পারলে ‘এ আর এমন কী’, না পারলে নোহিট!

একটা সময় ছিল, কোন ক্রিকেটারকে গালি দিতে হইলেও বন্ধুদের আড্ডায় বসা লাগতো, ধরেন দুই হাজার তিন সাল, আপনার বাবা বা মামা ক্রিকেট বোঝেন, তাকে বলতে পারবেন, ‘এই শচীন দেখতেসেন না? বিশ্বকাপ ফাইনালে পারবে না কিছু করতে।’

বাস্তব হচ্ছে পারেননি, তখন আপনার পরের লাইন হবে, ‘দেখসেন! বলসিলাম না?’

এরপরে খেলার মাঠে, স্ট্যাম্প বগলদাবা করে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার বন্ধুদের সাথে সমঝদার কিছু আলাপ, ‘আমি আগেই জানতাম, শচীন, হেহ অতো ভালো না আসলে।

এর বাইরে বছর দেড়েক পর হয়তো কোনো ট্যবলয়েডের পাতায় লেখা দেখবেন বড় ছাপা অক্ষরে – ‘ENDULKAR’।

কিন্তু এখন আপনার হাতে আছে অবারিত সুযোগ আর সময়, আপনি চাইলে বিশ্বকাপের সময় বাংলাদেশের সেরা ওপেনারের বউকেও বাজে কথা লিখতে পারেন, বিরাট খারাপ খেললে আনুশকা শর্মার ইন্সটাগ্রামে লিখতে পারেন, ‘রাতকো কেয়া খিয়ালা উসকো।’

আমি সম্প্রতি এক মেসেজ পাইলাম, ‘ভাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন।’

বিশ দিন পর, উনিই, ‘*** তোরে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইসি কী ঝুলাইয়া রাখতে! সারাদিন তামিমকে গালি দেস তুই।’

অথচ আমি গালি তো দূরের কথা, আমি তামিমের উচ্চ প্রশংসা করি যেখানে সে ভালো খেলেন, নিজের মতো খেলেন, ফাহিম স্যারও বলসেন তামিম নিজেকে বদলে আসলে ফ্লো হারিয়েছে, ফাহিম স্যার তামিমকে দেখেছেন আপনার বা আমার ধারণারও আগে!

ব্যক্তি আমাকে নিয়ে কেউ সমালোচনা করলে বা গালি দিলে বছর তিন চারেক আগেও খুব প্রতিক্রিয়াশীল ছিলাম, পরে ভেবে দেখসি কারা অযথা গালি খায়, ওয়ার্ক স্টেশনের বেস্ট রিপোর্টার ব্যক্তি, কখনো বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশের অন্যতম সফল মডেল/অভিনেত্রী জয়া আহসান, শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি!

না মাঠের খেলার সমালোচনা সহজেই করা উচিত যতটা সহজে সে ভুল করে বা আউট হয় বা ক্যাচ মিস করে! তাদের প্রশংসাও হয়!

কিন্তু এর মধ্যেও কিছু মানুষ আছেন! যারা দিনের পর দিন পারফর্ম করে যাচ্ছেন, খেলেই যাচ্ছেন কিন্তু তারা খারাপ খেললে গালি খান ঠিকই আর ভালো খেললে শোনেন, ‘এ আর ওমন কী!’

ব্যাটিং পিচে করসে, ফ্ল্যাট ট্র‍্যাক বুলি, অন্যখানে পারবেনা, অ্যান্ড সো অন। নাম মনে পড়ে কোনো? নাম হ্যা শর্মা, রোহিত শর্মা!

খুব ক্রিকেট অনুসারীদের কাছে তিনি ‘হিটম্যান’, কারো মতে, তিনি ইন্ডিয়ার ক্লাস বদলে দেয়া কেউ, দলের কাছে রোহিত মানেই ভরসা, সাধারণের কাছে রোহিত ‘আরে এ আর এমন কী!’

এই শেষ সাধারণের কাতারে ছিলাম আমি, রায়হান মাসুদ!

ইশ! দুইশত চৌষট্টি সংখ্যাটা রোহিতের নামের পাশে ভালোই লাগতো না, কিন্তু এখন লাগে! একটা যোগ্য ব্যক্তি যখন যোগ্যতা অনুযায়ী প্রশংসা না পায় আমার খারাপ লাগে, সেই খারাপ লাগা থেকেই রোহিতের প্রতি আমার একটা সফট কর্নার তৈরি হয়েছে!

ক্রিকেটে ইদানিংকালের তারকা ক্রিকেটারই হবেন অধিনায়ক এই ট্রেন্ড না হলে রোহিতকেই মনে করি ভারতের অধিনায়ক হবার জন্য সুযোগ্য ব্যক্তি! রোহিত দেখিয়েছেনও আইপিএল ইতিহাসে ধোনির রাজত্ব তিনিই শেষ করেছেন!

মগজ মননে ধীরস্থির রোহিত সবসময়ই ঘৃণা পেয়ে এসেছেন! ২০০৭ এ ওয়ানডে বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের পর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শচীন, সৌরভ, দ্রাবিড়দের আর জায়গা হয়নি, সেখানেই রোহিত জানান দেন আমি আসছি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফিফটি দিয়ে!

রোহিত টেস্টে জায়গা পান সৌরভের জায়গায় তাই তাঁকে পছন্দ করা অনেকের জন্য ছিল কঠিন, ওয়ানডেতে রিপ্লেস করেন বীরেন্দ্র শেবাগকে! এটাও কম কঠিন না কিন্তু।

এই সেদিনকার ক্রিকেট বিশ্বকাপেও সর্বোচ্চ রান রোহিতের, বিশ্বকাপ হয়েছে বিলেতে!

এই তো সেদিন অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ানডে সিরিজ হারলো ভারত, গোটা সিরিজেই মনে হয়েছে, রোহিত থাকলে হয়ে যেত! রোহিতের জীবনটাই এমন, কোন সহজ কাজ করেন নাই!

স্কুলে পড়ানোর পয়সা ছিল না বাবার, স্বামী বিবেকানন্দ স্কুলকে আমার স্যালুট, তারা এই ছাত্রের ক্রিকেট প্রতিভার জন্য ফি মৌকুফ করেন, এবার কী তার নামে পোস্টার সাটানো আছে দেয়ালে?

মুম্বাইয়ে হয় হতে হয় বোনাফিদে ক্রিকেটার নতুবা নায়ক। রোহিত কিন্তু দুইটাই, সাথে নেতাও!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link