উত্তপ্ত ভারতে ‘ঘুমন্ত’ সেই প্রায়র

ভারতের বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজের জন্য ইংল্যান্ড দলকে শারীরিক চ্যালেঞ্জের কথা মনে করিয়ে দেয়ার খুব একটা দরকার নেই।

ইতিমধ্যে শ্রীলংকার গরমে তারা চার সপ্তাহ কাটিয়ে এসেছে ইংলিশ দল। তবুও ইংলিশ ওপেনার নিক কম্পটন সাবেক ইংলিশ উইকেটরক্ষক ম্যাট প্রায়র একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছেন। সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে ভারতে কী সময় আসতে যাচ্ছে ইংলিশ দলের জন্য।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে ম্যাট প্রায়র সোফার হাতলের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন; পরনে টেস্ট পোশাক। এই ছবিটি তোলা হয়েছিলো নাগপুরে ২০১২ সালে।

১৯৮৪-৮৫ সালের পর ২০১২ সালেই প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে ২-১ এ সিরিজ জিতে নেয় ইংল্যান্ড। আর সেই সিরিজ শেষেই ক্লান্ত প্রিয়রের এই ছবিটা স্বাক্ষী দিচ্ছিলো ধকলের।

সেই সিরিজের প্রাপ্তি ও ধকল নিয়ে ছবিটা দেখে স্মৃতিচারণ করেছেন প্রায়র। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে ম্যাট প্রিয়র বলছিলেন, ‘আমার মনে আছে ড্রেসিং রুমে ঢুকে আমি আমার ক্রিকেট কিট খুলে ফেলছিলাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’

প্রায়র বলছিলেন, সেই জয়টা তাঁদের নি:শেষ করে দিয়েছিলো, ‘এতো ভালো একটি জয়ের পরে এটি করতেই পারেন। জয় পাওয়ার জন্য আমাদেরকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। ভারতে গিয়ে জয় পাওয়া আমাদের ক্যারিয়ারের জন্য একটি গৌরবজ্জ্বল বিষয়।’

প্রায়রের কাছে সেই সিরিজটা জয় ছিলো অ্যাশেজ জয়ের চেয়েও বড় একটা ব্যাপার, ‘এটা ঠিক আছে যে, অ্যাশেজ অনেক বেশি প্রচারণা পায়। কিন্তু ভারতে গিয়েও জয় অনেক কষ্টকর। যদি কষ্টকর না হত তাহলে আমরা ভারতে যেতাম এবং সিরিজ জিতে চলে আসতাম। এটি আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার যে আমরা অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে  (২০১০-১১) ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম জয় পেয়েছি এবং ভারতে গিয়ে ২৮ বছর পর প্রথম জয় পেয়েছি।’

যদিও প্রায়র নিচের দিকে ব্যাট করে ৫১.৬০ গড়ে ২৫৬ রান করে দলের জন্য অবদান রেখেছেন; তবে তার প্রধান কাজ ছিলো উইকেটের পিছনে। সিরিজে উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ছয়টি ক্যাচ, একটি স্ট্যাম্পিং এবং একটি রান আউট করেছেন। যদিও খালি চোখে এটি খুব ভালো কোনো পারফর্মেন্স না, তবুও তার সমাদার করতে হবে। কারন তিনি প্রায় ৬৫০ ওভার কিপিং করেছেন।

দীর্ঘ এই সময় ধরে কিপিং করার অভিজ্ঞতা থেকে প্রায়র বলছিলেন, ‘ভারতে টেস্ট খেলা মোটেই সহজ কোনো ব্যাপার না। উইকেট কিপারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেখা যায়, জিমি এন্ডারসন দিনের প্রথম ওভারের প্রথম বল ৮০ মাইলে (মাইল প্রতি ঘন্টা/ ১৪০ কিমি প্রতি ঘন্টা) করে। আমি ঠিক চার গজ পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আবহাওয়া প্রচুর গরম এবং স্যাঁতস্যাঁতে ছিলো। যার কারণে শারীরিকভাবে অবসাদগ্রস্থ হচ্ছিলাম। ভারতে খেললে এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

প্রায়র বলছিলেন, এখানে খেলাটা মানসিকভাবেও ক্লান্তিকর, ‘আপনাকে মানসিক ভাবেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে হতে পারে। ইংল্যান্ডে বড় হওয়া ক্রিকেটাররা সবসময় সুইং এবং গতি দেখে অভ্যস্থ। আর তারা সঠিক লাইন লেন্থের বল ছেড়ে দেয়। কিন্তু ভারএ আপনাকে সম্পুর্ন গেমপ্লান পরিবর্তন করতে হবে। এমনকি সেটা বোলার, ব্যাটসম্যান, উইকেট কিপার এবং ফিল্ডার সবার জন্যই। ব্যাটসম্যানরা বল কিভাবে খেলছে সেটা নিয়েও চিন্তা করতে হবে,যাতে তাদেরকে আউট করা সম্ভব হয়। ভারতে আপনাকে বিপক্ষ দলের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং যতক্ষণ সম্ভব আপনাকে টিকে থাকতে হবে। আর এইভাবেই উইকেট পেতে হবে। ভারতের উইকেট সাধারণত ফ্লাট হয়ে থাকে এবং ব্যাটিং করার যোগ্য থাকে যতক্ষণ না তৃতীয় ইনিংস শুরু হয়। কারণ তৃতীয় ইনিংসেই উইকেটে প্রচুর টার্ন হতে শুরু করে। ইনিংসে লিড নেয়ার জন্য আপনাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাটিং করতে হবে। আমরা এইভাবেই ভারতের থেকে এগিয়ে ছিলাম। আর এইভাবেই সফল হয়েছিলাম।’

 

প্রিয়র উইকেট কিপারদের মনযোগের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন বলেছেন উইকেট কিপারদের শারীরিক চ্যালেঞ্জের কথা। বলেন, ‘সবাই বলে ওয়াকাতে কিপিং করা কষ্টকর কারন সেখানে ৩০ গজ অইছনে দাড়াতে হয়। কিন্তু এটা একটি মজার বিষয় কারন সেখানে বল কোমরের সমান উচ্চতায় বল আসে এবং বল ধরার জন্য অনেক সময় পাওয়া যায়। কিন্তু ভারতে আপনাকে অনেক সামনে দাঁড়াতে হবে। কিপার হিসেবে আপনার সকল টেকনিক দেখাতে হবে। এখানে আপনাকে দীর্ঘক্ষন নিচু হয়ে থাকতে হবে। চাপের মধ্যে আপনার দৃষ্টি নিচুতে রাখতে হবে।’

ম্যাট প্রিয়র ইংল্যান্ডে টকস্পোর্ট এর ধারাভাষ্য দলের একজন সদস্য হতে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন জশ বাটলার এবং বেন ফোকস এই প্রতিবন্ধকতাকে এড়িয়ে যাবে। আর এই সিরিজে ইংল্যান্ড তাদের ভিন্ন ফরম্যাটের ক্রিকেটাদেরকে নিয়ে দল সাজিয়েছে। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টে বাটলার উইকেটের পিছন সামলাবেন। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট থেকে উইকেটের পিছনে দাঁরাবেনবেন ফোকস।

প্রায়র বলেন, ‘উপমহাদেশে গরমের সময়ে উইকেটের পিছনে দাঁড়ানো এক বিস্ময়কর ব্যাপার। আমি শ্রীলংকায় এক মৌসুমে প্রায় ৪ কেজি ওজন হারিয়েছিলাম। কিন্তু এখন যারা কিপিং করবে তারা শারীরিকভাবে ভালো এবং তারা এর জন্য প্রস্তুত। ইংল্যান্ড আধুনিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত। তারা ক্রিকেটারদের বদল করে খেলাচ্ছে। ভারত এমন একটা জায়গা যেখানে আপনি সব ক্রিকেটারকে খেলাতে পারবেন। শুধুমাত্র ১১ জন ক্রিকেটার আপনাকে সিরিজ জেতাতে পারবে না। আপনাকে যোগ্য এবং সামর্থ্যবান হিসেবে বেন ফোকসের দলের সাথে যোগ দেয়া একতি ভালো খবর।’

ফোকসের প্রশংসা করেই প্রায়র বলছিলেন, ‘ফোকস একজন অসাধারাণ উইকেটরক্ষক। পাশাপাশি সে অসাধারণ ব্যাটিং করতে পারে।আমি ভাগ্যবান তার অভিষেক ম্যাচে খেলেছিলাম । খুব বেশি রান হতেই আমরা ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলাম। এটা তার জন্য একটা সুযোগ ছিলো এবং সে একটি শতক করে। আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই রকম একটা সুযোগ অবশ্যই চাবেন।’

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link