ইংল্যান্ডের ‘স্টোকস’ সমস্যা

ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি। ভারতের পোড় খাওয়া পিচে সেই দেশেরই বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে স্টোকস করেন ২১  বলে ২৪ রান, মাত্র এক বাউন্ডারিতে। এই স্কোর যতটা বলছে, মাঠে স্টোকসের দশা ছিল তার চাইতেও দীন।

একেবারে শুরু থেকেই স্টোকস মেরে খেলতে চাচ্ছিলেন, ভুবনেশ্বরের ওপর চড়াও হবার চেষ্টা করছিলেন আর খুব যে সুবিধা করতে পারছিলেন এমনটা বলা যায়না। স্টোকস হার্দিক পান্ডিয়ার ওপরও চড়াও হবার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু সেটাতেও বারবার অসুবিধাতে পড়ছিলেন। আর সে অসুবিধা তো শেষ অব্দি স্টোকসকে প্যাভিলিয়নেই পাঠিয়ে দিল।

এখন এই ধরণের পিচে যেখানে খুব কম ব্যাটসম্যান সফল হচ্ছে, সেখানে স্টোকস না পারলে তাকে পুরোপুরি ব্যার্থ বলা যায়না। এখন অব্দি তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ১০ বার ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছেন। আর এই পজিশনে তিনি রান করেছেন ১০.৫৫ গড়ে, ১২৮.৩৭ স্ট্রাইক রেটে!

এই রেকর্ডের চাইতে অবশ্য স্টোকসের পুরোপুরি টি-টোয়েন্টি রেকর্ড একটু ভাল, তবে সেটা যে খুব বেশি ভাল এমনও না। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে স্টোকসের গড় ১৯.১০ আর স্ট্রাইক রেট ১৩২.৬৩। এই গড় আর এই স্ট্রাইক রেট নিয়ে স্টোকস নিশ্চয়ই ইংল্যান্ডের সেরা টি-টোয়েন্টি দলে খাপ খাবেন না। এখন আপনি হয়তো স্টোকসের বোলিংয়ের কথা বলতে পারেন, কিন্তু সেখানেও ইংল্যান্ড স্টোকস থেকে একেবারেই উপকৃত হচ্ছেনা। পরিসংখ্যান বলছে, স্টোকস ইংল্যান্ডের হয়ে ম্যাচপ্রতি গড়ে ২ ওভার করে বল করেছেন আর সেখানে স্টোকসের বোলিং গড় ৪০, ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৮.৭৮!

তবে মজার ব্যাপার হল, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই ছন্নছাড়া পরিসংখ্যান থাকলেও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে তিনি বেশ সফল। ২০১৭ আইপিএলে তিনি একাই টুর্নামেন্ট মাতিয়েছিলেন। এর বাইরে সব মিলিয়ে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ১-৩ এ ব্যাট করে স্টোকসের গড় ৩৪.৭৯ আর স্ট্রাইক রেট ১৪৫.২৭! তবে লোয়ার অর্ডারে তাঁর গড় ২৬.৭২ আর স্ট্রাইক রেট ১৩৭.১১।

এখন , স্টোকসের এই পারফরম্যান্সের পরও ইংল্যান্ড নিশ্চয়ই স্টোকসকে দল থেকে বাদ দেবেনা। তাহলে ইংল্যান্ডের এই সমস্যার সমাধান কি? স্টোকস যেহেতু একজন অলরাউন্ডার তাহলে সমাধানটা চিন্তা করতে হবে দুইভাবে- ব্যাটে আর বলে!

ব্যাটিংয়ের সমাধানটা খুবই সহজ। স্টোকসের জায়গায় ইংল্যান্ডের ফিনিশারের দায়িত্বটা লিয়াম লিভিংস্টোনকে দেওয়া। এখন ফিনিশারে লিভিংস্টোন খেললে স্টোকস কোথায় খেলবেন? এই ভাবনার উত্তর হল যেহেতু তিনি ঘরোয়াতে টপ অর্ডারে ব্যাট করেছেন তাহলে স্টোকসকে সেখানে ব্যাট করানো যায়। অন্তত দৈন্যদশার ফিনিশার স্টোকসের চাইতে সেখানে আরো ভাল কিছু পেতে পারে ইংল্যান্ড।

আর বোলিংয়ের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড স্লগ ওভারে স্টোকসকে না পাঠালেই মঙ্গলজনক হবে, অন্তত স্টোকসের পরিসংখ্যান আর ইকোনমি সেটাই বলছে। এর চাইতে স্টোকস বরং মাঝের ওভারগুলোতে বল করুক আর স্লগ ওভার জোফরা আর্চার আর কারেন ভাইয়েরা মিলে সামলাক! এটাই হবে স্টোকসকে দলে রেখে ইংল্যান্ডের স্টোকসীয় সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার উপায়।

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link