বিরাট কোহলি হার্ডহিটার নন, ক্লাসিকাল ঘরানার ব্যাটার – সেটা তাঁর ভক্ত কিংবা নিন্দুক সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন। তাই তো খেলাটা টি-টোয়েন্টি হলেও অন্যদের তুলনায় তাঁকে আগ্রাসী রূপে দেখা যায় না। এসব নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে অনেক, এমনকি চলতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) এই বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরা যাক; ৫১ রান করেছেন আর সেজন্য বল খরচ করেছেন ৪৩টি। অর্থাৎ স্ট্রাইক রেট ১২০ এরও নিচে, সেটা যে ম্যাচের পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই নয় তা আলাদা করে না বললেই চলে। তাঁর এমন ব্যাটিংয়ের কারণেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর দলীয় সংগ্রহ প্রত্যাশার চেয়ে অনেকটা কম হয়েছে।
যদিও সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, শুরুতে এই ব্যাটার আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়েই ব্যাট করেছিলেন। প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন, পাওয়ার প্লের পুরোটা সময় বাউন্ডারির খোঁজে ছিলেন। শুরুর ছয় ওভার শেষে তিনি ১৮ বলে করেছিলেন ৩২ রান। কিন্তু সীমানা দড়িতে ফিল্ডারের সংখ্যা বাড়তেই বদলে যায় দৃশ্যপট, একেবারে স্লথ হয়ে যায় তাঁর রান তোলার গতি।
৩২ থেকে ৫০ – এ ১৮ রান করতে ১৯ বল খেলেছেন এই ডানহাতি। যেকোনো বিচারে এমন পরিসংখ্যান অনাকাঙ্ক্ষিত। কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারে সেসময় ব্যাঙ্গালুরু উইকেট হারিয়েছিল, ফলে ইনিংসের হাল ধরতে হতো তাঁকে। কিন্তু এসব যুক্তিতর্ক যে পুরোপুরি অযৌক্তিক সেটি ম্যাচের স্কোরবোর্ডই বলে দেয়।
পাওয়ার প্লের পর কোহলির পাশে ব্যাট করেছিলেন রজত পতিদার। এই তরুণ রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন বোলারদের ওপর, ফাফ ডু প্লেসিসের এনে দেয়া উড়ন্ত সূচনা কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। উইল জ্যাকসের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন তিনি, এরপর চার আর ছক্কার মারে মাতিয়ে তুলেন পুরো গ্যালারি।
আউট হওয়ার আগে স্রেফ ২০ বল খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন পতিদার, সেটাই যথেষ্ট হয়েছে ব্যাক টু ব্যাক হাফসেঞ্চুরির জন্য। কেবল ১৯ বলেই পঞ্চাশ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি, এই ইনিংস খেলার পথে দুটি চারের বিপরীতে পাঁচ পাঁচটি বিশাল ছক্কা এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।
অ্যাঙ্করিং হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ট্যাকটিক্স, তবে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা দলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিরাট কোহলি সেটাই করলেন হায়াদ্রাবাদের বিপক্ষে; ব্যক্তিগত রান বাড়ানোর নেশায় ইম্প্যাক্টের প্রশ্নে আপোষ করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে থাকবেন এই তারকা। সেটাই সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।
সে বিশ্বকাপে বিরাট কোহলি হয়ত রানের বিচারে দলে জায়গা পেয়ে যাবেন। কেননা তিনিই যে এখনও আইপিএলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। তবে স্রেফ সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে বিশ্বকাপ দলে তার অন্তর্ভুক্তি হতে পারে ভারতের ভরাডুবির কারণ। এমন রুঢ় সত্যটা সম্ভবত মেনে নিতে কষ্টকর। তবে বৃহৎ স্বার্থের জন্যে মাঝে মাঝে বিশাল ত্যাগ করা যে অনিবার্য।