মিরপুরে মাইক বাজিয়ে ডাকা হচ্ছে টিকেট প্রত্যাশিদের। এমন দৃশ্য সম্ভবত কল্পনাতীত। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আয়োজন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। এমন এক ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টে দর্শকদের বাড়ি থেকে ডেকে আনতে হয়?
উত্তর অজানাই থাক। তবে এবারের বিপিএল শুরু হওয়ার আগে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের ভারে চাপা পড়েছে বিপিএলের দশম আসরের সকল উন্মাদনা। বিপিএল গভর্নিং কমিটি টুর্নামেন্টের যথেষ্ট প্রচারণা চালাতে না পারার পেছনে সেই কারণকেই ব্যবহার করেছে ঢাল হিসেবে।
তবুও সকল নেতিবাচকতাকে পেছনে ফেলে ১৯ জানুয়ারি মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দশম আসর। প্রথম দিনেই থাকছে দুইটি ম্যাচ। শুক্রবার প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে গেল বারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও নবাগত দুর্দান্ত ঢাকা। বেলা ২:৩০ টায় সে ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে প্রায় দুই মাসের ক্রিকেটীয় যাত্রা।
সন্ধ্যার ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের প্রতিপক্ষে গত আসরের রানার্সআপ দল সিলেট স্ট্রাইকার্স। সন্ধ্যা ৭:৩০ এ শুরু হবে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচ। তবে এই সূচি স্রেফ প্রথম দিনের। এছাড়া কর্মদিবসে দিনের প্রথম ম্যাচটি শুরু হবে বেলা ১:৩০ মিনিটে, দ্বিতীয় ম্যাচ শুরুর নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৬:৩০। শুক্রবারে আধা ঘন্টা করে পিছিয়ে যাবে সময়।
এবার তবে একটু শক্তিমত্তার বিচারে ফেরা যাক। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম দল। চারটি শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলেছে কুমিল্লা। ‘উইন অর উইন’ স্লোগান নিয়ে আরও একটি শিরোপার মিশন শুরু করবে কুমিল্লা, তেমনটিই প্রত্যাশিত।
দলে দেশীয় তারকার খেলোয়াড়দের কমতি নেই। প্রত্যেকেই আবার পরীক্ষিত পারফরমার। তবে বিদেশি খেলোয়াড়দের নিয়ে একটু বিপাকেই পড়তে হচ্ছে লিটন কুমার দাসের দলকে। পাকিস্তানের খুশদীল শাহ ও ক্যারিবিয়ান ম্যাথু ফরডে ছাড়া এই মুহূর্তে দলের সাথে নেই কেউ। যদিও সময় গড়ানোর সাথে সাথে বেশ ভারী ভারী নাম যুক্ত হবে কুমিল্লার সাথে।
অন্যদিকে দুর্দান্ত ঢাকা কাগজে কলমে খুব একটা শক্তিশালী নয়। পরীক্ষিত কিংবা বৈশ্বিক ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের নিয়মিত মুখ, এমন কোন খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ায়নি ঢাকা। তারা বরং দলের রসায়নের কথা মাথায় রেখে, সর্বাধিক সময় ধরে দলকে সাহায্য করবে- তেমন খেলোয়াড়দের নিয়েই দল গঠন করেছে ।
ঢাকাকে নেতৃত্ব দেবেন মোসাদ্দেক হোসেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে বেশ সাফল্যও রয়েছে মোসাদ্দেকের। তার ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তাসকিন আহমেদ। অন্যদিকে কুমিল্লার নেতৃত্বে এসেছে পরিবর্তন। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে লিটন কুমার দাসকে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কের দায়িত্ব। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কুমিল্লার এগিয়ে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে মাত দিতে পারে সিলেট স্ট্রাইকার্স। দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। বেশ কিছু ইউটিলিটি ক্রিকেটার রয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন দলে। বেনি হাওয়েল, বেন কাটিংদের মত খেলোয়াড়রা সিলেট স্কোয়াডের শোভা বাড়াচ্ছে। তাছাড়া শান্ত, জাকিররা তো রয়েছেনই।
চট্টগ্রামও যে একেবারেই ফেলনা তেমনটি ভাবার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। তাড়াও বেশ গোছালো ভাবেই খেলতে নামবে শুক্রবারের দ্বিতীয় ম্যাচে। ‘বর্ন টু উইন’ স্লোগানের মশাল হাতে দলকে পথ দেখাবেন শুভাগত হোম। টুর্নামেন্ট শুরুর একদিন আগেই ঘটা করে ফিল সল্টের অন্তর্ভুক্তির কথা জানিয়েছে দলটি। যদিও এখনই এই ইংলিশ ব্যাটার যোগ দিচ্ছেন না চট্টগ্রামের শিবিরে।
তবে বিদেশিদের মধ্যে কার্টিস ক্যাম্ফার, স্টিফ্যান এসকিনাজি, মোহাম্মদ হারিসরা ইতোমধ্যেই যুক্ত হয়েছেন দলের সাথে। প্রথম ম্যাচের একাদশেও জায়গা প্রায় সুনিশ্চিত। তাছাড়া দেশীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে তারুণ্য ও অভিজ্ঞদের মিশেল ঘটাতে পেরেছে চট্টগ্রাম।
সামগ্রিক চিত্র বলছে প্রতিটা দলই সমীহ আদায় করে নেওয়ার মত। জম্পেশ দুই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই পর্দা উঠতে যাচ্ছে এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের। সেই সাথে ব্রডকাস্টিংয়েও ভিন্নতার আভাস মিলছে। অন্তত এই দুইয়ের মিশেল ঘটাতে পারলেই, দর্শকদের আর মাইক বাজিয়ে জানান দিতে হবে না।