বিশ্বকাপে তানজিদ তামিমকে অটোচয়েস বানানো কতটুকু যৌক্তিক?

চাপটা ছিল অসম। তামিমের জায়গায় আরেক তামিম, তানজিদ হাসান তামিম! তবে সেই চাপকে জয় করার প্রত্যয় ছিল তরুণ এ ব্যাটারের চোখে-মুখে। টিম ম্যানেজমেন্টও তাঁর পাশে ছিল মাথার উপর শীতল ছায়ার মতো।কিন্তু তানজিদ তামিম সেই আস্থার প্রতিদান তো দিতেই পারলেন না, হতশ্রী ব্যাটিংয়ে হতাশার ডুব সাগরে পতিত হলেন।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা ৮ ম্যাচেই প্রত্যেকটিতেই একাদশে ছিলেন তামিম। মাথার উপর চাপ হয়ে কোনো ব্যাক আপ ওপেনারও ছিল না স্কোয়াডে। সব মিলিয়ে তানজিদ সময় সুযোগ টা পেয়েছেন টানা, খেলতে পেরেছেন নির্ভার হয়ে। কিন্তু নির্ভার থেকে নির্ভরতা বাড়াতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। উল্টো তাঁর ব্যাটিং নিয়ে এখন বড় এক ভাবনার বিষয় হয়েই দাঁড়িয়েছে— তামিম আদৌ কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন বা আছেন?

ইমার্জিং এশিয়া কাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করে পেয়েছিলেন জাতীয় দলের টিকিট। শূন্য দিয়ে শুরু। এরপর পূর্ণতার খোঁজে তামিম হাঁটলেও নিজের ছন্দটাকে টেনে আনতে পারেননি। শূন্য রানে ক্যারিয়ার শুরু করা তামিম থেকে গিয়েছেন অর্জনশূন্যদের দলেই।

ভারতের বিপক্ষে এক ফিফটি বাদে পুরো বিশ্বকাপে বাকি ৭ ম্যাচের একটিতেও হাসেনি তামিমের ব্যাট। অফফর্মের বৃত্তে বন্দী থেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেও এ ব্যাটার ফিরে যান ৯ রানে। দুই চারে দারুণ শুরুর আভাস দিয়েও ফিরে যান আলগা এক শট খেলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচেও শূন্য রানে ফিরেছিলেন এ ব্যাটার। 

সব মিলিয়ে বৈশ্বিক মঞ্চে পারফর্ম করার চাপ হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অনভ্যস্ততা, নিজেকে ঠিক এই পর্যায়ের ক্রিকেটে মানিয়ে নিতে পারছেন না এ ব্যাটার। তানজিদ তামিম অবশ্য নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলটার সঙ্গী আর ইমার্জিং এশিয়া কাপে পারফর্ম করে আলেচনায় ছিলেন কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু তরুণ এ ব্যাটার আদৌতে আলোচনায় আসার মতো করে দেখিয়েছেন কমই। 

বরং, লিস্ট এ ক্রিকেটে তানজিদের ব্যাটিংয়ের অবস্থা যে কারোরই চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। সেটা অবশ্য বড় কোনো সংখ্যাতত্ত্বে নয়। লিস্ট এ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৫৮ ম্যাচে তামিম ১৪০৫ রান করেছেন মাত্র ২৫.৫৪ গড়ে। টপ অর্ডার ব্যাটার হিসেবে এই সময়ের ক্রিকেটে যা কোনো ভাবেই মানানসই নয়। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনই তানজিদ তামিমকে অভিষেক করিয়ে দেওয়াটা বড্ড তাড়াহুড়োই বটে। 

আর এই তাড়াহুড়োটা আরো বেশি হয়েছে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে তাঁর বিকল্প স্কোয়াডে না নেওয়াটা। আর তাতে ভূক্তভোগীও হয়েছে বাংলাদেশ। তামিম অফ ফর্মে। কিন্তু তাঁকে রিপ্লেস করার মতো একটা ওপেনারও স্কোয়াডে নেই। এমন পরিকল্পনার গলদেই মূলত এবারের বিশ্বকাপে খেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর সেই ধারায় তামিমের জায়গা জুনিয়র তামিমকে নিয়ে বড় স্বপ্নে বিভোর হওয়াটাও ছিল আকাশ কুসুম ভাবনা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link