রোহিত ‘ইম্প্যাক্টফুল’ শর্মা

সেমিফাইনালের প্রথম ওভারের চতুর্থ বল – স্ট্রাইকে থাকা রোহিত শর্মা রাজকীয় ভঙ্গিতে ফ্লিক করলেন মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। ট্রেন্ট বোল্টকে মারা সেই চারটাই পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে রোহিতের ব্যাটিং নমুনা। শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের সেরা বোলারের টুঁটি চেপে ধরতে চান তিনি; বলা বাহুল্য, সফলও হন বটে।

ব্যতিক্রম হয়নি আহমেদাবাদের ফাইনালেও; মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউডের বিপক্ষে খেলেছেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে। দশম ওভারে আউট হলেও সাঝ ঘরে ফেরার আগে ৩১ বলে ৪৭ রান করেছেন এই ওপেনার। স্টার্কদের লাইন লেন্থ এলোমেলো করে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছেন তিনি, আর সেই সূচনা কাজে লাগিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া।

দিনের দ্বিতীয় ওভারের হ্যাজলউডকে টানা দুই চার মেরে শুরু। এরপর প্রায় প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি বের করেছেন তিনি। সবমিলিয়ে চার আর ছক্কা মেরেই আদায় করেছেন মোট রানের ৭২.৩৪ শতাংশ। পাওয়ার প্লে-র সুবিধা কাজে লাগানো যাকে বলে আর কি।

সব মিলিয়ে এই বিশ্বকাপে ৫৯৭ রান করেছেন এই ডানহাতি। অধিনায়ক হিসেবে আর কোন ক্রিকেটারই পারেননি বিশ্বমঞ্চে এত রাত করতে; আগের সর্বোচ্চ ছিল কেন উইলিয়ামসনের, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ৫৭৮ রান করেছিলেন এই কিউই।

তবে এই আসরে রোহিতের পরিকল্পনা বড় ইনিংস খেলা নয়, বরং ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের ফায়দা নিতে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। তাই তো গত বিশ্বকাপের চেয়ে এবার রান কম করেছেন, তবে তাঁর স্ট্রাইক রেট পৌঁছে গিয়েছে ঈর্ষণীয় উচ্চতায়। প্রায় ৬০০ এর কাছাকাছি রান করা এই ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট ১২৬; অথচ এবারের আসরে ম্যাক্সওয়েল (৩৯৮) বাদে কমপক্ষে ৪০০ রান করেছেন এমন ব্যাটারদের স্ট্রাইক রেট ১১০ এর নিচে!

মূলত বাউন্ডারি নির্ভর হওয়ায় স্বাগতিক অধিনায়কের পরিকল্পনা সফল হয়েছে। এই বিশ্বকাপে ৬৬টি চার এবং ৩১টি ছয় এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। অর্থাৎ ৭৫.২৫ ভাগ রান তিনি নিয়েছেন স্রেফ জায়গায় দাঁড়িয়ে – ‘হিটম্যান’ তো আর এমনিতেই হয়ে যাননি।

সতীর্থদের ভালভাবেই চেনেন রোহিত শর্মা। জানেন কোহলি, আইয়াররা সেট হতে পারলে কি করতে পারে। তাই তো তাঁদের সেট হওয়ার সময় দিতে নিজে বেছে নিয়েছেন আগ্রাসনের পথ; তাঁর এই ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কারণেই রান রেটের চাপে পড়তে হয় ব্যাটিং লাইনআপের অন্যদের।

চাইলে রোহিতও বড় রান করতে পারতেন, গতবারের মত গোটা কয়েক সেঞ্চুরি ঝুলিতে নিতে পারতেন – কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে দলের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত মাইলস্টোনের ভাবনা সরিয়ে খেলেছেন দলের জন্য; ভারত যদি বিশ্বকাপ নাও জেতে তবু এই ত্যাগের বদৌলতে সমর্থকদের হৃদয়ে আজীবন থেকে যাবেন এই তারকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link