গোল না করেই ফাইনালে বাংলাদেশ!

শেষ কবে বাংলাদেশকে ফাইনাল খেলতে দেখেছেন বলুন তো? ক্রিকেটে নয়, ফুটবলে। ঘাবড়ে গেলেন? ঘাবড়ে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। উত্তর আমিই বলে দিচ্ছি। গুনতে হুনতে ১৫ বছর পার হয়ে গিয়েছে। দেশের বাইরে ১৫ বছর ধরে কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে না বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। সেই অপেক্ষার পালা ফুরাচ্ছে আগামীকাল। নেপালের তিনজাতি টুর্নামেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশ নামছে নেপালের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছিল অবশ্য দু’দিন আগেই। নেপাল আর কিরগিস্তান অলিম্পিক দলের মধ্যে ম্যাচ ড্র হওয়াতে বাংলাদেশ সরাসরি পৌছে গিয়েছিল ফাইনালে। গতকাল নেপালের বিপক্ষে ছিল তাই নিয়মরক্ষার ম্যাচ। আর সেই নিয়মরক্ষার ম্যাচেই নিয়মরক্ষা করতেই নেমেছিলেন কোচ জেমি ডে।

জেমির অধীনে বাংলাদেশ সাধারণত খেলে থাকে ‘ডিরেক্ট ফুটবল ’। কিন্তু বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য ডিরেক্ট ফুটবল চলে না বললেই চলে। নিচ থেকে লম্বা পাসে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢোকার কৌশল জেমি ডের। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলারদের শারীরিক অবস্থা কোনোভাবেই ট্যাক্টিসের সাথে যায়না। সে জন্য সমালোচনা কম শুনতে হয়নি তাঁকে। তবুও কিরগিজদের সাথে বেশ ভালোই খেলেছিল বাংলাদেশ। শুধু গোলটা পাওয়া হয়নি। ১-০ গোলের জয়ে গোল এসেছে কিরগিজ ডিফেন্ডার কুমারবাজ উল্লুর বাজে ডিফেন্ডিংয়ের সৌজন্যে। সাদ উদ্দিনের ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে উলটো জালে প্রবেশ করিয়ে দেন তিনি।

প্রথম ম্যাচের পরই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় জেমি ডে ছিলেন নিশ্চিন্ত, তাই পুরো দলকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন নেপাল ম্যাচের জন্য। মাঠে নামতে না নামতেই চোখে পরেছিল সেটা। আগের ম্যাচে নামা পুরো একাদশই বদলে ফেলেছিলেন তিনি। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে ফিরেছিলেন জামাল ভুঁইয়া। অভিষিক্ত হয়েছেন দুই ডিফেন্ডার মোহাম্মদ ইমন ও মেহেদী হাসানের। দুই বছর পর গোলবারের নিচে ফিরেছিলেন শহিদুল আলম। আক্রমণভাগে ছিলেন সুমন-রাকিব-আব্দুল্লাহরা।

বলা বাহুল্য নবিশ ডিফেন্স হতাশ করেনি জেমি ডেকে। নেপালের বিপক্ষে আগে দু’বার বড় ভুল করা শহিদুলকে নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল, তা দূর করেছেন ভালোভাবেই। বেশ কয়েকটি সেভ আর মাঝেমধ্যেই গোলবার থেকে বেরিয়ে এসে পাঞ্চ, ক্লিয়ার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন ভুল শুধরে গোলবারের নিচে আবারও ফিরতে প্রস্তুত তিনি। অভিষিক্ত ইমন আর মেহেদীও নিজের সেরা খেলাটা দেখিয়েছেন। নেপালের আক্রমণভাগকে থ্রেট হতে দেননি তারা।

কিন্তু হতাশ করেছে আক্রমণভাগ। আগের ম্যাচের পর আপাদমস্তক বদলে যাওয়া আক্রমণভাগ কিছুই করতে পারেনি। প্রতিপক্ষের গোলবারের সামনে গিয়ে ছিল তাদের অসহায় আত্মসম্পর্ণ। ১০ মিনিটের মধ্যে একটা দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। বাম প্রান্ত থেকে উড়ে আসা ক্রাসে মাথা লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন সুমন রেজা।

নেপালও কম আক্রমণ করেনি। ২১ মিনিটে নিজেদের সেরা সুযোগ হাতছাড়া করেন অঞ্জন বিস্তা। একা গোলরক্ষক শহিদুলকে পেয়েও ফিনিশিং করতে পারেননি তিনি। বরং শট উড়িয়ে দেন গোলবারের উপর দিয়ে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুযোগ এসেছিল ৩৪ মিনিটে। বল নিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে পরা আব্দুল্লাহ পারভেজকে বাঁধা দেন নেপালের ডিফেন্ডার রোহিত চান্দ। পেছন থেকে করা ট্যাকেলে ডি-বক্সের ভেতরেই পড়ে যান আব্দুল্লাহ। পুরো দল জোড়ালো আবেদন করলেও পাত্তা দেননি রেফারি। বরং খেলা চালিয়ে যান নিজের পমতো করে। সেটাই সম্ভবত পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা সুযোগ ছিল।

বাকি ম্যাচটা ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে। কেউই প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। ফলে ০-০ গোলেই শেষ হয়েছে ম্যাচ। আর তাতেই নিশ্চিত হয়েছে স্বাগতিক নেপালের ফাইনাল খেলা।

মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনজাতি ফুটবল টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত কোনো দলই নিজেদের স্কোরশিটে নাম লেখাতে পারেনি। ফাইনাল খেলা দুই দলের খেলোয়াড়েরা তো নই-ই। একমাত্র গোল এসেছে কিরগিজ অলিম্পিক দলের ডিফেন্ডার কুমারবাজ উল্লুর কাছ থেকে। তার একমাত্র আত্মঘাতী গোলই পুরো টুর্নামেন্টের একমাত্র গোল!

আগামীকাল ছন্ধ্যা পৌনে ছয়টায়র আবারও দশরথ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে নেপাল আর বাংলাদেশ। নেপালের ঘরের মাঠে গত তিনবারের গোলশূণ্য থাকার রেকর্ড ভেঙে শিরোপা কি আনতে পারবে বাংলাদেশ? সে প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামীকাল মাঠেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link