দিনটা না হলেও বিশ্বকাপটা বিরাটেরই!

একটা শর্ট বল। ঠিকঠাক বাউন্স নেই। একেবারে শরীর ঘেষা বলটা বিরাটের ব্যাটের খোঁচা লেগে আঘাত হানলো স্ট্যাম্পে। দেড় লাখ মানুষের কোলাহল নিমিষেই হাওয়া। হতাশার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নেয় সে জায়গা। বিরাটের ব্যাট থেকে যে বড় রানই সব সময়ের প্রত্যাশা। তবে এদিনটা যে লেখা হয়নি বিরাটের নামে।

ফাইনালের মহামঞ্চে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার লড়াই। আগে ব্যাটিংয়ের নিমন্ত্রণ পেয়ে প্রথম দশ ওভারে দারুণ গতিতেই রান তুলতে থাকে ভারত দল। অধিনায়ক রোহিত শর্মার আগ্রাসনের ফসল। তবে ৮১ রানে শ্রেয়াস আইয়ার আউট হয়ে ফিরল তিন উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়ে যায় টিম ইন্ডিয়া।

সেখান থেকে দলকে একমাত্র বিরাট কোহলিই উদ্ধার করতে পারেন, সেটা কারোই অজানা নয়। এবারের বিশ্বকাপে তার থেকে ধারাবাহিক যে ছিলেন না আর কেউই। টানা ৫ ইনিংসে তিনি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন। সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনটি।

এমন একজন খেলোয়াড়ের উপরে ভর করেই বিশ্ব জয়ের ভীত গড়ার স্বপ্ন দেখা মোটেও অমূলক নয়। বিরাট খুব একটা নিরাশ করেননি আহমেদাবাদের দর্শকদের। তিনি ধীরলয়ে উইকেটে থিতু হয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাট করেছেন, দলের রান বাড়িয়ে নিয়েছেন।

ব্যক্তিগত অর্ধশতকও পার করেছেন এই ডান হাতি ব্যাটার। ৬৩ বলে ৫৪ রান করে তাকে থামতে হয়েছে। দুর্ভাগ্যের শিকার তিনি সে কথা বলতেই হয়। আহমেদাবাদের উইকেট বড্ড স্লো। বল খুব সাবলীল ভাবে ব্যাটারের কাছ অবধি পৌঁছায়নি। এমন এক বৈরি উইকেটে দাঁড়িয়েও বিরাট দলের রানের চাকা সচল রেখেছেন। বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

তবুও দিনশেষ খানিকটা হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। দলকে একটা ভাল অবস্থানে রেখে না আসার হতাশা। ১৪৮ রানের মাথায় প্যাভিলনের পথে হাটতে শুরু করেছেন ‘কিং কোহলি’। মাথা নিচু করেই সবুজ গালিচা ত্যাগ করেছেন বিরাট।

দিনশেষে ভারত বিশ্বকাপ হয়ত বিশ্বকাপ জিতবে কিংবা জিতবে না। তবে নিচু হয়ে থাকা মস্তষ্ক অন্তত বিরাটের প্রতিচ্ছবি নয়। কেননা এবারের বিশ্বকাপে তিনি যা করেছেন, তা বোধহয় বেশ লম্বা সময়ের জন্যেই রেকর্ডের পাতায় অক্ষত থেকে যাবে।

৭৬৫ রান করেছেন তিনি ১১ ম্যাচে। ৯৫.৬২ গড়ে তিনি রান করেছেন এবারের বিশ্বকাপে। তাতে নিশ্চিতরুপেই বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা হওয়ার জন্যে যথেষ্ট। এর আগে যে কেউ এক বিশ্বকাপে এত রান করেনি। তাছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি ৫০টি সেঞ্চুরির মাইলফলক পেরিয়েছেন ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেই।

সে রেকর্ডও যে দীর্ঘ সময় অক্ষুন্ন থেকে যাবে, তা বলা বাহুল্য। ফাইনালে আসার পথে অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় তার ব্যাটেই তো দৌড়েছে গোটা ভারত দল। ফাইনালেও তিনি চেষ্টা করেছেন। তবে অনিশ্চিত ক্রিকেটে প্রতিটা দিন তো সমান নয়। তাই বলে যে একেবারে বিরাট নিষ্ফলা ছিলেন সেটারও সুযোগ নেই। ফাইনালের জয়ের ভীত গড়ার কাজটা না হয় আজ বাকিদের হাতেই তোলা রইলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link