চলতি বছরের আগস্ট মাসের ঘটনা। অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে ১৮ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করলো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। কিন্তু সবচাইতে চমকপ্রদ ঘটনা হয়ে ধরা দিল, মার্নাস লাবুশানে নেই সেই দলে!
অস্ট্রেলিয়ার সাদা পোশাকের দলের নিয়মিত সদস্য তিনি। টেস্টের মতো না হলেও একদিনের ক্রিকেটেও কম যান না লাবুশানে। কিন্তু সেই লাবুশানেকেই কিনা দলের বাইরে রেখে স্কোয়াড ঘোষণা করলো অস্ট্রেলিয়া।
বিস্ময়ের সূত্রপাত সেখান থেকেই। তবে একটা লাইফলাইন লাবুশানে পেলেন বটে। স্টিভ স্মিথ চোটের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে ছিটকে পড়ার পর ডাক পান তিনি। আর সেই সুযোগ দুই হাতে লুফে নিয়েছিলেন তিনি। যদিও তাতেও জায়গা মেলেনি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে।
কিন্তু কারো পৌষমাস, তো কারো সর্বনাশ। অ্যাস্টন অ্যাগার চোটে পড়লেন। আর সেই সর্বনাশাতেই কপাল খুলে গেল লাবুশানের। লাবুশেনকে আবার ডাকল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপগামী দলে আবারো ঠাই পেলেন এ ক্রিকেটার।
এরপর তো ইতিহাস। ভারতকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো অস্ট্রেলিয়া। আর সেই সেই শিরোপার অন্যতম সারথি হয়ে গেলেন মার্নাস লাবুশানে। মাস তিনেক আগে যিনি দলেই ছিলেন না, সেই লাবুশানে এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে অজি এই ব্যাটারের অবদান তিন ফিফটিতে ৩৬২ রান। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ফিফটিটা পেলেন ফাইনালের মঞ্চে এসেই। ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের নেপথ্যে ছিল এই ব্যাটারের দারুণ এক সঙ্গ। ৪৭ রানে তিন উইকেট হারিয়ে যখন খাদের কিনারায় অস্ট্রেলিয়া, তখন সেই অজিদের স্বপ্নরক্ষাতেই ব্যাট হাতে ঢাল হয়ে ছিলেন লাবুশানে।
১১০ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেছেন। ৫২.৭৩ স্ট্রাইকরেটের এই ব্যাটিং আপাত দৃষ্টিতে সমালোচনা জাগানিয়া। এ যুগের ওয়ানডে ক্রিকেটে এসে এমন মন্থরতম ইনিংস দেখা যায় না বললেই। তবে ম্যাচ পরিস্থিতির বিবেচনায় লাবুশানের এই ইনিংসই অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ের পথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। হেডের সাথে তাঁর ১৯২ রানের জুটিই অস্ট্রেলিয়াকে পৌঁছে দিয়েছে জয়ের দ্বারপ্রান্তে।
অস্ট্রেলিয়ার উইনিং শট এসেছে ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট থেকে। আর ম্যাচ সেরা হয়েছেন হেড। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের কাব্যে হয়তো অনেকের কাছে আড়ালেই থাকবেন লাবুশানে। তবে লাবুশানের তৃপ্ততা তো, এ ভাবেই ফিরে আসার গল্পে।
বিশ্বকাপ দলে না থেকেও হয়ে গেলেন বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সারথি। এই তৃপ্ততা নিশ্চয়ই কম। জগতের সব ক্রিকেটাররা তো ঐ বিশ্বকাপ জয়ের দিকেই চোখ রাখেন, তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকেন সোনালি ট্রফি বিজয়ের উদ্ভাসে উদ্ভাসিত হওয়ার জন্য।