টেস্টে যেমন এক সেশনেই বদলে যেতে পারে ম্যাচের গতিবিধি, টি-টোয়েন্টিতে সেই বদলে যাওয়ার সময়টা হতে পারে মাত্র এক ওভার। আর নিশ্চয়ই সেই ব্যাপারটা এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন আকিলা ধনঞ্জয়া।
কারণ, তিনি যেমন একই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন। আবার ছয় ছক্কাও হজম করেছেন। শুরু হয় হ্যাটট্রিক দিয়ে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে। তবে, তৃতীয় ওভারেই বিধিবাম। এবার হজম করলেন ছয় ছক্কা। আর দুর্ভাগ্য হল রংবদলের ম্যাচে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর আগে ছয় ছক্কা হাঁকিয়েছেন এমন খেলোয়াড় রয়েছেন দু’জন হার্শেল গিবস ও যুবরাজ সিং। ওয়ানডেতে ছয় ছক্কা মেরেছেন গিবস ও টি-টোয়েন্টিতে মেরেছেন যুবরাজ সিং। এবার টি-টোয়েন্টিতে এক ওভারের প্রতিটি বলে ছক্কা হাঁকানো দ্বিতীয় ক্রিকেটার বনে গেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। আর সাথে সাথে দু:স্বপ্ন উপহার দিলেন আকিলা ধনঞ্জয়াকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বল হাতে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই এভিন লুইস, ক্রিস গেইল ও নিকোলাস পুরানকে আউট করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন আকিলা! বল হাতে তখনি উজ্জ্বল রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছেন তিনি।
১৪তম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিকের রেকর্ডে নাম উঠে যায় তাঁর। লাসিথ মালিঙ্গা ও থিসারা পেরেরার পর তৃতীয় লঙ্কান বোলার হিসেবে এই কৃর্তি গড়েন তিনি। অ্যান্টিগাতে ছোট্ট একটা সংগ্রহ দাঁড় করিয়েও তখন জয়ের স্বপ্নে বিভোর শ্রীলঙ্কা। গল্পের শেষটা এখানেই হতে পারতো, তবে পোলার্ড যে ব্যাট হাতে আরেক গল্প লিখতে প্রস্তুত সেটা হয়তো আকিলার মাথায় ধরেনি!
মুদ্রার এপিঠটা ততক্ষণে দেখে ফেলেছেন আকিলা। তবে মুদ্রার ওপিঠে কি আছে সেটা হয়তো তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। নিজের করা তৃতীয় ওভারে ব্যাট হাতে স্ট্রাইকে ছিলেন টি-টোয়েন্টি দানব কাইরন পোলার্ড। ইনিংসের ষষ্ঠ এই ওভারে তান্ডন চালিয়ে ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকান পোলার্ড। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্বিতীয় ও প্রথম ক্যারিবিয়ান হিসেবে ছয় ছক্কা হাঁকান কাইরেন পোলার্ড।
একই ম্যাচের মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখে ফেললেন আকিলা! কোনো নির্দিষ্ট ম্যাচে বলহাতে হ্যাট্রিক উইকেট ও ছয় ছক্কা খাওয়ার বিরল রেকর্ডে এখন একমাত্র নাম আকিলা ধনঞ্জয়া। মোট চার ওভারে ৬২ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন তিনি! যা কিনা লঙ্কানদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড।
২৭ বছর বয়সী আকিলা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন। ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তার। একই সিরিজে ওয়ানডেতেও অভিষেক হয় আকিলার। রঙিন পোশাকে প্রায় ছয় বছর খেলার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে সাদা পোশাকে অভিষেক হয় এই তরুন অলরাউন্ডারের।
একজন কার্পেন্টারের ছেলে থেকে হলেন ক্রিকেটার। ২০১৭ সালে নিজের দীর্ঘদিনের প্রেমিকা নেথাইলি তেকশিনিকে বিয়ে করেন আকিলা। তার ঠিক দু’দিন পরেই অবশ্য ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ডাক পান তিনি। তার বিয়ের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করেছিলেন আরেক দুই লঙ্কান গ্রেট অজন্তা মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস৷
পরের বছরই ২০১৮ সালের নভেম্বরে গল টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর ১৪ দিনের মধ্যেই তার বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিতে বলা হয় এবং আইসিসির পক্ষ থেকে বলা হয় রেজাল্ট আসা পর্যন্ত তিনি বল করতে পারবেন। পরের টেস্টেই ইংলিশদের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকার করলেও সে ম্যাচে লংকানরা জিততে পারেনি। এরপর তৃতীয় ও শেষ টেস্টের সময় অস্ট্রেলিয়ায় বায়োমেকানিক্যাল টেস্টের জন্য দলে ছিলেন না তিনি, ডিসেম্বর ২০১৮ সালে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের কারণে তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিংয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আইসিসি। অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিংয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছিলো এবং সেখানেও লঙ্কান বোর্ড ক্যামেরার মাধ্যমে নজর রাখবে তার অ্যাকশনের এমন শর্তে।
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, তিনি চেন্নাইতে আবারো নিজের বোলিং অ্যাকশনের টেস্ট দেন। এরপর ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে আইসিসি থেকে তার উপর বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ডাক পান আকিলা।
এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে মাত্র ৬ টেস্ট খেলে ব্যাট হাতে ১৩৫ রান ও উইকেট নিয়েছেন ৪৩টি। ৩৬ ওয়ানডেতে ১ ফিফটিতে ২৮৩ রান ও বল হাতে নিয়েছেন ৫১টি উইকেট। অপরদিকে টি-টোয়েন্টিতে ২২ ম্যাচে ব্যাট হাতে ৪৯ রান ও বল হাতে নিয়েছেন ২২ উইকেট।
মাত্র ২৭ বছর বয়সী এই তরুণ অলরাউন্ডার উইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এমন কৃর্তি গড়েছেন যা ভবিষ্যতেও ভাঙবে কিনা সন্দিহান। তবে একই ম্যাচে সাফল্য ও লজ্জার রেকর্ডে নাম লেখানো আকিলা হয়তো দিনশেষে আক্ষেপের আগুনেই পুড়বেন। বল হাতে হ্যাটট্রিকের দিনে ছয় ছক্কা খাওয়ার লজ্জার রেকর্ডে কেই বা নাম লিখাতে চায়! একই দিনের মূদ্রার উলটো পিঠ টাও দেখে নিলেন এই তরুণ।