কিং কোহলির সেরা

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন বিরাট কোহলি, খবরটা পুরনো হতে না হতেই ৪৬ বলে খেললেন ৭৭ রানের এক ইনিংস। তবে নারী ক্রিকেটে এই কীর্তি আছে দু জনের। নিউজিল্যান্ডের নারী ক্রিকেটার সুজি বেটস ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্ট্যাফানি টেইলরের পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই এলিট ক্লাবে নাম লেখান বিরাট।

টেস্ট ও ওয়ানডে গড় ৫০-এরও বেশি; টি-টোয়েন্টিতে গড় প্রায় ৫১! কমপক্ষে ২০ ইনিংস খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে ভালো রেকর্ড বিরাটেরই। চলুন টি-টোয়েন্টিতে বিরাটের কিছু সেরা মূহুর্তের স্মৃতিচারণ করা যাক।

১.

২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমি ফাইনালে দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা ইনিংসটিকে সে সময়ের হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে তার সেরা ইনিংস হিসেবে আখ্যা দেন বিরাট।

ঢাকায় প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংসে করা ৪ উইকেটে ১৭২ রানের জবাবে লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শেষ ১০ ওভারে ভার‍তের প্রয়োজন ৯৩ রান! ব্যাট হাতে ক্রিজে তখন রয়েছে বিরাট। তার করা ৪৪ বলে ৭২ রানের অসাধারণ ইনিংসে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে ভারত। ২ ছয় ও ৫ চারে প্রোটিয়াদের কাছ ম্যাচ ছিনিয়ে নেন বিরাট। তার মনে পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা সেরা একটি ইনিংস।

২.

২০১৬ টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ডকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হারের পর ২য় ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় ভারত। কার্টেল ওভারের সে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮ ওভারে।

নির্ধারিত ১৮ ওভার পাকিস্তান সংগ্রহ করে মাত্র ১১৮ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৩ রানেই ৩ উইকেট হারায় ভারত। এমন অবস্থায় দলের হাল ধরেন বিরাট কোহলি, তার ৩৭ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংসে ৬ উইকেটের জয় পায় ভারত। ৭ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত থেকে ভারতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন বিরাট।

৩.

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভার‍ত। জয়ী দল যাবে সেমি ফাইনালে! ১৬১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ভারত।

সেখান থেকে দলের হাল ধরেন বিরাট, ৫১ বলে অপরাজিত ৮২ রানের হার না মানা ইনিংসে ৬ উইকেটের জয়ে ভারতকে সেমি ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করান তিনি। শেষ ৬ ওভারে দরকার ছিলো ৬৭ রান, সে সময় মোহালি তে ঝড় তুলেন তিনি। ৯ চার ও ২ ছয়ে সাজানো ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে পছন্দের ইনিংস বলেও আখ্যা দেন গতবছর স্টিভেন স্মিথের সাথে এক সাক্ষাৎকারে।

৪.

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে বিরাট ঝড়ে মেতে উঠে হায়দারাবাদ! প্রথমে ব্যাট করে লিউইস-পুরান ঝড়ে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ২০৭ রান সংগ্রহ করে ক্যারিবিয়ানরা।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলির অপরাজিত ৫০ বলে ৯৪ রানের ঝড়ে ৬ উইকেটের সহজ জয় পায় ভারত! টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এই ম্যাচটিও বিরাটের জন্য স্মরণীয় একটি ম্যাচ। এই ইনিংস খেলার পথে প্রথম ২২ বলে মাত্র ২২ রান করেন তিনি, বাকি ২৮ বলেই করেন ৭২ রান!!!

বিরাটের ভালো ইনিংসের সংখ্যা নেহায়েত কম নয় ; ব্যাট হাতে বেশ কিছুদিন ধরেই ভালো সময় যাচ্ছে না এই ব্যাটিং সম্রাটের! তবুও দলের জয়ের অবদান আর রেকর্ড বইয়ে নিজের নাম দু’টোই সমান তালে করে যাচ্ছেন। ক্যারিয়ার শেষে কত রেকর্ড বইয়ে নিজের দখলে নিবেন সেটা হয়তো আন্দাজ করাই যায় তবে আধুনিক ক্রিকেটে তিনি যে ব্যাটিং আগ্রাসনের রুপরেখা এঁকেছেন, তরুনদের জন্য উন্নতির অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link