৩ সেঞ্চুরি, ৬ হাফসেঞ্চুরি। ৯৫.৬২ গড়ে রান ৭৬৫, ভারত বিশ্বকাপের যা সর্বোচ্চ। শুধু এই বিশ্বকাপেরই সর্বোচ্চ রানই নয়, এটি বিশ্বকাপ ইতিহাসেই এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও। এমন কীর্তির পরও বিরাট কোহলির বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়েছে ফাইনাল হারের তিক্ত স্মৃতি নিয়ে।
দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলা ভারত ফাইনালে উঠেছিল টানা ১০ ম্যাচ জিতে। কিন্তু আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আসল বাধাটাই পেরোতে পারেনি তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬ উইকেটে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায় ভারতের। দারুণ এক বিশ্বকাপের অপমৃত্যু ঘরে ফাইনালের মঞ্চে এসে। দেড় মাসের ক্রিকেট যজ্ঞে, ভারতের একমাত্র পরাজয়ের দিনটাই হলো ফাইনালের মঞ্চ।
দল হারলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন কোহলি। রবি শাস্ত্রী যখন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে কোহলির নাম ঘোষণা করছেন, তখন আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে কিছুটা সরব আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। তবুও কোহলি মঞ্চে এসেছিলেন শুকনো মুখে। শরীরী ভাষাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, কতটা হতাশ তিনি। যেখানে দলই বিশ্বকাপ জিততে পারেনি, সেখানে ব্যক্তিগত অর্জন তো মূল্যহীন, এমন কিছুই ফুটে উঠেছিল বিরাটের মুখভঙ্গিতে।
৭৬৫ রানের বিশ্বকাপ রেকর্ড। কোহলি এই পথে ভেঙেছেন ২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারের গড়া ৬৭৩ রানের কীর্তি। আর এই রেকর্ড ভাঙার পথেই আরও একটি রেকর্ড গড়েছেন কোহলি। সেটি বিশ্বকাপের এক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংসের রেকর্ড -৯টি।
ফাইনালসহ এই বিশ্বকাপে ভারত খেলেছে ১১ ম্যাচ, তার মধ্যে ৯ ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ্ব রান, যেখানে শতক আবার ৩টি। এর মধ্যে শেষটিতে টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলে গড়েছিলেন ৫০তম শতকের রেকর্ড। বিশ্বকাপ জিততে এর চেয়ে বেশি কিছু করা কি সম্ভব? কিন্তু বিরাটের জন্য দারুণ টুর্নামেন্টটার শেষটা হলো তিক্ততায়। বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনির কাছ থেকে টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কার নেওয়ার সময় কোহলির মুখেও তাই ভর করেছিল শত বিষণ্নতা।
বিরাটের ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ শূন্যতা নেই। ২০১১ বিশ্বকাপজয়ের দলটিতেও তিনি ছিলেন। তবে সময়টা বেবিফেসের এক কোহলির। টুর্নামেন্টের শুরুটা করেছিলেন সেঞ্চুরি দিয়ে। তবে এর পরে সেভাবে আর ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। তবুও বিশ্বজয়ের অংশ ছিলেন তিনি। এরপর পেরিয়ে যায় আর দুটো বিশ্বকাপ। কিন্তু বিশ্বকাপ এলেই যেন, বিরাটের ব্যাটের ঔজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করে। গোটা বছরের দুরন্ত ফর্ম বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে মিইয়ে যায় গড়পড়তা পারফরম্যান্সে।
বিরাট বিশ্বকাপে ব্যর্থ, এমন একটা দুর্নাম যখন তাঁর ঘাড়ে পড়তে যাচ্ছে, ঠিক তখনই তিনি বেছে নিয়েছিলেন ২০২৩ বিশ্বকাপে। সকল সমালোচনার উত্তর দিলেন। রেকর্ড গড়লেন, যেখানে তাঁকেই মানায়। কিন্তু যেটা মানায় না, সেটিও সঙ্গী হলো তাঁর সাথে। বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার ব্যথা নিয়ে নীরবে নি:শব্দে মাঠ প্রস্থান করার বিষণ্ন দৃশ্যে জড়িয়ে গেলেন কোহলি।
কোহলি সান্ত্বনা খুঁজতে চলে গিয়েছিলেন স্ত্রী আনুশকা শর্মার কাছে। আনুশকাও তাঁকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেছিলেন। তাতে হয়তো ভেঙে পড়া কোহলির কিছুটা উপশম হয়েছিল বটে। তবে ক্রিকেট আর্কাইভে, বিরাট কোহলির এমন পারফরম্যান্সের পরও বিশ্বকাপ হাতছাড়ার বেদনাদায়ক গল্প ঠাই পেয়ে গেছে ততক্ষণে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসের একটা অধ্যায়ের ট্র্যাজিক হিরো যে এই বিরাট কোহলিই। বিষ্ণয়, বিস্ময়কর রেকর্ডমানব নয়া রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তিনি।