জীবনের বাঁকবদল বুঝি একেই বলে। একটা স্টিয়ারিং হুইলের চাকা ঘুরিয়ে যে হাত রুটি-রুজির যোগাড় করতো সেই হাতেই আজ তিনি বাইশ গড়ে গড়ছেন রেকর্ড। বলা হচ্ছে ট্যাক্সি চালক থেকে ক্রিকেটার বনে যাওয়া আমির জামালের কথা। অস্ট্রেলিয়া সফরে পাকিস্তানের ভরাডুবিতে যিনি ছিলেন একমাত্র সাফল্যের সারথি।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই পেশাদার ক্রিকেটের পথে এসেছিলেন এ পেসার। ২০১৪ সালে খেলেন পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও। কিন্তু এরপর চার বছরেও প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলতে পারেননি তিনি।
অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলার সুযোগও হাতছাড়া হয় তাঁর। তবুও আশা ছাড়েননি তিনি। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতেই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ট্যাক্সি চালিয়েছেন। তবুও ক্রিকেট অনুশীলন ছাড়েননি। সংগ্রামের সে সময় পেরিয়ে আমির জামাল এখন ‘টক অব দ্য টাউন’৷
পার্থে প্রথম ইনিংসে পেয়েছিলেন ৬ উইকেট। মেলবোর্নে দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ৫ উইকেট। এরপর সিডনিতে এক ইনিংসে ৬ উইকেটসহ দুই ইনিংস মিলে ৭ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৩ ম্যাচে ১৮ উইকেট। স্বপ্নের অভিষেক যাকে বলে, আমির জামাল সেটিই করেছেন। ছুঁয়েছেন কিংবদন্তি ইমরান খানের রেকর্ড।
১৯৮৩ সালে ফয়সালাবাদ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ইমরান। ৪০ বছর পর তাঁর সেই কীর্তির একাকিত্ব কাটালেন আমির জামাল। সিডনি টেস্টে ইমরান খানের মতোই নিলেন ৬ উইকেট।
শুধু তাই নয়, প্রথম ইনিংসে ৯৭ বলে ৮২ রানের কার্যকর এক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ন্যূনতম ৮০ রান ও ৬ উইকেটের কীর্তি শুধু এখন দুইজনেরই। একজন ইমরান খান, অন্যজন এই আমির জামাল।
এখানেই শেষ নয়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফরকারী দলের কোনো খেলোয়াড়ের এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে আমির জামাল বসেছেন কিংবদন্তিদের পাশে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এর আগে শুধু দুজন খেলোয়াড় কমপক্ষে ১২৫ রানের পাশাপাশি কমপক্ষে ১৫টি উইকেট নিতে পেরেছেন। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম এবং পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরামের পর এই কীর্তিতে নাম লেখালেন আমির জামাল।
এই সিরিজে ১৮ উইকেট নিয়ে প্যাট কামিন্সের সঙ্গে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির জায়গাটা ভাগাভাগি করেছেন জামাল। এর পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ১২৫ রান।
অজি দূর্গে শূন্য হাতেই ফিরছে পাকিস্তান। তবে এই শূন্যতার মাঝেও প্রাপ্তি হলো আমির জামাল। যাকে ঘিরে পাকিস্তান এক নতুন স্বপ্নে বিভোর হতেই পারে। ট্যাক্সিচালক থেকে ক্রিকেটার হয়ে ওঠা আমিরও নিশ্চয়ই অল্পেই থামতে চাইবেন না।