ভারতীয় ঝড়ের পাঁচ পদ

ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডে ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞাই প্রায় পাল্টে দিয়েছে। ওপেনিংয়ে বীরেন্দর শেবাগ থেকে রোহিত শর্মা, মিডল অর্ডারে যুবরাজ সিং থেকে বিরাট কোহলি – ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা দীর্ঘ সময় ধরে করেছেন ব্যাট করেছেন বেশ ঝড়ো গতিতে। সেই ঝড়ে কখনও সেঞ্চুরি হয়েছে, হয়েছে ডাবল সেঞ্চুরিও। এর কোনো কোনোটা তো রেকর্ডও করে ফেলেছে।

আমরা আজকে জেনে নেব এমন পাঁচজন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের গল্প যারা কিনা নিজ দেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড করেছেন। তো দেরী না করে শুরু করা যাক।

  • মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন (৬২ বল)

ভারতীয় ক্রিকেটে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের নাম উচ্চারিত হয় নানা কারণেই। সেই কারণের অনেকটা জুড়ে কালো অধ্যায় থাকলেও সুখকর স্মৃতিও কিন্তু কম নয়। এই যেমন বরোদায় নিউজিল্যান্ডের সাথে সেই ম্যাচটা। ম্যাচটাতে আজহারউদ্দীন এতটাই আক্রমণাত্মক ছিলেন যে মাত্র ৬২ বলেই করে ফেলেন সেঞ্চুরি।

১৯৮৮ সালের সেই সময়কার প্রেক্ষাপটে এই ইনিংস রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছিল। যাহোক, আজহারউদ্দীনের সেই ইনিংসের পর ভারত নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৮২ রান তাড়া করে ফেলে ৫ উইকেট হাতে রেখেই!

  • যুবরাজ সিং (৬১ বল)

স্টাইলিশ, এলিগেন্ট, এটাকিং- যুবরাজ সিংকে চেনে না এমন কে আছে! তবে ক্যালেন্ডারের পাতা রোল করে উল্টিয়ে যদি ২০০৮ সালে ফিরে যান আরেকবার চেনার সুযোগ কিন্তু থাকছেই। রাজকোটের সে ম্যাচে টসে হেরে ব্যাট করতে নামে ভারত।

ওপেনিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়া শেবাগ আর গম্ভীর করেন ১২৭ রান! তবে ইংল্যান্ডের ওপর তান্ডব তখনও শুরুই হয়নি, আর তা শুরু হয় যুবরাজ ক্রিজে এলে। ক্রিজে এসেই রীতিমত তান্ডব চালাতে শুরু করেন যুবরাজ, করেন ৭৮ বলে অপরাজিত ১৩৮ রান। আর এই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন মাত্র ৬১ বলে!

  • বিরাট কোহলি (৬১ বল)

নাগপুরের সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নামে শেন ওয়াটসনের ৯৪ বলে ১০২ রানের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া গড়ে ফেলে ৩৫০ রানের পাহাড়। প্রথম ইনিংস শেষে তাই ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে জয়ই দেখছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে নাগপুরে তা কি আর সহজে হতে দেবে ভারত? নাহ, দেয়নি।

ওপেনিংয়েই ভারত গড়ে ফেলে ১৭৮ রানের পার্টনারশিপ। এরপর ৩০ তম ওভারে ক্রিজে আসেন বিরাট কোহলি। এসেই অজি বোলারদের ওপর চড়াও হতে শুরু করেন, নিজের খেলা প্রথম তিন ওভারেই পাঁচ বাউন্ডারি হাকান তিনি। শেষমেশ তাঁর সেঞ্চুরির ল্যান্ডমার্ক ছোঁয় মাত্র ৬১ বলে। বলাই বাহুল্য, ভারতকে জিতিয়েই ফিরেছিলেন তিনি।

  • বীরেন্দ্র শেবাগ (৬০ বল)

কান টানলে মাথা আসে, ‘দ্রুততম’ টানলেও আসে ‘বীরেন্দ্র শেবাগ’। ভারতীয় ক্রিকেটের এই ওপেনারই তো বিশ্ববাসীকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে হয়, চড়াও হয়ে খেলা যায় দ্রুততম ইনিংস। তবে হ্যামিলটনের সেই ম্যাচটা যেন শেবাগকে একটু অন্যরকমভাবেই চিনিয়েছিল।

সে ম্যাচে ছিল বৃষ্টির বাঁধা, ম্যাচ কমে এসেছিল মাত্র ৪৭ ওভারে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ঐ ৪৭ ওভারেই গড়ে ২৭০ রানের পাহাড়। নিউজিল্যান্ডের ঐ কন্ডিশনে উপমহাদেশের জন্যে ব্যাট করা এমনিতেই কষ্ট, আর তাতে যদি থাকে বৃষ্টিবিঘ্নিত মেঘলা আবহাওয়া তাহলে তো কিউই পেসারদের পোয়াবারো।

তা এসবের পরোয়া শেবাগ কবে করেছেন? গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ২০১ রানের পার্টনারশিপ গড়লে আবারও মাঠে নামে বৃষ্টি। পরে তা আর না থামলে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ১০ উইকেটের জয় পায় ভারত। তবে, এই জয়ের পথেই শেবাগ তাঁর সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেছেন মাত্র ৬০ বলে।

  • বিরাট কোহলি (৫২ বল)

জয়পুরের ঘটনা সেটা। সাল ২০১৩ ! অস্ট্রেলিয়ার সাথে সেই ম্যাচও ছিল বেশ হাই-স্কোরিং। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে যথারীতি ধাওয়ান আর রোহিত গড়েন পাহাড়সম রানের জুটি। তবে নিজের ৯৫ রানের মাথায় ধাওয়ান আউট হয়ে গেলে ক্রিজে আসেন বিরাট কোহলি।

আর এসেই নিজের আভিজাত্য প্রকাশ করে উইকেটের চারপাশে রানের ফোয়ারা ছোটাতে থাকেন তিনি। সে ম্যাচে রোহিত শর্মাও খেলেন ১৪১ রানের ধ্রুপদী ইনিংস, তারপরও কোহলির ইনিংসটাই সবার চোখে লেগে থাকবে। তিনি যে সেঞ্চুরি করেছিলেন মাত্র ৫২ বলে। এখন পর্যন্ত এটাই ভারতীয় কোন ব্যাটসম্যানের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link