নাগিন নাচ থেকে শুরু, গড়িয়েছে টাইমড আউট পর্যন্ত। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার লড়াইয়ে আসলে মূল খেলার চেয়ে বিতর্কই বেশি আলোচনার রসদ জোগায়।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই দ্বৈরথের সূচনা খুব বেশিদিন আগের নয়। হওয়ার সুযোগও ছিল না, সেই ১৯৮৬ সাল থেকে দু’দল মুখোমুখি হলেও বড় একটা সময় লড়াইগুলো হয়েছে এক তরফা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেকোনো ফরম্যাটে বাংলাদেশ প্রথম জয় পায় ২০০৬ সালে এসে, বগুড়ায় জেতে ওয়ানডে ম্যাচ। সাকিব আল হাসানের হাত ধরে।
আর এই লড়াইটা দ্বৈরথে রূপ নেয় আরও অনেক সময় বাদে, ২০১৮ সালে এসে। শ্রীলঙ্কায় সেবার অনুষ্ঠিত হয় নিদাহাস ট্রফি। লঙ্কান স্বাধীনতার বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত টুর্নামেন্ট।
স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড করে জয় এসেছিল রান তাড়া। তবে দুর্দান্ত সেই ব্যাটিংয়ের সাথে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল মুশফিকুর রহিমের উদযাপন, মাথার উপরে হাত তুলে সাপের মত ফণা তুলে অঙ্গভঙ্গিটি সবার কাছে ‘নাগিন নৃত্য’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়ে যায়।
ধারাভাষ্য বসে সুনীল গাভাস্কার নিজেও এমন অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন সেই সময়। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজে যেদিন বাংলাদেশের ফাইনাল নিশ্চিত হয় সেই একই শ্রীলঙ্কাকে শেষ ওভারে হারিয়ে – তখনও সেই একই দৃশ্য। যদিও, বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু আবিষ্কৃত এই উদযাপনটির সমালোচকেরও অভাব ছিল না।
আর ওই নিদাহাস ট্রফি থেকেই বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ম্যাচ হয়ে ওঠে উত্তাপ ছড়ানো এক লড়াই। আসরের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ ও ভারত। ১৬ মার্চের ম্যাচটি ছিল ফাইনালিস্ট নির্ধারণের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেদিন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়ে ম্যাচের শেষের দিকে রীতিমত খেলোয়াড়দের তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব।
যদিও আম্পায়ারের সাথে মধ্যস্থতায় কিছুক্ষণ পর আবারও খেলা শুরু হয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবিস্মরণীয় এক ছক্কায় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের ফাইনাল। পুরো শ্রীলঙ্কাকে স্তব্ধ করে মাঠেই উদযাপিত হয় নাগিন নৃত্য।
এরপর থেকে দু’দলের লড়াই মানেই এই নাগিন নাচের উপস্থিতি ছিল অবধারিত। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপের ম্যাচ জিতে লঙ্কান ক্রিকেটাররা নাগিন উদযাপন করেন। আর এসবের প্রভাব পড়ে মাঠের খেলায়।
শারজাহতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় লিটন দাস ও লঙ্কান পেসার লাহিরু কুমারার। তবে, এই দ্বৈরথকে ঐতিহাসিক মর্যাদা দেয় ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের একটি ম্যাচ। জিতলে নিশ্চিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জায়গা – এমন সমীকরণ ছিল দু’দলের সামনেই।
সেখানেই নাগিন ডার্বির সাপুড়ে হয়ে যেন হাজির হলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের ম্যাচে ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ‘টাইমড আউট’-এর শিকার হন ম্যাথুস। হেলমেটের ছেড়া স্ট্রাপ ছিড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের পরে গিয়ে ব্যাট করার জন্য প্রস্তুত হন তিনি।
সেদিন ম্যাচে বাংলাদেশ জিতে খুব সহজেই। যদিও জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মূখ্য ছিল টাইমড আউটের ঘটনা। সাকিব পরে আউট হন ম্যাথুসেরই বলে। ম্যাথুস ঘড়ি দেখিয়ে উদযাপন করেন, যদিও ম্যাচের ফলাফল তখন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব ও বাংলাদেশের ক্রিকেট স্পিরিট নিয়ে প্রশ্নও তোলেন।
নাগিন ডার্বি সম্ভবত সেদিন থেকেই হয়ে ওঠে টাইমড আউট ডার্বি। তাই তো শরিফুল উইকেট পেয়েই উদযাপন করেন ঘড়ি দেখিয়ে, কিংবা বোল্ড আউট হয়ে তাওহীদ হৃদয় তেড়ে যান লঙ্কান ফিল্ডারদের জটলার দিকে।
এই সবই আসলে দ্বৈরথেরই নানা অধ্যায় হয়ে রয়ে যায়। আর তাঁর চূড়ান্ত রূপায়ন তখনই হয় যখন সিরিজ জিতে আত্মহারা লঙ্কানদের উদযাপনের সঙ্গীও হয় টাইমড আউট!