কি বিস্ময় লুকিয়ে আছে এই মেরুন জ্যাকেটে!

I am brave, I am bruisedI am who I’m meant to be, this is me

ইংরেজি এই গানের লাইনগুলোর সাথে জড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। আপনি হয়ত এই গানটি শোনেননি কিংবা হয়ত শুনেছেন। কৌতুহল নিশ্চয়ই জাগছে যে, ঠিক এই গানের সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কি সম্পর্ক? একটু ধৈর্য্য ধরুণ। গল্পের একেবারে শুরু থেকেই শুরু করি।

বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেট অনেক বেশি কঠিন। শ্বাস নেওয়ারও যেন সময় নেই এখানটায়। প্রতি নিয়ত প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে সকল খেলোয়াড়দের। বিনোদনের জন্যেও সময় মেলে অল্পই। নিজেকে প্রস্তুত করতেই যে হাতে থাকা সময়টুকু করতে হয় ব্যয়।

খেলোয়াড়রা তাই হারিয়ে ফেলেন মনোবল। নিজেদেরকে উজ্জীবিত করতে হয়ে পড়েন ব্যর্থ। মানসিক অবসাদের কারণে ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঘটনাও তো ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে অনেকগুলো। ঠিক সে কারণে দলে থাকা খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে নিত্য-নতুন পন্থা খুঁজতে হচ্ছে দলগুলো।

সেরা খেলোয়াড়, সেরা ফিল্ডারদের দলগতভাবে পুরষ্কৃত করবার একটা দারুণ রীতির প্রচলন ঘটেছে। সে রীতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ দলেও চালু হয়েছে ‘মেরুন জ্যাকেট’। নির্দিষ্ট দিনে দল হোক পরাজিত কিংবা জয়ী, একজন খেলোয়াড়ের গায়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় সেই মেরুন জ্যাকেট।

ছোট্ট একটা মুহূর্তে দারুণ কিছু করে ফেলা, ম্যাচের মোমেন্টামকে পালটে দেওয়া- এসব বিবেচনায় পুরষ্কৃত করা হয় কোন এক খেলোয়াড়কে। বিশ্বকাপে টাইগারদের ড্রেসিংরুমে চালু হয় সেই ধারা। প্রথমবার সেই জ্যাকেটটি পেয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর থেকে সে রীতি চলমান।

কিন্তু আবারও নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে- শুরুর সেই গানের লাইনগুলো কি করে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে? এবার তবে বলা যাক সেই গল্প। হেডকোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহেই প্রথম এই মেরুন জ্যাকেটের প্রচলন শুরু করেন। তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন হলিউডের এক সিনেমার বিখ্যাত গানের পেছনে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে।

‘The Greatest Showman’ নামক সিনেমার বেশ প্রসিদ্ধ একটি গান, ‘This is Me’। সেই গানের প্রধান গায়িকা ছিলেন কিয়েলা সেটেল। চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, সেটিই ছিল তার গাওয়া প্রথম গান। তো সেই গানের যেদিন রিহার্সেল অনুষ্ঠিত হয়, সেদিন তিনি বেজায় স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন। অনুশীলনের শুরুর দিকে তার গায়িকি-তে নার্ভাসনেস ছিল স্পষ্ট।

তবে সেই রিহার্সেলে উপস্থিত থাকা একজনের গায়ে ছিল মেরুন রঙের জ্যাকেট। তিনি এক লহমায় সেই পরিস্থিতি বদলে দেন। এরপর থেকেই বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে গাইতে থাকেন কিয়েলা। পাশাপাশি কোরাসে থাকা সংগিত শিল্পী ও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে থাকা প্রত্যেকেই নতুন উদ্দ্যম খুঁজে পান।

ঠিক সে দৃশ্যটাই বিমোহিত করেছিল বাংলাদেশের হেডকোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে-কে। তিনি সেই রিহার্সেলে থাকা গ্রুপের মাঝে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাদৃশ্য খুঁজে পান। সবাই ভীষণ স্নায়ুচাপে আক্রান্ত। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে একজনের একটুখানি আত্মবিশ্বাসী পদক্ষেপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা রুমে। সেখান থেকেই সৃষ্টি হয় দারুণ একটি গান।

বাংলাদেশ দলের ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সেই সব আত্মবিশ্বাসী পারফমেন্সের পুরষ্কার হিসেবে, এরপর থেকেই দেওয়া হতে থাকে মেরুন জ্যাকেট। এখন অবধি বহু খেলোয়াড় সেই জ্যাকেট জিতেছেন। ঠিক এভাবেই ‘This is Me’ গানের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link