প্রথম ছক্কাটা লং অন সীমানা দিয়ে উড়ে গেল। এরপরের ছক্কাটার যাত্রাপথ ডিপ কাভার অঞ্চল। তারপরের বলটা স্কোয়ার লেগ দিয়ে আছড়ে পড়ল মাঠের বাইরে। সেখানেই শেষ নয়। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের সেই এক ওভারে আরও দুইটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ডেভিড মিলার। চতুর্থ আর পঞ্চম ছক্কাগুলোও তিনি আদায় করে নেন স্কোয়ার অব দ্য উইকেট অঞ্চল দিয়েই।
সেদিনটা নিশ্চিতরুপেই ভুলে যেতে পারেননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অমন বেদম প্রহার চাইলেও নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়া যায় না। সেই ডেভিড মিলার আর সাইফউদ্দিন এখন সতীর্থ। ফরচুন বরিশালের হয়ে প্লে-অফের ম্যাচ খেলতে ঢাকায় পৌঁছেছেন ‘কিলার মিলার’। দলের সাথে সকাল সকাল অনুশীলনেও হাজির হয়েছিলেন তিনি।
যাত্রাপথে বাসে বসে সাইফউদ্দিনের সাথে ২০১৭ সালের সেই ওভারটি নিয়েও খুনসুটি করেছেন মিলার। ‘ইয়েস অন দ্য বাস বলে’ তেমনটাই জানিয়েছেন মিলার। বেশ খোশমেজাজেই ছিলেন তিনি। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল বেলা তিনি নেমেছেন ঢাকায়। চোখে-মুখে ক্লান্তি ছাপিয়ে, খানিকটা বিস্ময়ের ছাপ। বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের ভীরও নিজের ক্যামেরাবন্দী করেছেন।
তিনিই যে আজকের দিনে আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলতে আসা ভিনদেশী তারকারদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল তিনি। তাইতো তাকে ঘিরে আগ্রহের শেষ নেই। দল সংশ্লিষ্ট সকলেই তার সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে নিজের অনুশীলনের ফাঁকে সবার ছবির আবদারও মিটিয়েছেন তিনি।
এমনকি সদ্য অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা জিসান আলমও মিলারের সাথে ফ্রেমবন্দী হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। শেষ অবধি সাইফউদ্দিনও ছবি তুলে রাখলেন। তাতেও মিলার মনে করিয়ে দিলেন সেই পাঁচটি ছক্কার কথা। কিন্তু এবার যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে হবে জয়ের জন্য। তাইতো অনুশীলনে কোন গাফিলতি করেননি মিলার কিংবা সাইফউদ্দিন।
মিলারের শরীরে অবসাদ অনুভূত হচ্ছিল নিশ্চয়ই। তাইতো তিনি হালকা স্ট্রেচিং করে নেমে পড়েন নেট অনুশীলনে। নেটেও আহামরী বড় শট খেলার চেষ্টা করেননি। স্রেফ বল-ব্যাট আর চোখের সমন্বয়টা পরখ করে নিয়েছেন। তাছাড়া মিরপুরের উইকেট স্পিন সহায়ক, তাইতো নেট অনুশীলনে স্পিনারদের বিপক্ষেই প্রস্তুতি সেরেছেন মিলার
তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে রাজ্যের প্রত্যাশা। প্লে-অফ পর্বের প্রথম এলিমিনেটরে মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশাল ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এই ম্যাচে পরাজিত দলের বিপিএল যাত্রার ঘটবে সমাপ্তি। সেদিক থেকে মিলার স্রেফ একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন- সে সম্ভাবনা পঞ্চাশ শতাংশ।
একটিমাত্র ম্যাচে মিলারের কাছে ঠিক যা প্রত্যাশিত তা তিনি কতটুকু ডেলিভার করতে পারবেন- সে সংশয় থেকে যায়। তাছাড়া সাম্প্রতিক ফর্মও খুব একটা মিলারের পক্ষে কথা বলছে না। এস এ টি-টোয়েন্টিতে মাত্র একটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন তিনি। তাছাড়া শেষ পাঁচ ইনিংসে একটি ইনিংসই খানিকটা বড় করতে পেরেছেন।
সুতরাং যতটা আশা নিয়ে মিলারকে দলে ভিড়িয়েছেন বরিশাল, তা পূরণ হওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়। সেদিক থেকে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে মিরপুরের উইকেটও। সংবাদকর্মীদের সংখ্যার মতই তাও বিস্ময়ের কারণ হতে পারে ডেভিড মিলারের জন্য।
তবে মিলাররা চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। তারা সমস্ত পরিবেশ নিজেদের পক্ষে করে নেন। নিজেদেরকে মানিয়ে নেন কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতিতে। তেমন একটি দিনই পার করবেন মিলার বরিশালের জার্সি গায়ে। সাধারণ দর্শকও নিশ্চয়ই তেমন প্রত্যাশা নিয়েই অপেক্ষমান।