যে কৌশলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাল্টে ফেলেছেন অলিম্পিককে

একেবারে খালি হাতে প্যারিস অলিম্পিক থেকে ফিরেছে, আর সেই প্যারিস থেকে বাংলাদেশের জন্য নতুন স্বপ্নের বার্তা নিয়ে ছুটে এসেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে চলেছেন তিনি।

প্যারিস অলিম্পিকে একেবারেই লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। দু:খ নিশ্চয়ই জায়গা করে নিয়েছে কারও কারও হৃদয় গহীনে। তবে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক বাংলাদেশের জন্য বিশাল এক গর্বের জায়গাও বটে। গোটা একটা অলিম্পিক আয়োজনের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

দারিদ্র দূরীকরণ ও সামাজিকভাবে সকলের উন্নয়নের থিওরি তাকে করেছে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। খেলাধুলার সাথেও ‘সামাজিক ব্যবসা’ নীতি সম্পৃক্ত করা যায় এবং সেই নীতি ব্যবহার করেও সফল এক আয়োজন মঞ্চস্থ হয়- সে প্রমাণই রাখলেন মুহাম্মদ ইউনূস।

প্যারিস অলিম্পিকের পুরো আয়োজন জুড়েই ছিল সামাজিক ব্যবসার প্রতিচ্ছবি। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমেই আয়োজকদের জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তাদের আয়োজনের কোন সামাজিক উদ্দেশ্য রয়েছে কি-না। সামাজিকভাবে কোন উন্নতি সাধিত না হলে, তার পেছনে ব্যয় করা সকল অর্থই যে বৃথা।

মূলত ২০১৬ সালে এক নৈশভোজের নিমন্ত্রণ পান মুহাম্মদ ইউনূস। প্যারিসের মেয়র অ্যানি হিডালগোর সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে মূলত আলাপ হয় অলিম্পিক নিয়ে। হিডালগো ও তার জনবল তখন অলিম্পিক আয়োজনের সুযোগের সন্ধানে ছিলেন। ঠিক সে মুহূর্তে ইউনূস আবিষ্কার করেন যে অলিম্পিক হতে পারে তার মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার আদর্শ মঞ্চ।

২০২৪ সালে এসে তিনি বরং সফল হলেন। ছড়িয়ে দিলেন নিজের আদর্শ। পুরো আয়োজনের আদ্যোপান্ত তিনি উপদেশ দিয়েছেন আয়োজক কমিটিকে। তার উপদেশেই স্রেফ দুইটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে প্রায় প্রতিটা অলিম্পিকে প্রয়োজনের বাইরেও নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হত। তাতে বরং একটা বাড়তি ব্যয় যুক্ত হত।

তাছাড়া অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ একপ্রকার ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যের মাঝেও সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি যুক্ত করে দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। এবারের অলিম্পিকে বিশাল সব অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়নি। বরং পরিবেশবান্ধব আবাসস্থল নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া এবারের অলিম্পিকের ভিলেজ প্রস্তুত করা হয়েছে প্যারিসের সবচেয়ে অনুন্নত এক জনপদে।

তাতে করে সেই জনপদে বেশ কিছু মানুষের কর্মের ব্যবস্থা হয়েছে। পাশাপাশি অলিম্পিক ভিলেজে প্রয়োজনে পুনর্বাসনও করা যাবে। এছাড়াও সেই জনপদের সাথে মূল শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত করা হয়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন মেট্রোরেলের লাইন।

পাশাপাশি এবারের অলিম্পিক আয়োজনের দায়িত্বভার স্রেফ দু-তিনটি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। বরং প্রায় কয়েকশো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মাঝে বণ্টন করা হয়েছে আয়োজনের দায়িত্ব। তাতে করে গুটিকতক প্রতিষ্ঠান লাভবান না হয়ে, কয়েকশো ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান মাথা তুলে দাঁড়াবার শক্তি পেল।

শুধুমাত্র একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে একটা জনপদের উন্নয়ন যেমন হয়েছে, তেমনি কয়েকশো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর লাভবান হওয়ার সুযোগ বেড়েছে। তাতে করে আখেরে সামাজিক দ্রারিদ্র দূরীকরণের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে। আর এই পুরো বিষয়টির সাথে যে একজন বাংলাদেশি জড়িত, তা নিশ্চয়ই গর্ব করবার মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link