বিস্ময়কর বাংলাদেশ, বিস্ময়কর উইন্ডিজ

খেলাধুলাতে অনেক জয়ের কাব্যগাথা লিখতে গিয়ে অবিশ্বাস্য, অসাধারণ, অভাবনীয় এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই শব্দ গুলো ক্রিকেটেও বিভিন্ন সময়ে বসেছে কত শত জয়ের পাশে। কিন্তু আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যা করে দেখিয়েছে সেখানে বড্ড বেমানান লাগছে এই শব্দমালা গুলোও।

একাধারে এটা বিভৎস ও বিস্ময়কর। বিভৎস কারণ বাংলাদেশের শরীরি আচরণ, ফিল্ডিং সেট আপ কিংবা অধিনায়কত্ব – কোনো কিছুতেই জয়ের তাড়ণা পরিস্কার ছিল না বাংলাদেশের। ফিল্ডিং মিস, ক্যাচ মিস, ডিআরএস নেওয়ায় অদক্ষতা ছিল পরিস্কার। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল বাংলাদেশের কোনো প্ল্যান ‘বি’ ছিল না। বড় জুটি হয়ে যাওয়ার পর খেই হারিয়ে ফেলেছিল দল।

অন্যদিকে বিস্ময়কর যে অর্থে সেটা আর না বলে দিলেও চলে। ক্যারিবিয়ানরা ইতিহাস গড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতেছে। চতুর্থ ইনিংসে যেকোনো অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন কাইল মেয়ার্স। সিরিজের প্রথম টেস্টে মেয়ার্সের এই অবিশ্বাস্য ইনিংসে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

টেস্টের প্রথম দিন থেকে চতুর্থ দিন পর্যন্তও চালকের আসনে ছিলো বাংলাদেশ। অনেকের কাছেই স্বাগতিকদের জয়টা ছিলো শুধু মাত্র সময়ের ব্যপার। এমনকি শেষ দিন বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত ধরে আলোচনা চলছিলো মেহেদী হাসান মিরাজের ইতিহাস গড়া নিয়ে। তবে ইতিহাস ঠিকই গড়া হয়েছে; পাল্টে গেছে গেছে শুধু চরিত্রটা।

অভিষেক ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি আছে মাত্র ৬ জন ক্রিকেটারের । কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচে চতুর্থ ইনিংসে এর আগে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি কেউ।  চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা এক মাত্র নাম এখন কাইল মেয়ার্স। শুধু চতুর্থ ইনিংসেই নয়; অভিষেকে দুই ইনিংস মিলিয়ে ২৫০ রান করেছেন মেয়ার্স। যা অভিষেক টেস্টে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে।

ইতিহাস শুধু কাইল মেয়ার্স একাই গড়েননি। ইতিহাস গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। বাংলাদেশের মাটিতে এর আগে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিলো ৩১৭। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই রেকর্ড ভেঙ্গে সংখ্যাটা করেছে ৩৯৫। শুধু বাংলাদেশের মাটিতেই নয়; টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের তালিকায় এই ম্যাচের অবস্থান পাঁচ নাম্বারে।

এর আগে সর্বোচ্চ ৪১৮ রান তাড়া করে জিতেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজই। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েছিলো ক্যারিবিয়ানরা। চারশো রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড রয়েছে আরো তিনটি। এরপরেই অবস্থান এই জয়ের।

গতকাল শেষ বিকালে ৫১ রানের জুটি গড়ে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বোনার ও মেয়ার্স। পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে ও দ্বিতীয় সেশনেও সেই লড়াই চালিয়েছে তাঁরা। প্রথম দুই সেশনে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় সফরকারীরা। এর ভিতর সেঞ্চুরি তুলে নেন মেয়ার্স এবং হাফ সেঞ্চুরি করেন বোনার।

চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ সেশনে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিলো ১২৯ রান। হাতে ছিলো ৭ উইকেটই। তবে শেষ সেশনের শুরুতেই কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু পায় বাংলাদেশ। বোনার-মেয়ার্সের ২১৬ রানের জুটি ভাঙ্গেন তাইজুল ইসলাম। বোনার ৮৬ রান করে আউট হয়ে গেলে উইকেটে এসে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন ব্ল্যাকউড (৯)।

বাংলাদেশ যখন চেস্টা করছে মাচে ফিরে আসার তখনই ষষ্ঠ উইকেটে জসুয়া ডি সিলভাকে নিয়ে আবার প্রতিরোধ গড়েন মায়ার্স। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের ১০০ রানের জুটিতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়। ২০ রান করে সিলভা ও শূন্য রান করে রোচ ফিরে গেলেও দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন মায়ার্স। মেয়ার্স অপরাজিত থাকেন ২১০ রানে।

বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ চারটি, তাইজুল ইসলাম দু’টি এবং মেহেদী হাসান শিকার করেনি একটি উইকেট। তবে, তাতে ম্যাচে কোনো প্রভাব পড়েনি। দেশের মাটিতে লজ্জার মুখোমুখি হল মুমিনুল হক সৌরভের দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link