কোহলির ইনিংস, স্বার্থপর নাকি ইমপ্যাক্টফুল?

১২১ বলে ১০১ রানের ইনিংস। বিরাটসুলভ নয় নিশ্চয়ই। তবে তাতে মাহাত্ম্য কমে না একটুও। ৪৯তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূরণের দিনে ভাগ বসালেন শচীনের সেঞ্চুরি রেকর্ডে। আর এখানেই নিন্দুকদের সমালোচনার সূত্রপাত। রেকর্ড গড়ার পথে বিরাট কোহলি একটু স্বার্থপরই বোধহয় হয়ে উঠলেন? কিন্তু বাস্তবতা কি আসলেও তাই বলে?

ইডেনের উইকেট কিছুটা স্লো। আর কিছুটা লো বাউন্স প্রকৃতির। এমন উইকেটে বল আসে থেমে থেমে। স্বাভাবিকভাবেই এমন উইকেটে ব্যাট করাটা কিছুটা কঠিন। বিরাটকে ১০১ রানের ইনিংস খেলার পথে সেই কাঠিন্যের মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে। ইডেন গার্ডেনে সেঞ্চুরি করা কতটা কঠিন, তার স্বপক্ষে এখানে একটা পরিসংখ্যান দাঁড় করানো যেতে পারে।

১৯৮৭, ২০১১ এর পর আবারো ২০২৩ বিশ্বকাপ দিয়েই বৈশ্বিক আসরের ম্যাচ আয়োজন করছে ইডেন গার্ডেন। দীর্ঘ এ যাত্রায় বিশ্বকাপের ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র ৩ জন। ছোট্ট এই তালিকাটার সর্বশেষ সংযোজন বিরাট কোহলি। এ ছাড়া সব মিলিয়ে এই মাঠে একাধিক সেঞ্চুরি আছে কেবল বিরাটেরই।

অনেকেই আবার বিরাটের এই সেঞ্চুরির সাথে মেলাচ্ছেন ২০১২ সালে শচীনের করা ৪৯তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সে ম্যাচে ১৪৭ বলে ১১৪ রান করেছিলেন শচীন। তবে শচীনের শততম সেঞ্চুরির মাইলফলক ছোঁয়ার দিনে ম্যাচ হেরেছিল ভারত। আর সেই হারের পরই শচীনের ইনিংস উঠেছিল সমালোচনার কাঠগড়ায়।

১১ বছরের ব্যবধানে, এবার বিরাট কোহলিকে নিয়েও এক পক্ষের সেই একই আলোচনা। ভারতের হয়ে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলে রোহিত শর্মা। ২৪ বলে এ ওপেনারের ৪০ রানের মারমুখী ইনিংসেই দারুণ শুরু ভারত।

তারপরও সেই একই উইকেটে বিরাট কোহলি কেন এমন মন্থর গতিতে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে গেলেন। বাস্তবতাটা হচ্ছে, ইডেনের শুষ্ক উইকেটে বল পুরনো হয়ে গেলে পিচে গ্রিপ আসে। আর তাতে করে ব্যাটিং করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।

আর এমন উইকেটে থ্রু দ্য উইকেটে ব্যাটিং করাই শ্রেয়তর। কারণ ভারতের এ ম্যাচে স্কোরকার্ড দেখলেই বুঝা যায়, আগ্রাসী ভঙ্গিতে ব্যাট করলেই উইকেট খোয়াতে হয়েছে। শ্রেয়াস আইয়ার যেমন সাবলীল ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির পথে এগিয়েছিলেন।

কিন্তু, যখনই স্লটে বল চালিয়ে খেলতে গিয়েছেন, তখনই ধরা দিয়েছেন ফিল্ডারের হাতে। এরপরে লোকেশ রাহুলও ব্যাট করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন। এমতাবস্থায় থ্রু দ্য ইনিংস ব্যাটিং করাটাকেই বেঁছে নিয়েছিলেন কোহলি।

আর তাতে ভারতের দলীয় সংগ্রহেও কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। ৩২৬ রানের স্কোর জমা করেছিল তাঁরা। ইডেনের উইকেটে এত রান তাড়া করতে নেমে জয়ের ইতিহাস আর একটিও নেই। কোহলির সেঞ্চুরি নিয়ে তাই সমালোচনার জায়গা নেই বললেই চলে। তবে কি বিরাটের ব্যক্তিগত মাইলফলক ছোঁয়ার দিনে কিনা বলেই কিনা নিন্দুকদের এমন আলোচনার উদয়!

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link