ইংল্যান্ডের মার্কাস ট্রেসকোথিক কিংবা অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা যেভাবে খোলাখুলি ভাবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলাপ করতে পারেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ঠিক তেমন নয়। তবে, সেই পরিস্থিতিটা একটু একটু করে হলেও পাল্টাতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের সদ্য সাবেক হওয়া ওয়ানডে অধিনায়ক মনে করেন এখানে বিষয়টাকে অনেক হালকা করে দেখা হয় দেশের ‘সামাজিক বাস্তবতা’র কারণে। ১৮ বছর জাতীয় দলে খেলা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য এখানে খুব বেশি গুরুত্ব পায় না। ডিপ্রেশন নিয়ে কথা বলার জন্য আমরা মার্কাস ট্রেসকোথিক কিংবা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মত সুযোগ পাই না। এখানে কেউ যদি বলে, তার ভাল লাগছে না তাহলে মনে করা হয় সে অজুহাত দেখাচ্ছে। অধিকাংশ লোক ওভাবে ভাবেই না। যারা ভাবে, তারা আবার নিজেদের ভাবনাটা প্রকাশ করে না।’
কোচ ‘মানসিক অবসাদ’ ইস্যুতে সচেতন। বললেন, ‘মানসিক অবসাদ এমন একটা ব্যাপারে যেখানে একজন খেলোয়াড়কে সৎ আর খোলামেলা হতে হয়। সব খেলোয়াড় এই বিষয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না – সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা তেমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেখানে খেলোয়াড়রা নিজেদের মনের কথা বলতে পারবে আর প্রয়োজনে বিরতি চাইতে পারবে। সমস্যাটা মানসিক বা শারীরিক – যাই হোক না কেন তাকে সম্মান জানাতে হবে কারণ এটা খেলার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কানাডিয়ান বংশদ্ভুত ক্রীড়া মনোবিদ আলী খান দু’টি ভিন্ন মেয়াদে ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)। কাজ করেছেন দেশের ক্রিকেটারদের সাথে। তিনি বলেন, ‘মানসিক অবসাদ তখনই বাড়ে যখন একজন খেলোয়াড়ের ওপর খুব বেশি চাপ পরে, মোটিভেশনের অভাব হয়, একঘেয়েমিতা চলে আসে, মনোযোগ ব্যাহত হয়। এগুলো মানসিক অবসাদের খুব প্রচলিত কারণ। এটা কেবল মস্তিষ্ককেই নয়, শারীরিক কার্যক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। আর এর প্রভাব পড়ে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে। তাদের প্রোডাকটিভিটি কমে যায়, অনুশীলন করতে কিংবা পারফর্ম করতে তারা কোনো তাড়ণাবোধ করেন না।’
আলী জানালেন এই সমস্যা এড়ানোর জন্য প্রাথমিক পন্থা হল বিরতি দেওয়া। তবে, সমস্যা গুরুতর হলে দরকার সঠিক সাইকোলজিক্যাল ইনটারভেনশন (থেরাপি)। এটা খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থান ঠিক করার জন্য কার্যকর কৌশল।
তিনি বলেন, ‘একটা বিরতি নেওয়া মানসিক অবসাদ কাটিয়ে তোলার প্রচলিত ও কার্যকর উপায়। এটার মধ্য দিয়ে শরীর ও মন নিজেরাই ঘাটতিগুলো পুষিয়ে নেয় একটু বাড়তি ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্য দিয়ে। এটা আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরের বায়োকেমিস্ট্রিতে পরিবর্তন এনে শক্তি বাড়ায়। একজন খেলোয়াড় বিরতি নেওয়ার পরও অবসাদ-বিষয়ক ভাবনা তার মনে আসতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে এই বিষয়টা কোনো বড় টুর্নামেন্ট চলাকালে ঘটলো, যখন আসলে বিরতি নেওয়া সম্ভব নয়। তখনই আসলে সাইকোলজিক্যাল ইনটারভেনশন (থেরাপি) নেওয়ার দরকার হয়। এটা মানসিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের সঠিক উপায়।’
বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে আস্তে আস্তে মানুষ খেলাধুলায় মানসিক ব্যাপারগুলার গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছে। তবে, সাইকোলজিক্যাল স্কিল ট্রেনিং (পিএসটি) এখনো আমাদের ডেইলি রুটিনের অংশ নয়। খেলোয়াড়রা এই বিষয়টাকে খুবই সিরিয়াসলি নিয়ে থাকেন, যখন তারা মরিয়া হয়ে থাকেন। এটা খুবই খরুচে একটা উপায়। অনেক প্রতিভা কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের অভাবেই এখানে হারিয়ে যায়।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটে মানসিক স্বাস্থ্য ধরে রাখাটা ক্রিকেটারদের জন্য জরুরী। মনে করেন আলী, ‘এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের শীর্ষ দেশ। ফলে আমাদের খুব প্রে-অ্যাকটিভ একটা মানসিক ফিটনেস ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেটা আসলে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে খাপ খেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে পারফরম্যান্সের ওঠা-নামাও অনেকটা কমে যাবে।’
– ক্রিকবাজ অবলম্বনে