বাংলাদেশিরা নাকি ছক্কা হাঁকাতে জানে না!

বাংলাদেশী ব্যাটাররা ছক্কা হাঁকাতে পারেনা। এই দায় বয়ে বেড়াতে হয় প্রতিনিয়ত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেনরা সেই ধারা বদলে দেওয়ার মিশনে যেন নেমেছেন। পাল্লা দিয়ে নতুন সব রেকর্ড গড়ছেন। হ্যাঁ, এই দুইজনই রয়েছেন এক ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বাধিক ছক্কা হাঁকানোর তালিকায়।

চলুন দেখে নেওয়া যাক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের এক ইনিংসে সর্বাধিক ছক্কা হাঁকিয়েছেন বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাটার। আর সেই ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের পরিণতিই বা কি হয়েছিল।

  • নাজিমউদ্দিন (২০০৭)

২০০৭ সালে কেনিয়াতে হওয়া চারজাতি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই টুর্নামেন্টের চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ দল। প্রথমে ব্যাট করে ১৯২ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় পাকিস্তান।

রান তাড়া করতে নাজিমউদ্দিন নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে। ৫০ বলে ৮১ রানের একটা দারুণ ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন তিনি। ১৬২ স্ট্রাইকরেটের সেই ইনিংসে ৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন নাজিমুদ্দিন। যদিও শেষ অবধি বাংলাদেশকে হারতে হয়েছিল ৩০ রানের ব্যবধানে।

  • জিয়াউর রহমান (২০১২)

২০১২ সালে বেশকিছু টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে ইউরোপ গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই দলের অংশ ছিলেন জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের পেস বোলিং অলরাউন্ডার দুঃখ ঘোচাবেন তিনি, একটা সময় ছিল সেই আকাঙ্ক্ষা। বেলফাস্টে হওয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সে আশার পালেই দিয়েছিলেন হাওয়া।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ১৯০ রানে। যার কৃতীত্ব জিয়াউরের প্রাপ্য। কেননা শেষের দিকে ২৩৫ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে ১৭ বলে ৪০ রান তোলেন জিয়া। সেই ইনিংসে তিনিও পাঁচটি ছক্কা হাঁকান, টাইগারদের জার্সি গায়ে। সেই ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৭১ রানের ব্যবধানে।

  • তামিম ইকবাল (২০১৬)

বাংলাদেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি মাত্র শতক হাঁকানোর রেকর্ড রয়েছে। সে রেকর্ডের মালিক তামিম ইকবাল খান। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে তিনি ১০৩ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস খেলেছিলেন। মাত্র ৬৩ বল খরচ করা সেই ইনিংসে তিনি হাঁকিয়েছিলেন পাঁচটি সুবিশাল ছক্কা।

সেই ম্যাচটিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৃষ্টি। তবুও তা এড়াতে পারেনি ওমানের পরাজয়। বৃষ্টি আইনে ৫৪ রানের পরাজিত হয় ওমান। তামিমের ওই একটি ইনিংসই ওমানের খেলোয়াড়দের মনোবল করে দিয়েছিল চূর্ণ-বিচূর্ণ।

  • জাকের আলী অনিক (২০২৪)

২০২৪ সালের আগে এক ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটারদের হাঁকানো ছক্কার সংখ্যা ছিল পাঁচটি করে। প্রায় ১৭ বছর ধরে চলা ধারার পরিবর্তন করেন জাকের আলি অনিক। ডানহাতি এই ব্যাটার মূল দলের হয়ে নিজের প্রথম ম্যাচেই করেছেন বাজিমাত। দলকে জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন বটে, তবে শেষ অবধি হারতে হয়েছিল তিন রানের ব্যবধানে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২০৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। সে ম্যাচে ২০০ স্ট্রাইকরেটের এক দারুণ ইনিংস খেলেন জাকের। ৩৪ বলে ৬৮ রানের সেই ইনিংসটিতে ছিল সর্বোচ্চ ছয়টি ছক্কা। যা কি-না সেই ম্যাচ অবধি ছিল বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছক্কার মার। তবে তা স্থায়ী হয়েছিল মাত্র পাঁচদিন।

  • রিশাদ হোসেন (২০২৪)

মাত্র পাঁচদিনের মাথায় জাকের আলি অনিকের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড নিজের করে নেন রিশাদ হোসেন। নিশ্চিত পরাজয়ের ম্যাচে তিনি একাই যেন লড়ে গেছেন বাংলাদেশের হয়ে। ১৭৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটের এক দারুণ ইনিংস উপহার দেন তিনি। ১৭৬ লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে থাকা বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায় ২৮ রানের ব্যবধানে।

টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় রিশাদের ইনিংসটি স্রেফ মান বাঁচানোর ইনিংস হয়ে রয়। ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটিতে, রিশাদের ব্যাট থেকে আসে সাতটি বিশাল ছক্কার মার। তিনি যেন ব্যাট হাতে নিজেকে প্রমাণের দারুণ এক মঞ্চ হিসেবেই বেছে নেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা সিরিজের শেষ ম্যাচটিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link