রিয়াদের ‘ফোকাস’ ওয়ানডে ক্রিকেট!

ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগে সবাই তার ক্যারিয়ারের ইতি দেখে ফেলেছিল। বিশেষ করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন জায়গা পেলেন না এশিয়া কাপের দলে। চারিদিকে বিদায়ের সুর। তবে নিজের উপর পূর্ণ আস্থাই রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ফেরার একটা সুপ্ত বাসনা নিজের মধ্যে ধারণ করেই লড়াই চালিয়ে গেছেন।

এরপর তিনি ফিরেছেন প্রচণ্ড এক প্রতিবাদ হয়ে। তার না বলা কথাগুলো ঝড়েছে রান হয়ে। দল ডুবেছে হতাশার নোনা জলে। তবুও তিনি যেন খানিকটা শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ব্যাট হাতে। বিশ্বকাপে দলে একেবারে শেষ বেলায় তাকে যুক্ত করা হয়। আর সেই রিয়াদই দিন শেষে মান বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টাটাই করে গেছেন।

এই রিয়াদ অবশ্য নেই বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের ভাবনাতেও। বছর দেড়েক ধরেই তিনি নেই টি-টোয়েন্টি দলে। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার পারফরমেন্সে হয়ত বদলে যেতে পারে দলের পরিকল্পনা। বিশ্বকাপে দলের প্রয়োজন আর খেলার মেজাজ বুঝেই ব্যাটিং করেছেন রিয়াদ। সে বিবেচনায় অন্তত রিয়াদকে টি-টোয়েন্টি দলেও দেওয়া হতে পারে সুযোগ।

প্রত্যাশার ধারেকাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ দল। উল্টো অন্যতম বাজে পারফরমেন্সই উপহার দিয়েছে গোটা দল। সে সবের মাঝেও ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন রিয়াদ। এক সেঞ্চুরি ও এক হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান তিনিই করেছেন, ৩২৮।

তবে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে ইনজুরি আক্রান্ত হলে আবার রিয়াদ ছিটকে যান মাঠের বাইরে। আরও একবার ফেরার লড়াইটা শুরু তিনি করছেন বটে। তবে ইনজুরির কারণে খেলা হচ্ছে না তার নিউজিল্যান্ড সিরিজে। এরই মাঝে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে রিয়াদের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার নিয়ে। রিয়াদের পক্ষে স্বাভাবিকভাবেই অধিক জনমত।

রিয়াদ শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন সেই ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এরপর আর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে লাল সবুজদের প্রতিনিধিত্ব করেননি রিয়াদ। যেহেতু বছরের চাকা ঘুরতেই আরও একটি বিশ্বকাপ আসন্ন, তাই মাহমুদউল্লাহ দলে থাকবেন কি-না সে নিয়ে আলাপ হওয়া যুক্তিসংগত।

তবে টি-টোয়েন্টি-তে আদতে রিয়াদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি-না, এমন দ্বিমতও রয়েছে সর্বত্র। বাস্তবতা বিচারে রিয়াদের এখন যেকোন এক ফরম্যাটকেই বেছে নেওয়া উচিত। টেস্ট ক্রিকেট তিনি ছেড়েছেন বহু আগেই। বেশ অভিমান নিয়েই ছেড়েছেন। তবে এবার অন্তত তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে যেকোন একটি ফরম্যাট চালিয়ে যাওয়া উচিত।

সেটা অবশ্যই ওয়ানডে ফরম্যাট। সেখানে তিনি দলের জন্যে অবদান রাখতে পারবেন সর্বোচ্চটুকু। তাছাড়া ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অবধি খেলা চালিয়ে যেতে নিজেকে বিশ্রামে রাখা চাই তাকে। বয়স তো সত্যিই হয়েছে তার। ফিটনেস ধরে রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রামেই হয়ত ওয়ানডে ফরম্যাটে রিয়াদের সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার ঘটাতে পারবে।

আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে যুক্তরাষ্ট্য ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে রিয়াদের টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান খুব একটা আশাব্যাঞ্জক নয়। এই অঞ্চলে দশ ম্যাচে তিনি সর্বসাকুল্যে ১৪৪ ম্যাচ খেলেছেন। গড়টা ১৪ এর একটু বেশি। স্ট্রাইকরেট যুক্তরাষ্ট্র্যে খেলা দুই ম্যাচের কল্যাণে ১১০ এর ঘরে।

বর্তমান সময়ে টি-টোয়েন্টির চাহিদা নিশ্চয়ই এতটুকু নয়। এমনকি বাংলাদেশ দলেও নয়। ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটটা অনেকটাই তারুণ্য নির্ভর। এখানে অভিজ্ঞতার চাইতেও প্রয়োজন সঠিক সময়ে ক্লিক করা। রিয়াদের সেই গুণ রয়েছে বটে। তবে মারকুটে ব্যাটিংটা করতে গেলেও তার বেশ খানিকটা সময় প্রয়োজন ক্রিজে থিতু হওয়ার।

এসকল কারণে অন্তত রিয়াদের উচিত, ওয়ানডে ক্রিকেটেই নিজের লক্ষ্য স্থির করা। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য নিজেকে পূর্ণ উদ্দ্যমে প্রস্তুত করা। ঘরের মাঠে অবশ্য আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দশম আসরের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন রিয়াদ। সেখানেই হয়ত তিনি টি-টোয়েন্টি দলের জন্য এখনও উপযুক্ত সেই প্রমাণই করতে চাইবেন।

নিজেকে প্রমাণ করে রিয়াদ অবশ্য চাইলেই দুই ফরম্যাট চালিয়ে যেতে পারেন। তার মধ্যে যে এখনও বেশ খানিকটা ক্রিকেট রয়েছে বাকি, সে প্রমাণ তো মিলেছে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। নিজের শেষটুকু দিয়ে বাংলাদেশের প্রদীপের আলো জ্বালিয়ে যাবেন রিয়াদ, তেমনটাই হয়ত প্রত্যাশিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link