ওয়ানডেতে শচীন টেন্ডুলকারের ৪৯ শতকের রেকর্ডকে একসময় চিরায়তই ভাবা হতো। তবে অনেকের ভাবনার মাঝে বাস করা সেই ‘অভঙ্গুর’ রেকর্ডটাই এখন অতীত। স্বয়ং শচীনকে গ্যালারিতে সাক্ষী রেখে ওয়ানডে ক্রিকেটে শতকের অর্ধশতক পূরণ করেছেন বিরাট কোহলি। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮০ টা শতক কোহলির।
ঘুরে ফিরে তাই পুরনো প্রশ্নই সামনে চলে আসছে। শচীনের শত সেঞ্চুরির রেকর্ডটা কি ভাঙতে পারবেন কোহলি? সম্প্রতি ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা কোহলির শত সেঞ্চুরির সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কোহলির বয়স কত? ৩৫। তাঁর এখনও ২০টি শতক দরকার। প্রতিবছরে ৪টি করে শতক করলে শচীনের সমান হবে। খুবই কঠিন কাজ। নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, কেউ পারবে না। যারা বলছে কোহলি শচীনের ১০০ শতকের রেকর্ড ভাঙবে, তারা ক্রিকেটের যুক্তিকে বিবেচনায় নেয় না। ২০ শতক এখনও অনেক দূরের পথ।’
বাস্তবতার নিরিখে অবশ্য কোহলির জন্য সেই রেকর্ড ছোঁয়া কিংবা ভাঙা, দুটিই বেশ কঠিন। আগামী তিন বছর এফটিপি অনুযায়ী, ভারত ওয়ানডে খেলবে ২৭টি, টেস্ট ৩২টি আর টি-টোয়েন্টি ৪৩টি। এর বাইরে ভারত খেলবে ২০২৪ ও ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
এ ছাড়া রয়েছে এশিয়া কাপের আসর। সব মিলিয়ে কোহলি ২০২৭ সাল পর্যন্ত যদি খেলেন, শতাধিক ম্যাচ পাবেন তিনি। তবে বাস্তবতা বলছে, কোহলির এখন যা বয়স, তিনি বেছে বেছে খেলতে পছন্দ করেন। অর্থাৎ আগামী ৩ বছরে ভারতের খেলা অনেক ম্যাচেই তাঁকে পাওয়া যাবে না।
এই যেমন বিশ্বকাপের পর কোহলি ছুটি কাটাচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও তিনি ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রামে রয়েছে। তাছাড়া গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর কোহলি ভারতের হয়ে এই ফরম্যাটে আর খেলেননি। সব মিলিয়ে নিশ্চিতভাবেই আগামী ৩ বছরে ৭০/৮০ টার বেশি ম্যাচ খেলার কথা না কোহলির।
আর সেই বাস্তবতার কারণেই শত সেঞ্চুরির রেকর্ড ছোঁয়া বিরাটের জন্য কঠিনই বটে। তবে চলতি বছরে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৩৪ ইনিংসে কোহলি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ৮ টি। অর্থাৎ প্রতি ৪.২৫ ইনিংসে একটি করে শতক পেয়েছেন তিনি।
এমন হিসেবে আগামী ৩ বছর নিজের ছন্দ টিকিয়ে রাখতে পারলে ২০ টা সেঞ্চুরি একেবারে অসম্ভব নয়। তবে, মাথায় রাখতে হবে, সময়ের ব্যবধানে কোহলিও ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নের পথে হাঁটবেন। আর তাতে ফর্মের চূড়ায় দেখতে চাওয়ার প্রত্যাশাটাও হবে অতিরঞ্জিত।
তাছাড়া, কোহলিকে এই রেকর্ড গড়তে হলে পাল্টাতে হবে পুরনো ইতিহাসও। কেননা, ৩৫ বছরের পর টেস্টে সবচেয়ে বেশি ১৪ টা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ইউনিস খানে। আর ওয়ানডেতে ৩৫ বছরের পর ১২ টা করে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন সনাথ জয়াসুরিয়া ও তিলকারত্নে দিলশান।
২০ সেঞ্চুরির পথে হাটতে হলে, কোহলিকেও তাই এমন কিছু করতে হবে। তাছাড়া শত সেঞ্চুরির মাইলফলক বিরাটের জন্য দূর আকাশের তাঁরা হয়েই রয়ে যাবে। অবশ্য মাঝের ৩ বছর সেঞ্চুরিহীন কোহলি যে এভাবে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ফিরে আসবেন, সেটাই বা ভেবেছিল কে! প্রত্যাবর্তন কিংবা ওয়ানডে সেঞ্চুরির গল্পে বিরাট কোহলি তাই শীর্ষদের কাতারেই থেকে যাবেন।