তীরে এসে তরী ডোবার সে কি যন্ত্রনা – ওটা তাঁর চেয়ে ভাল কেই বা জানে! বিশ্বকাপ জিততে পারেননি অল্পের জন্য। তবে, দেশকে ফাইনালে নিয়েই বা জেতে পারেন ক’জন। সর্বশেষ ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনাল ভারত খেলেছে ২০১১ সালে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ২০১৪ সালে।
রোহিত শর্মার কীর্তিকে তাই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আজও তিন ফরম্যাটে ভারতের স্বীকৃত অধিনায়ক তিনি। কিন্তু, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট তো আর এত কিছুর ধার ধারে না। তাই তো এখানে সেদিনের ছোকড়া হার্দিক পান্ডিয়া অধিনায়ক বনে যান মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের। রোহিতের পাঁচ বারের শিরোপা জয়ের ইতিহাস মিথ্যা হয়ে যায় একটি সিদ্ধান্তে।
আর অধিনায়কের কাজই তো ছড়ি ঘোরানো। সেটা তো হার্দিক করবেনই। তাই তো নিয়মিত ৩০ গজের ভেতরে ফিল্ডিং করতে অভ্যস্ত রোহিত থমকে গিয়েছিলেন মুহূর্তের জন্য। ওই প্রান্ত থেকে হার্দিক পান্ডিয়া ইশারায় কি যেন বলছেন।
‘আমাকে বলছো?’ – খানিক বিব্রত রোহিত সম্ভবত সেটাই বোঝাচ্ছিলেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বিপুল বিক্রমী চাপের মুখে দাঁড়িয়ে হার্দিকেরও ওসব শোনার বা বোঝার সময় কোথায়। হার্দিক তখন ফিল্ডিং সেট করতে ব্যস্ত।
রোহিতকে ইশারায় বোঝালেন, ‘আরও পেছনে যেতে হবে, একদম বাউন্ডারি লাইন ঘেষে।’ তাতে ছিল হয়তো এক রকমের ঔদ্ধত্য। যেটা বলতে চেয়েছে, ‘হতে পারে তুমি পাঁচবার আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছো, হতে পারে তুমি ভারতের সর্বাধিনায়ক, লোকে তোমাকে হিটম্যান বলে ডাকতে পারে, কিন্তু আমার জঙ্গলে আমিই বাঘ – আমি যা বলব তা তুমি করতে বাধ্য। তুমি এখানে চলবে আমার ইশারায়!’
অথচ, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বাঘ তো ছিলেন রোহিত। হার্দিক পান্ডিয়া-সহ পুরো দলটাকে তিনি গড়ে তুলেছেন তিলে তিলে। কিন্তু, এই সবই আজ অতিত।
সাবেক দলনেতা মাথা নিচু করে ছুটলেন, হয়তো চোখে মুখে ছিল অব্যক্ত যন্ত্রনা, লজ্জার ঘামের বিন্দু হয়তো জমেছিল কপালে – কে জানে! ওসব দেখার সময় কোথায় এই প্রতিযোগিতার দুনিয়ায়। রোহিত, দ্য হিটম্যান পৌঁছে গেলেন সীমানায়, যেমনটা তিনি পৌঁছে গেছেন ক্যারিয়ারের শেষ সীমানায়।
নাহ, ক্রিকেট দেবতা ঘুমিয়ে ছিলেন না। ব্যাট করতে নেমে রোহিত ওই সীমানার বাইরে বল পাঠিয়েছেন আটবার। তাঁর ব্যাট খেলেছে তাঁর হয়ে। ওখানে কোনো হার্দিক পান্ডিয়া, কোনো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অদৃশ্য চাপ ছিল না।
বাইশ গজের ওই জায়গাটা আজও তার নিজস্ব জঙ্গল। ওই জঙ্গলের বাঘ ‘জিন্দা হ্যায়’। যেই বাঘ বারবার বলতে জানেন, ‘হিটম্যান জিন্দা হ্যায়, হামে ভুলে তো নেহি!’