শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে শাহাদাত হোসেনকে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তাঁর নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে এখনো প্রায় ৪ বছর বাকি রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে বিসিবির কোনো স্টেডিয়াম, জিম ও একাডেমি মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নেই এই ক্রিকেটারের।
কিন্তু গত দুই দিন হলো মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু করেছেন শাহাদাত হোসেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে শাহাদাত কেন মাঠে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখানো শাহাদাতের সঙ্গে। এই পেসার খেলা ৭১-কে জানিয়েছেন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আবেদন করেছেন বিসিবিতে; মাকে বাঁচাতেই ক্রিকেটে ফিরতে চান তিনি। তবে তিনি জানতেন না যে মাঠ ব্যবহার করার অনুমতি নেই তাঁর।
শাহাদাত হোসেন সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন জাতীয় লিগে ঢাকা বিভাগের হয়ে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর। শিরোপা নির্ধারণী সেই ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে সতীর্থ স্পিনার আরাফাত সানিকে বল ঘষে দিতে বলেন শাহাদাত। কিন্তু বল ঘষে দিতে অস্বীকৃতি জানান সানি। এর পরই তাকে চড় থাপ্পড় মারা শুরু করেন এই পেসার।
এমন অপকর্মের জন্য ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞার সাথে শাহাদতকে ১ লাখ টাকা জরিমানাও করে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞার ভিতর ২ বছর ছিলো স্থগিতাদেশ নিষেধাজ্ঞা। এরপর থেকেই ক্রিকেটের বাইরে থাকা এই পেসারের আয়ের পথও বন্ধ রয়েছে।
শাহাদাতের এরকম বিপর্যয়ের ভিতরই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তাঁর মা। চিকিৎসার জন্য এখন অনেক টাকা প্রয়োজন। মাকে বাঁচাতেই ক্রিকেটে ফেরার জন্য গত সপ্তাহে বিসিবির প্রধান নির্বাহী বরাবর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও খেলার আবেদন জানিয়ে চিঠি দেন এই পেসার।
এ প্রসঙ্গে শাহাদাত বলেন, ‘আমি সম্প্রতি আমার নিষেধাজ্ঞা কমাতে বিসিবির কাছে আবেদন করেছি। এখন নিষেধাজ্ঞা কমাবে কিনা সেটা তাদের বিষয়; দেখি কি করে। ক্রিকেট ছাড়া আমি আর কোনো কাজ করতে জানি না। আমার আবারও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরা খুবই দরকার। আমার মা ক্যান্সার আক্রান্ত এবং তাঁর চিকিৎসার ব্যয় বহন করার জন্য আমাকে ক্রিকেটে ফিরতেই হবে।’
বিসিবি এখনো তাকে কোন সিদ্বান্ত না জানালেও হোম অফ ক্রিকেটে অনুশীলন শুরু করেছিলেন শাহাদাত। আর সেখানেই ঘঠেছে আপত্তিকর ঘটনা। প্রথম দিন কিছু না বললেও দ্বিতীয় দিন শাহাদাতকে বোলিং করতে দেখে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে মাঠ ছাড়তে বলেন বিসিবির প্রধান কিউরেটর গামিনী সিলভা। শাহাদাত জানিয়েছেন কোথাও সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়েই মাঠে গিয়েছিলেন তিনি।
এই পেসার বলেন, ‘আমি স্টেডিয়ামে গিয়ে নেট বোলার হিসাবে সোহানকে বল করছিলাম। হঠাৎ করে কিউরেটর গামিনী আমাকে বললো তুমি তো সাসপেন্ড আছো, তুমি বল করতে পারবা না। সোহানকেও বললো অন্য কাউকে দিয়ে বল করাতে। আমি গামিনীকে বললাম আমি জানতাম না যে বল করতে পারব না। এই ঘঠনা দ্বিতীয় দিন হয়েছে; গামিনী আমাকে প্রথম দিন দেখেও কোন নোটিশ করেনি। আমাকে মাঠ ছাড়তে বলা হয়েছিল তখন আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। ওখানে অনেকেই নেট বোলার হিসেবে বল করছিলো। আর আমাকে সুযোগ দেওয়া হলো না। আসলে আমারও কিছু করার ছিলো না, আমি কোথাও অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছিলাম না।
এরকম বিতর্ক এটাই শাহাদাতের প্রথম নয়। ক্যারিয়ার জুড়েই মাঠে ও মাঠের বাইরে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন এই পেসার। এর আগে গৃহকর্মীকে মারধর করার অভিযোগে সস্ত্রীক জেল খাটতে হয়েছে শাহাদাতকে। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালে মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয় তাকে।
এমন ভুলের জন্য অনুতপ্ত শাহাদাত জানিয়েছেন আর কখনো এমন ভুল করবেন না, তিনি শুধু একটা সুযোগ চান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। জোর দিয়ে বলছি যে, যদি বিসিবি আমার সম্পর্কে আর কখনও কোনও ধরনের অভিযোগ পায় তাহলে আমি আমার মুখ দেখাব না। আমি শুধু একটা সুযোগ চাচ্ছি।’
২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন দেশের জার্সিতে সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩৮ ম্যাচে দেশের হয়ে পেসার হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭২ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এছাড়া ওয়ানডেতে ৪৭ ও টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২৫৮ উইকেট রয়েছে শাহাদাতের ঝুলিতে।