জহুরি নাকি খাঁটি জহুর চিনতে ভুল করেন না! হীরায় মোড়ানো ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে চিনতে একটুও ভুল হয়নি কিংবদন্তি কোচ লুইস মোনেত্তির। আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী কোচ মেনোত্তির অধীনেই প্রথম জাতীয় দলে সুযোগ আসে ম্যারাডোনার। বাকিটা ইতিহাস!
ম্যারাডোনার হাত ধরে মেক্সিকোতে আসে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা। তবে, ৭৮ সালের বিশ্বকাপ জয়কে এখনো আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও আনন্দদায়ক জয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর সেই জয়ের মূল কারিগর ছিলেন মেনোত্তি।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন মেনোত্তি। লোকচক্ষুর অন্তরালেও ছিলেন দীর্ঘদিন। মৃত্যুর আগে রক্তশূন্যতায় ভুগে প্রায় মাসখানেক হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন। তিনি চলে গেলেও মেনোত্তিজমের প্রভাব আর্জেন্টিনার ফুটবলে থাকবেই।
আর্জেন্টিনার ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে ১৯৬০ সালে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মেনোত্তি। বোকা জুনিয়র্সের হয়ে জিতেছেন আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগ। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব নিউইয়র্ক জেনারেলস ঘুরে পরের বছর যোগ দেন ব্রাজিলের সান্তোসে। ব্রাজিলের কিংবদন্তী পেলের সতীর্থ ছিলেন সেখানে।
চেইন স্মোকার হিসেবে পরিচিত মেনোত্তির ৩৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ার ছিল বেশ বর্ণাঢ্য। লিওনেল মেসির জন্মশহর রোজারিওতে ১৯৩৮ সালে মেনোত্তির জন্ম। রোজারিও থেকে মেসির বহুকাল আগেই বিশ্বজয় করেছিলেন এই মেনোত্তি।
খেলোয়াড়ি জীবনে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলা মেনোত্তি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ১১ ম্যাচ খেলে ২ গোল করেন। খেলা ছাড়ার পর ৩৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ১১টি ক্লাব ও দুটি দেশের জাতীয় দলের কোচের ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন নিজের দেশ আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বে। ১৯৯১-৯২ সালে সামলেছেন মেক্সিকো জাতীয় দলকে।
আর্জেন্টিনাকে ঘরের মাঠে ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জিতিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন মেনোত্তি। ছিপছিপে গড়নের জন্য ‘এল ফ্লাকো’ তকমা পাওয়া মেনোত্তি আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর পরের বছর অনূর্ধ্ব-২০ দলকেও উপহার দিয়েছেন যুব বিশ্বকাপ। জাপানে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
গোল্ডেন বল জিতে সেই টুর্নামেন্ট দিয়ে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক। ফাইনালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দল। মেনোত্তির হাত ধরে বড়দের বিশ্বকাপের মতো যুব বিশ্বকাপও সেবারই প্রথম জিতেছিল আর্জেন্টিনা।
কেউ কেউ বলেন, মেনোত্তির রিভারপ্লেট প্রীতির কারণে ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে বোকা’র এই কিশোরকে দলে নেয়া হয়নি। যদিও, মেনোত্তি দাবি করেছিলেন, বিশ্বকাপ পরবর্তী যুব বিশ্বকাপের জন্য ফিট রাখতেই যুবদলের মূল অস্ত্র ম্যারাডোনাকে জাতীয় দলে নেওয়া হয়নি। ম্যারাডোনারও বিশ্বকাপ জিতে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি।