জাকির একাই টেনেছেন গোটা দলকে

সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসেই হতাশ করেছিলেন জাকির হাসান। ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসেও আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। অযথা এক আগ্রাসী শট খেলে আউট হয়েছিলেন তিনি। তবে প্রয়োজনের মুহূর্তে ঠিকই এগিয়ে এলেন জাকির। তার করা অর্ধশতকেই ম্যাচে টিকে থাকতে পেরেছে বাংলাদেশ।

ঢাকা টেস্ট ‘লো-স্কোরিং’ ম্যাচ হতে চলেছে, সেই ধারণা পাওয়া গেছে টেস্টের প্রথম দিনেই। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে সেদিন ১৫টি উইকেটের পতন হয়েছিল। শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটটা যেন ব্যাটারদের জন্যে স্রেফ এক ‘মৃত্যুকূপ’।

সেই উইকেটে দাঁড়িয়ে দলকে একাই টেনে নিয়ে গেলেন জাকির। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে টার্গেট দেওয়ার চাপ ছিল। বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল নিদেনপক্ষে ২০০ রানের আশেপাশের একটা লক্ষ্য ছুড়ে দেওয়ার। তবে সেই যাত্রায় বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার যেন তাসের ঘর।

বৃষ্টি আর আলোকস্বল্পতার বলি হয়েছে ঢাকা টেস্ট। তৃতীয় দিনের খেলার পুরোটা গড়ায়নি মাঠে, আলোর অভাবে। দ্বিতীয় দিন তো ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টির জলে। তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের ব্যাটিং দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল আট রানে পিছিয়ে থেকে। ধীরসুস্থে অন্তত তৃতীয় দিন পার করে দিতে পারত বাংলাদেশ। তবে তেমনটি হতে দেননি নিউজিল্যান্ডের বোলাররা।

বাংলাদেশের টপ অর্ডারের  দুইজন ব্যাটারকে ফিরিয়েছিল তারা। তবে জাকির ছিল অবিচল। চতুর্থ দিন শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই। মুমিনুল ইসলামকে নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেন জাকির হাসান। তবে আগের দিনের উইকেট পতনের ধারায় যেন বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটেনি।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট যেতে থাকে বাংলাদেশের। তাতে যেমন উইকেট কাজ করেছে প্রভাবক হিসেবে। তেমননি ব্যাটারদের সক্ষমতার অভাবেও উইকেটের ঘটেছে পতন। তবে বিচ্যুতি ঘটেনি জাকিরের। তিনি লড়াই করেছেন একাই। অনেকটা পথ হেটেছেন। ৫৭ রানে আউট হওয়ার সময় দলের লিড ছিল ১২০।

ওপেনিংয়ে নেমে তিনি একেবারে শেষ অবধিই খেলেছেন বলা চলে। ১৩৫ রানের লিড নিয়ে শেষ অবধি থেমেছে বাংলাদেশ দল। জাকির আউট হয়েছেন নবম ব্যাটার হিসেবে। মিরপুরের জটিল উইকেটে জাকিরের এই ইনিংসের মাহাত্ম্য অনেক।

এমন উইকেটে খাবি খেয়েছে বাঘা-বাঘা সব ব্যাটার। সেখানে দাঁড়িয়ে জাকির নিজের সামর্থ্যেরই প্রমাণ রেখেছেন। ধারাবাহিকভাবে ভাল করবার একটা প্রত্যাশা ছিল জাকিরের প্রতি। সেই প্রত্যাশা পূরণের পথেই যেন এগিয়ে যাচ্ছেন জাকির হাসান।

বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে সমস্যার শেষ নেই। বিশেষ করে তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি রেখা ধরে এগোতে থাকলে দুশ্চিন্তা বাড়ে। সেই দুশ্চিন্তার সমাধান হতেই যেন জাকির হাজির। এখন অবধি মাত্র ৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন জাকির। এরই মধ্যে ৩টি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন, আর অভিষেক ম্যাচেই করেছিলেন সেঞ্চুরি।

তাছাড়া মিরপুরের এমন বেগতিক উইকেটে দাঁড়িয়ে দলকে লম্বা পথে টেনে নিয়ে যাওয়াও চাট্টিখানি কথা নয়। জাকিরের ব্যাটিং প্রদর্শনই প্রমাণ করে তার সক্ষমতা। পাশাপাশি তার স্থায়িত্বের আগাম বার্তাও জানায়। যেকোন বৈরী পরিস্থিতিতে তার প্রতি আস্থা রাখতেও উদ্বুদ্ধ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link