নিয়ম মেনে আউট না করাটাই অভদ্রতা!

দৃশ্যপটটা ইনিংসের ২৫ তম ওভারের। সাকিবের করা ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান লঙ্কান ব্যাটার সাদিরা সামারাবিক্রমা। আর এরপরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্বাক্ষী হয় নতুন এক ঘটনার। ‘টাইমড আউট’-এর শিকার হন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস।

নতুন ব্যাটার হিসেবে ঠিক সময়েই মাঠে এসেছিলেন ম্যাথুস। কিন্তু উইকেটে গিয়ে দেখলেন, তাঁর হেলমেটের একটা অংশ ছেঁড়া। তাই নতুন হেলমেটের জন্য ইশারায় ড্রেসিংরুমের দিকে বার্তা পাঠিয়েছিলে লঙ্কান এ ব্যাটার। আর তাতেই ঘটে বিলম্ব। নতুন হেলমেট মাঠে আসতে কিছুটা দেরিই হয়ে যায়। আর ঠিক এই সময়েই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের বিপক্ষে ‘টাইমড আউটে’-এর আপিল করে বসেন সাকিব আল হাসান।

বাংলাদেশের করা সেই আপিলে অনফিল্ড দুই আম্পায়ারও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আউটের সংকেত দিয়ে বসেন। এমন আউট নিজেও মেতে নিতে পারছিলেন না ম্যাথিউস। আম্পায়ার, বাংলাদেশের অধিনায়কের কাছে বার বার ছুটে গেছেন। কিন্তু তাতে শুধু সময়টা নষ্ট হয়েছে। সব সিদ্ধান্ত সাকিব ছেড়ে দিয়েছিলেন আম্পায়ারের উপর। আর নিয়মানুযায়ী, বিলম্ব ঘটায় আম্পায়াররাও ছিলেন আউটের সিদ্ধান্তে অনড়। ম্যাথিউসকে তাই হতাশ চেহারাতেই ফিরে যেতে হয় সাজঘরের দিকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রিকেটের আইন কী বলে? ক্রিকেটের আইন প্রণেতা প্রতিষ্ঠান এমসিসির ৪০.১.১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে কোনো ব্যাটার আউট কিংবা রিটায়ার্ড হওয়ার পর নতুন ব্যাটার ৩ মিনিটের মধ্যে পরবর্তী বলের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত হবেন। অন্যথায় নতুন ব্যাটার আউট বলে বিবেচিত হবে। আর সেই আউটের ধরণটা হবে টাইমড আউট।’

ম্যাথুস অবশ্য তিন মিনিটের মাঝেই পরের বল মুখোমুখি করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তারপরও তাঁকে আউট হতে হয়েছে বিশ্বকাপের নিয়মের বেড়াজালে পড়ে। কেননা, বিশ্বকাপে নিয়ম বলেছে, ৩ মিনিট নয়, নতুন ব্যাটারকে পরবর্তী বলের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে ২ মিনিটের মধ্যে। হেলমেট বদলাতে গিয়ে ম্যাথুস সেই ২ মিনিট সময়ই অতিক্রান্ত করেছিলেন। তাই বাংলাদেশের আপিলে আম্পায়ারদের আউট না দিয়েও কোনো উপায় ছিল না। মূলত, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই আউট প্রথমবার হওয়ার কারণেই এতো আলোচনা।

আর সেই আলোচনার মাঝেই আবার প্রশ্ন উঠেছে, সাকিব কিংবা বাংলাদেশ কি তবে স্পিরিট অব ক্রিকেট লঙ্ঘন করলেন? প্রথমত নিয়মানুযায়ী যেটা আউট, সেখানে স্পিরিট অব ক্রিকেট নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। সাকিব নিয়মটা জানতেন। এটা তাঁর বুদ্ধিমত্তার পরিচয়, দারুণ ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের ফলপ্রসূ উদাহরণ। তাই টাইমড আউট নিয়ে বিতর্কটা অমূলক। একই সাথে স্পিরিট অব ক্রিকেট টেনে আনাটাও কোনো বিবেচ্য বিষয় না।

তবে এমন আউট নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকবেই। যেমন ম্যাথুস যখন আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন ধারাভাষ্যে থাকা রাসেল আর্নল্ড বলছিলেন, এটা স্পিরিট অব গেমের পরিপন্থী। আর রমিজ রাজা বলছিলেন, এটা সাকিবের গেম অ্যাওয়ারনেসের দারুণ উদাহরণ। সব কিছু মিলিয়ে এই আলোচনা চলবেই।

সেই আলোচনার স্রোতে হয়তো স্পিরিট অব গেম নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। তবে নিয়মে যেটা আউট, সেই আউট আদায় করাটা দিন শেষে বুদ্ধিমত্তার কাজ। বরং ম্যাথিউসকে টাইমড আউট না করলেই  ক্রিকেটের স্পিরিট খর্ব হত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই ‘টাইমড আউট’-এর ঘটনা এই প্রথম।

তবে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এমন আউটের নজির আছে ৬টি। যার শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে অ্যান্ড্রু জর্ডানের আউটের মাধ্যমে। এরপর ১৯৯৭ সালে হেমুলাল যাদব, ২০০২ সালে ভাসবার্ট ড্রেকস, ২০০৩ সালে হ্যারিস, ২০১৩-তে রায়ান অস্টিন আর ২০১৭ সালে চার্লস কুঞ্জ টাইমড আউটের শিকার হয়েছেন। সেই ধারায় এবার টাইমড আউটের বিরল আউট হওয়ার তালিকায় নাম লেখালেন ম্যাথুস। নিশ্চয়ই এই ইতিহাসটা গড়তে ম্যাথুস নিজেও চাননি।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link