; ট্রেন্ট ব্রিজে। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করেছিল ইংল্যান্ড। এই সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই রেকর্ড করেন তিনি।
এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস এবং পল কলিংউডের সেঞ্চুরিতে ৩৯১ রানে বিশাল রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। পল কলিংউড ব্যাট হাতে করেন ১১২ রান। এই ম্যাচে পরে মিডিয়াম পেসে শিকার করেন ৩১ রানে ৬ উইকেট। তাঁর বোলিং তোপে বাংলাদেশ অল আউট হয় ২২৩ রানে। আর ইংল্যান্ড ১৬৮ রানে বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নেয়।
- তিলকারত্নে দিলশান (শ্রীলঙ্কা)
তিলকারত্নে দিলশান এই কীর্তি গড়েন ২০১১ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। হাম্বানটোটায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কান দুই ওপেনার উপুল থারাঙ্গা এবং তিলকারত্নে দিলশানের সেঞ্চুরিতে ভর করে রান তোলে ৩২৭ রান। এই ম্যাচে দিলশানের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল ১৪৪ রান।
পরের বল করতে নেমেও দুর্দান্ত বোলিং করেন দিলশান। মাত্র তিন ওভার বল করে ৪ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি। তাঁর বোলিং তোপে মাত্র ১৮৮ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। এর ফলে ১৩৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায় শ্রীলঙ্কা।
- সৌরভ গাঙ্গুলি (ভারত)
ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনিও একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। ১৯৯৯ সালের পেপসি কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন তিনি। পেপসি কাপে দ্বিতীয় ম্যাচে নাগপুরে রাহুল দ্রাবিড় এবং সৌরভ গাঙ্গুলির শতকে ২৮৭ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় ভারত। এই ম্যাচে ১১৭ রানে ইনিংস খেলেন তিনি।
২৮৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলংকা। শ্রীলংকাকে এত দ্রুত গুটিয়ে দেওয়া জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। এই ম্যাচে তিনি ২১ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন। এছাড়াও এই ম্যাচে অজিত আগাকার ১৬ রানে ৩ উইকেট নেন।
- ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ক্রিস গেইল ইউনিভার্স বস নামে পরিচিত। তাঁর নাম শুনলেই যে কেউ বলবেন তিনি একাই ব্যাট হাতে ম্যাচ ঘুরাতে পারেন। কিন্তু তিনি অলরাউন্ড পারফর্ম করেও ম্যাচ জিতাতে সক্ষম। সেই প্রমাণ তিনি অনেকবারই দিয়েছেন।
একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৩ সালে। হারারেতে ওয়ানডে সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ে। এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১৯৬ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। বল হাতে ১০ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন গেইল।
১৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৭৫ বলে ১১২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এই ম্যাচে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪৯.২৩।
- সনাথ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)
সনাথ জয়াসুরিয়া শ্রীলর ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। তিনি একই ম্যাচে চার উইকেট এবং সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করেন ২০০২-০৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত এক ত্রিদেশীয় সিরিজে।
সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মারভান আতাপাত্তু এবং সনাথ জয়াসুরিয়ার সেঞ্চুরিতে ভর করে স্কোর বোর্ডে ৩৪৩ রান যোগ করে শ্রীলংকা। এই ম্যাচে জয়াসুরিয়া করেন ১২২ রান।
৩৪৪ রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া অল আউট হয় ২৬৪ রানে। এত কম রানে গুটিয়ে দেওয়ার পিছনে অবদান ছিল সনাথ জয়াসুরিয়ার। তিনি বল হাতে ১০ ওভারে ৩৯ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন। আর এর ফলেই ৭৯ রানের বিশাল জয় পায় শ্রীলঙ্কা।
- ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন ভিভ রিচার্ডস। সময়ের সেরা আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ছিলেন। দলের প্রয়োজনে মাঝে মাঝেই হাত ঘুরাতে পারতেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনে মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে ব্যাটিং করে ভিভ রিচার্ডসের ১১৯ রানে ভর করে ২৩৭ রান তোলে। ২৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভিভ রিচার্ডসের বোলিং তোপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। মাত্র ১৪২ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। এই ম্যাচে ভিভ রিচার্ডসের বোলিং ফিগার ছিল ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে ৫ উইকেট।
- নাথান অ্যাস্টল (নিউজিল্যান্ড)
তিনি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং ব্যাটসম্যান। দলের প্রয়োজনে মাঝে মাঝেই বেশ ভালো বোলিং করতেন তিনি। তিনিও ওয়ানডে ক্রিকেটে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন।
১৯৯৭ সালে পেপসি ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের প্রথম ম্যাচে এই কীর্তি গড়েন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে নাথান অ্যাস্টল ১১৭ রানে ভর করে ২৮৫ রানের সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। ২৮৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২৬৩ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস। এই ম্যাচে চার উইকেট শিকার করেন নাথান অ্যাস্টল। ৮ ওভার বোলিং করে ৪৩ রান দিয়ে শিকার করেন ৪ উইকেট।
- শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
লিটল মাস্টার খ্যাত শচীন টেন্ডুলকারও একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং চার উইকেট নেবার কীর্তি গড়েন। তিনি এই রেকর্ড গড়েন ঢাকায়।
১৯৯৮ সালে উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপে কোয়াটার ফাইনাল ম্যাচে এই রেকর্ড গড়েন তিনি। প্রথমে ব্যাটিং করে ১২৮ বলে ১৪১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এই রানের উপর ভর করে ৩০৭ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় ভারত।
৩০৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৬৩ রানে থামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। এই এতো কমে অস্ট্রেলিয়াকে আটকানোর নায়ক ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। তিনি এই ম্যাচে সেঞ্চুরির পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেছেন ৩৮ রানে ৪ উইকেট।
- ফেইকো ক্লপেনবার্গ (নেদারল্যান্ড)
মাত্র ৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্রিকেটে এই রাজকীয় তালিকায় ঢুকে গেছেন ফেইকো ক্লপেনবার্গ। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপে নামিবিয়ার বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েন তিনি।
ফেইকো ক্লুপেনবার্গ এবং ভ্যান নর্টউইকজ এর ব্যাটে ভর করে ৪ উইকেটে ৩১৪ রান করে নেদারল্যান্ড।
৩০৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ডাচ ওপেনার ক্লপেনবার্গে বোলিং তোপে পড়ে নামিবিয়া। তিনি ৪২ রানে তুলে নেন ৪ উইকেট। আর এর ফলে ২০৫ রানে গুটিয়ে যায় নামিবিয়া।
- শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডার এই কীর্তি গড়েন হংকংয়ের বিপক্ষে এশিয়া কাপে ২০০৪ সালে। হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচে শোয়েব মালিক এবং ইউনুস খানের ব্যাটে ভর করে ৩৪৩ রানের বিশাল সংগ্রহ দাড় করায় পাকিস্তান।
৩৪৪ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৬৫ রানে গুটিয়ে যায় হংকং। এই ম্যাচে হংকংয়ের ব্যাটিং স্তম্ভ ভেঙ্গে পড়ে শোয়েব মালিকের বোলিং তোপে। তিনি শিকার করেন ১৯ রানে ৪ উইকেট।
- যুবরাজ সিং (ভারত)
নিসন্দেহে ভারতের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং। ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। তিনি ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। এই ম্যাচে যুবরাজের সেঞ্চুরিতে ভর করে ২৯২ রানের সংগ্রহ পায় যুবরাজ। তিনি ব্যাট হাতে করেন ১১৮ রান।
২৯৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংলিশ ব্যাটিং লাইন আপ গুটিয়ে যায় ২৩৮ রানে। চার ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে পাঠান তিনি। এই ম্যাচে যুবরাজ সিংয়ের বোলিং ফিগার ছিল ২৮ রানে ৪ উইকেট।
- সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি এই কীর্তি গড়েছেন ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সিরিজে। ম্যাচটা হয়েছিল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
এই ম্যাচে সাকিবের ১০১ রানে ভর করে ২৮১ রানের সংগ্রহ দাড় করায় বাংলাদেশ। ২৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৯৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। তিনি এই ম্যাচে সাকিবের বোলিং ফিগার ছিল ৪১ রানে চার উইকেট।
- মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)
মোহাম্মদ হাফিজ পাকিস্তানের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। তিনি একই ম্যাচে চার উইকেট এবং সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন শ্রীলংকার বিপক্ষে ডাম্বুলাতে।
এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ২৫৫ রান করে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। বোলিংয়ে ৪১ রানে ৪ উইকেট নেন হাফিজ।
২৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই ব্যাটসম্যান দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে তাঁর ব্যাটে ভর করে পাকিস্তান দল জয়ের বন্দরে ভেড়ে। এই ইনিংসে হাফিজ করেন ১০৩ রান।
- রোহান মুস্তাফা (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
রোহান মুস্তাফা আরব আমিরাতের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। তিনি মাঝে মাঝে দলের প্রয়োজনে বল করতে পারেন। তিনি একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং পাঁচ উইকেট নেবার কীর্তি গড়েন পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে।
এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে রোহান মুস্তাফার ১০৯ রানের ইনিংসে ভর করে ২৫১ রানের সংগ্রহ পায় আরব আমিরাত।
২৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাপুয়া নিউগিনি ১৪৮ রানে অল আউট হয়। পাপুয়া নিউগিনি কে আটকে রাখার এই কাজ করেন রোহান মুস্তাফা। তিনি ২৫ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন।
- আকিব ইলিয়াস (ওমান)
আকিব ইলিয়াস এই রেকর্ড গড়েন নেপালের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে। আকিব ইলিয়াস মূলত টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। তিনি নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে ৩৬ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন।
নেপাল প্রথমে ব্যাটিং করে ২৪৯ রানের সংগ্রহ করে। এরপর ২৫০ রানে লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে ওমান। আকিব ইলিয়াসের ১০৯ রানে ভর করে সহজেই জয়ের বন্দরে ভিড়ে যায় ওমান।