ক্রিকেট ক্যারিয়ার গোধূলিলগ্নে। তবুও জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সাকিব আল হাসান যেন এই সুযোগটাই কাজে লাগালেন। নামের পাশে ‘সাবেক ক্রিকেটার’ যুক্ত হওয়ার আগেই রাজনীতির মাঠে পা রাখলেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় সাংসদ হওয়ার দিকেও আপাতত চোখ রাখছেন টাইগার এ অলরাউন্ডার। সাকিব আল হাসান এখন ক্রিকেটারের পাশাপাশি রাজনীতিবিদও। প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন এ পরিচয়ের আগমনে গত ১৭ বছরের পরিচয় কি তবে বিলুপ্ত হওয়ার পথে? নাকি অলরাউন্ডার সাকিব যেভাবে সব সামলে ছুটে যান, এবারও ঠিক সেই ভাবেই ছুটে বেড়াবেন?
২০২৩ বিশ্বকাপেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের পর ইনজুরি, নির্বাচনী ব্যস্ততায় ক্রিকেট থেকে খানিকটা দূরে তিনি। অতি নাটকীয় কিছু না ঘটলে মাগুরা-১ আসন থেকে আসন্ন নির্বাচনে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তিনিই। বাংলাদেশ এতদিন ক্রিকেটার সাকিবকে দেখেছে। এবার দেখবে একজন সাংসদ হিসেবেও। জনপ্রতিনিধির এই ভারিক্কি, দায়ভার কিছু তো বর্তাবেই সাকিবের কাঁধে। প্রশ্নটা তাই অনুমেয়ই বটে, সাকিব ক্রিকেট আর রাজনীতিকে এক সূত্রে গাঁথতে পারবেন তো?
এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে মাশরাফির কথাই সবার আগে আসবে। ২০১৯ সালে নির্বাচন করেছেন। সে বছরই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছেন। এখন পর্যন্ত পেশাদার ক্রিকেট খেলেও যাচ্ছেন। কিন্তু মূল বাস্তবতাটা হলো, এমপি হওয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাশরাফি ছিলেন ‘না থাকার’ মতোই। বিশ্বকাপ শেষের পর একটি মাত্রই সিরিজ খেলেছেন। এরপরই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে অঘোষিত বিদায় হয়ে গেছে সাবেক অধিনায়কের।
মাশরাফি এখন পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন। বিপিএলে অধিনায়কত্ব করছেন। খেলছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, দুটোই একটি অপরটির চেয়ে বেশ আলাদা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম করার চাপ যতটা মাশরাফিকে সইতে হয়েছে, তার সামান্য অংশও অনুভূত হয়নি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সময়ে। সাকিবের ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটা একই রকম। সাকিবের মতো ক্রিকেটারের ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যেতে না আছে বাঁধা, কিংবা না আছে কোনো প্রতিবন্ধকতা।
কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই হোম ও অ্যাওয়ে কন্ডিশনে দৌড়াদৌড়ি, আইসিসির টুর্নামেন্ট, এশিয়া কাপ। সব মিলিয়ে ব্যস্ততাটা অনেক। চলতি বছরের কথাটাই ধরা যাক। এই এক বছরেই ১৪ টা টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। তা ছাড়া বছরের মাঝামাঝি সময়ে আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। আর এ বছরেই এমপি হিসেবে রাজনীতির ময়দানে অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে সাকিবের।
সাংসদ হওয়ার পর মাশরাফিকে খুব সামান্যই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে নিয়ে ভাবতে হয়েছে। তবে বিসিবির ভাষ্যমতে, এখনও বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব। আর এখানেই মূলত প্রশ্নের উদয়। ক্যারিয়ারের গোধুলী লগ্নে থাকলেও, বাংলাদেশ দলে সাকিবের অপরিহার্যতা রয়েছে। জাতীয় দলের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় হয়তো সাকিব থাকবেন না। তবে আগামী দুই বছরে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। আর সেই সব আসরে বাংলাদেশের অন্যতম সারথি হওয়ার পথেই থাকছেন সাকিব। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যস্ততায় বাইশ গজে সাকিব নিজের কতটা দিতে পারবেন সেটিই এখন প্রশ্নের বিষয়।
সাকিব অবশ্য সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক জীবন নিয়ে যতটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলেছেন, ঠিক ততটাই ক্রিকেট নিয়ে তাঁর সামনের ভাবনার কথা জানিয়েছেন। তাতে সাকিবের চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসী আবহই ফুটে উঠেছে। কিন্তু সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের স্থায়ীত্ব নিয়ে একটা শঙ্কা দিনশেষে থাকছেই। এখন দেখার পালা, জনমনে উদিত এই সব শঙ্কা দূর করে সাকিব বাইশ গজে আবারো সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারেন কিনা।