এক মুহূর্তের জন্যে অধিনায়ক থাকবেন না। এমনটাই জানিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপ শুরুর আগে হুট করেই পাওয়া অধিনায়কত্ব, বিশ্বকাপের পরপর ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন সাকিব। তবে দুর্ভাগা সাকিবের শেষটা আরও আগেভাগেই হয়ে গেল।
বিশ্বকাপের এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ইনজুরি আক্রান্ত সাকিব। তাতে করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি খেলা হচ্ছে না টাইগার কাপ্তানের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটাই তবে সাকিবের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। কি দারুণভাবে তিনি সমাপ্তি রেখা টেনে গেলেন।
নিজের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটাতেও দলের জয়ের অবদান রাখলেন। ম্যাচসেরার পুরষ্কারটা জিতে নিলেন। সমালোচনার তীব্র স্রোতের মাঝে এইটুকু স্মৃতিই তার সঙ্গী হল। অর্জনের খাতাটা অবশ্য শূন্যই রয়ে গেল। একরাশ আক্ষেপ, হতাশা আর বিষন্নতা সঙ্গী করেই বিশ্বকাপের পাট চুকিয়ে ফেললেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
সাকিবের হাতে থাকা সমস্তকিছুই সাকিব বাস্তবায়ন করেছেন। সুতরাং বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের দায়িত্ব সাকিব আর বহন করছেন না, সে কথা বলাই যায়। আবেগ আর কিঞ্চিত দুঃখকে পাশ কাটিয়ে দেখা প্রয়োজন কে হবেন সাকিবের উত্তরসূরী।
নিশ্চয়ই একটা প্রতিষ্ঠানে অগ্রযাত্রা কোন এক নির্দিষ্ট মানুষের জন্যে থেমে থাকে না। সাকিব দীর্ঘদিন ধরেই দলের জন্যে করে গেছেন। ক্রান্তিলগ্নে তিনি দলের হাল ধরেছেন। ফলাফল মোটেও সুখকর নয়। তাইতো পরবর্তী অধিনায়কের দায়িত্বটা থাকবে অনেক। দলকে সাঁজাতে হবে। তলানিতে থাকা আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে তাকে।
সেদিক থেকে নতুন অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে রয়েছে তিনজন। লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এই তিন ক্রিকেটারের নাম সাম্প্রতিক সময়ে বহুবার সামনে এসেছে। তবে এই তিনজনের মধ্যে মিরাজই রয়েছেন সবচেয়ে এগিয়ে। পেছনে বেশকিছু কারণও রয়েছে।
প্রথমত লিটন দাস অধিনায়ক হিসেবে সফলতার মুখ দেখেছেন ঠিক। তবে অধিনায়কত্ব খুব একটা উপভোগ করেন না লিটন। তিনি যেন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। তাছাড়া ব্যাটিং ছাড়া যেকোন বাড়তি দায়িত্ব এলেই তিনি চাপে পড়ে যান। তা প্রভাব ফেলে তার ব্যাটিংয়ে।
তাই হয়ত লিটনকে বিবেচনায় রাখতে চাইবে না বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। অন্যদিকে নাজমুল হোসেন শান্ত এবারের বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি প্রস্তুতি ম্যাচ ও বিশ্বকাপের একটি ম্যাচেও শান্তর অধিনায়কত্বে খেলেছে বাংলাদেশ দল।
পরবর্তী অধিনায়ক ভাবনা তাই ভালভাবেই রয়েছেন শান্ত। তবে শান্তর ক্ষেত্রেও পারফরমেন্সের অধারাবাহিকতা বাঁধার কারণ। বর্তমান বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের তিন নম্বরে ব্যাট করছেন শান্ত। তার উপর বাড়তি দায়িত্ব থাকে তাই ব্যাটার হিসেবে। এমনকি ম্যাচের ভাগ্যও অনেকটাই তার উপরে নির্ভরশীল। এমন এক খেলোয়াড়কে বাড়তি দায়িত্ব থেকে নির্ভার রাখা দোষের কিছু নয়।
ঠিক এসব কারণেই বিবেচনায় উপড়ের দিকেই থাকছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে রেখেছেন মিরাজ। সময়ে সময়ে দূর্দান্ত পারফরম করেছেন। ব্যাটে কিংবা বলে, পারফরম করছেন ধারাবাহিকভাবেই।
দলের জয়ের অবদান রাখছেন। তাছাড়া বয়স ভিত্তিক পর্যায় থেকেই অধিনায়ক হিসেবেই গড়ে উঠেছেন মিরাজ। তাই মিডিয়া সামলানোর কাজ অন্যদের থেকেই বেশ ভাল জানা তার। যদিও আরও একটু শাণিত হওয়ার বিষয়টি থেকেই যায়।
এছাড়াও মাঠে তার সরব উপস্থিতি ও বিচক্ষণতা বাড়তি সংযোজন। পাশাপাশি দারুণ ফিল্ডার তিনি। মাঠে নিজের আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন করে দলকে উজ্জীবিত করবার ক্ষমতাও রয়েছে মিরাজের। এসব কারণেই মিরাজ বনে যেতে পারেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের পরবর্তী অধিনায়ক। তাছাড়া সাকিবের উত্তরসূরী হিসেবে তো তাকেই কল্পনা করা হচ্ছে।
এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তা ও টিম ম্যানেজমেন্ট শেষ অবধি কার হাতে তুলে দেন অধিনায়কের ব্যাটন। তবে একটা কথা মাথা রাখতেই হচ্ছে। এই দলটা একটা ট্রানজিশনের মধ্যে দিয়ে যাবে। তাই বেশ চড়াই-উৎরাই পার করতে হবে। অধিনায়ককে তাই দিতে হবে সময়, রাখতে হবে তার উপরই ভরসা।