মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মা, কেন উইলিয়ামসন, শ্রেয়াস আইয়ার, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, ঋষাভ পান্ত, স্টিভেন ফ্লেমিং, মাহেলা জয়াবর্ধনে, টম মুডি, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, অনিল কুম্বলে, রিকি পন্টিং – এই তারকারা তখন মাঠের বাইরে। আহমেদাবাদে চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশ আসরের ফাইনাল। রাজস্থানকে হারিয়ে প্রথমবার আইপিএলে এসেই শিরোপা জয় করে গুজরাট টাইটান্স উদযাপনে ব্যস্ত। উপরের উল্লেখিত এই তারকারা তখন হয়ত স্টেডিয়ামের বাইরে কোথাও আড্ডায় বসে এই ম্যাচ উপভোগ করছেন।
অবশ্য উপরের এই তারকাদের দলগুলোর বেশিরভাগই আইপিএলের শিরোপা ছুঁতে পেরেছে। ব্যতিক্রম মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এই দুই দল মোট ৯ বার জয় করেছে শিরোপা। ডেকান চার্জারস, রাজস্থান রয়্যালস, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ, কলকাতা নাইট রাইডার্সরা শিরোপা ঘরে তুললেও দিল্লী, ব্যাঙ্গালুরু এখনও সেই অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি।
তবে সব দল ছাপিয়ে চেন্নাই-মুম্বাইয়ের সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয়ের পেছনে আসলে কারণ কি? শিরোপা জিততে আসলে কি প্রয়োজন?
- টিম কম্বিনেশন
মেগা নিলামের আগে প্রতি আসরেই দলে খুব একটা পরিবর্তন আনেনি চেন্নাই কিংবা মুম্বাই। নিজেদের গোছানো অপরিবর্তিত দল নিয়েই মাঠে নেমেছে অধিকাংশ ম্যাচেই। দলের একে অপরের সাথে বোঝাপড়া যার জন্য ছিল সবচেয়ে ভাল। টিম ম্যানেজমেন্ট তাদের কোচ ও খেলোয়াড়দের উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছিল। অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মা ও মহেন্দ্র সিং ধোনি পূর্ণ স্বাধীনতাই পেয়েছিলেন।
টিম কম্বিনেশন ঠিক করতে যে সময়ের প্রয়োজন ছিল সেটিও তাঁরা পেয়েছেন। ঠিক এই ব্যাপারটায় উল্টো পথে ছিল বাকি দলগুলো। দলে একাধিক পরিবর্তন, কিছু কিছু দলে অধিনায়ক পরিবর্তন – সঠিক টিম কম্বিনেশন গঠন করতে না পারার ব্যর্থতার কারণেই দল হিসেবে সেরাটা দিতে পারেনি বাকিরা।
পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলামে অধিকাংশ খেলোয়াড়কে ছেড়ে দেওয়ায় সেই পুরনো কম্বিনেশন ধরে রাখতে পারেনি চেন্নাই ও মুম্বাই। যার কারণে দুই দলই ছন্নছাড়া পারফর্ম করে।
- অর্থের ঝনঝনানি
অর্থ কি সাফল্য আনতে পারে? প্রচলিত এই কথা অনেকের মতেই ভুল। অর্থ সাফল্য আনতে পারে না – এটাই অনেকের ধারণা। আইপিএলেও অবশ্য এটি অনেকাংশে সত্য। পঞ্চদশ আসরের নিলামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ৮৯.৯ কোটি রুপি খরচ করে। টুর্নামেন্ট শেষে মুম্বাইয়ের অবস্থা দশ আর হায়দ্রাবাদের আট। বাকি চার দল যারা প্লে অফে যেতে ব্যর্থ হয়েছে তারাও প্রায় ৮১-৮৭ কোটি রুপির মত খরচ করেছে।
আইপিএলের এবারের আসরে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া দশ ক্রিকেটারের মধ্যে লকি ফার্গুসন বাদে বাকিরা কেউই ফাইনাল অবধি পৌঁছাতে পারেননি। পারফরম্যান্সের দিক থেকে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, লিয়াম লিভিংস্টোন, লকি ফার্গুসন বাদে কেউই নজরকাড়া কোনো পারফর্ম করতে পারেননি।
- দলীয় ভারসাম্য
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস – দুই দলই লম্বা সময় ধরে বেশ কিছু খেলোয়াড় ধরে রেখেছিল যারা ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করছে। সেই সাথে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মত অভিজ্ঞ ক্ষমতা রাখে এমন খেলোয়াড়ও ছিল। তরুণ প্রতিভাবানদেরও তৈরি করেছে দুই দল।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ‘ইমপ্যাক্টফুল’ তারকাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টাও করেছে। সব কিছুর মিশেলে দুই দল বেশ ভাল ডেপথের দল গঠন করতে সক্ষম হয়। সেই দল-ই মৌসুমের পর মৌসুম খেলিয়েছে এই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি। দল কিংবা ম্যানেজমেন্টে খুব বেশি পরিবর্তন করার চেষ্টা না করাটাই দলের সাফল্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
আইপিএল ইতিহাসে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স সর্বোচ্চ পাঁচ বার, চেন্নাই সুপার কিংস দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চার বার শিরোপা জয় করে। বিপরীতে, কলকাতা নাইট রাইডার্স দুইবার ও ডেকান চার্জারস, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ গুজরাট টাইটান্স ও রাজস্থান রয়্যালস শিরোপা জিতেছে একবার করে।