একসময় ধারণা করা হত উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যানরা শুধু উইকেটের পিছনেই দূর্দান্ত থাকবেন। ব্যাট হাতে যা করবেন সেটা হবে দলের জন্য বোনাস।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছে ক্রিকেট দলগুলো। এখন ব্যাটিংয়ে বেশ ভালোই অবদান রাখতে হয় উইকেট রক্ষকদের। বিশেষ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে।
উইকেট রক্ষকের এই ভূমিকাটার আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। আর এটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একজন উইকেট রক্ষকের ভূমিকা শুধু উইকেটের পিছনেই নয়, ব্যাট হাতেও রাখতে হয়। না হলে দলে সুযোগ পাওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে একজন উইকেট রক্ষকের জন্য। এই ধারা অব্যাহত আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফ্রাঞ্চাইজি লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল)।
এখন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যানরা নিজেদেরকে ম্যাচ উইনার ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রমাণ করছেন। ৯ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া আইপিএলে যেসব উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যানরা নতুন করে নিজেদের সামর্থ্যে জানান দিতে পারেন, তাঁদেরকে নিয়ে খেলা ৭১ এর এই আয়োজন।
- ঋষাভ পান্ত (দিল্লী ক্যাপিটালস): ভারত
ঋষাভ পান্থ ২০২০ সালে যখন আইপিএলের দল দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে আইপিএল খেলতে আসেন তখন তার ফিটনেস নিয়ে সবাই অনেক প্রশ্ন তুলেছিলো। করোনা মহামারীর সময় লকডাউনে থেকে নিজের ওজন অনেক বাড়িয়ে ফেলেছিলেন এবং ম্যাচ খেলার জন্য ফিট ছিলেন না।
এমতাবস্থায় আইপিএলে ১৪ ম্যাচে মাত্র ১১৩.৯৫ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন মাত্র ৩৪৩ রান। উইকেটের পিছনেও খুব ভালো ফর্মে ছিলেন না তিনি।
ফিট না থাকার পরও আইপিএলের পরে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দলে সুযোগ পান বিকল্প উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দূর্দান্ত পারফর্ম করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করেন এবং দলের প্রধান উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যানে পরিণত হন।
সময়ের ব্যবধানে শ্রেয়াস আইয়ারের অনুপস্থিতিতে দিল্লী ক্যাপিটালসকে নেতৃত্ব দিবেন ২৩ বছর বয়সী এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান।
গত আইপিএলের পর থেকে বেশ দূর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি এছাড়াও উইকেট রক্ষকের ভূমিকাতেও বেশ উন্নতি করেছেন তিনি। ঘরের মাঠে সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দূর্দান্ত পারফর্ম করার তাঁর উপর অনেক বেশি প্রত্যাশা থাকবে এবার।
এবারের আইপিএলে নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে দূর্দান্ত পারফর্ম করবেন এটাই আশা করা যায় তাঁর কাছ থেকে।
- জশ বাটলার (রাজস্থান রয়্যালস): ইংল্যান্ড
জস বাটলার রাজস্থান দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। উইকেটে পিছনে এবং ওপেনিং এই দুই জায়গার দায়িত্বে থাকবেন জস বাটলার।
২০২০ সালের আইপিএলে নিজের সর্বোচ্চ পারফর্ম করতে পারেননি জস বাটলার। যার প্রভাব পড়েছিলো রাজস্থানের পয়েন্ট টেবিলে। পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে থেকে ২০২০ মৌসুম শেষ করেছিলো রাজস্থান।
গত আইপিএলে ১৩ ম্যাচে ১৪৪.৪৯ স্ট্রাইক রেটে ৩২৮ রান করেছিলেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বর্তমানে যেসব ক্রিকেটার অনেক বেশি ভয়ংকর তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন জস বাটলার। আইপিএলে তাঁর সেই বিধ্বংসী রুপ দেখা গিয়েছিলো ২০১৮ আইপিএলে। ভারতীয় ব্যাটসম্যান বীরেন্দ্র শেবাগের টানা পাঁচ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছিলেন তিনি।
আইপিএলের ২০১৮ মৌসুমে ১৫১.৭ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৫৪৮ রান। রাজস্থান রয়েলস চাইবে ২০১৮ সালের পারফর্মেন্স আবারো ফিরিয়ে নিয়ে আসুক ইংলিশ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জশ বাটলার।
- কুইন্টন ডি কক (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স): দক্ষিণ আফ্রিকা
এই মুহুর্ত্বে ফখর জামানের আউট নিয়ে বেশ বির্তকের মধ্যে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আইপিএলে কুইন্টন ডি কক বেশ দূর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি।
রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু থেকে মুম্বাইয়ে আসার পর আইপিএলে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। টানা দুই মৌসুমে মুম্বাইকে আইপিএল শিরোপা ঘরে তোলানোর পিছনে বড় অবদান ছিলো ডি ককের।
সর্বশেষ দুই মৌসুমে ৫০০ এর উপরে রান করেছেন তিনি । ২০১৯ মৌসুমে তিনি ডি কক রান করেছিলেন ৫২৯ রান। আর ২০২০ মৌসুমেও করেছিলেন ৫০০ এর বেশি রান। আর সাথে ছিলো চারটি হাফ সেঞ্চুরি।
এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিতে পারেন। যা কিনা মুম্বাইয়ের আরেক ওপেনার রোহিত শর্মাকে সেট হতে সুযোগ করে দেয়।
ডি কক বেশ দ্রুত দলের স্কোর বোর্ডে ৩০-৪০ রান যোগ করতে পারেন। ভাগ্য সহায় হলে বেশ বড় সড় ইনিংস খেলতে পারেন। আইপিএলে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৫৩।
- নিকোলাস পুরান (পাঞ্জাব কিংস): ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সবাই নিকোলাস পুরানের হিট করতে পারার ক্ষমতা সম্পর্কে জানে। ২০২০ সালের আইপিএলে নিজের স্টোক প্লে দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে রাখেন সবাইকে।
সর্বশেষ আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের (পাঞ্জাব কিংস) হয়ে বেশ মারকুটে ব্যাটিং করেছিলেন। ১৪ ম্যাচে প্রায় ১৭০ স্ট্রাইক রেটে ৩৫৩ রান করেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক মারকুটে ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলের সাথে তুলনা করা যায় তাঁকে।
সর্বশেষ মৌসুমে সান্রাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ৩৭ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি । এই ম্যাচে সাতটি ছক্কা হাকিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর পরও দূর্ভাগ্যবশত ম্যাচ হারতে হয়েছিলো পাঞ্জাবকে।
এই মৌসুমে যদি গর মৌসুমের মত ফর্মে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই রকম দূর্দান্ত পারফর্ম করবেন নিকোলাস পুরান।
- ঈশান কিষাণ (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স): ভারত
কুইন্টন ডি কক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ডেরায় আসার পর থেকে উইকেটের পিছন থেকে সরে এসেছেন ঈশান কিষাণ। এখন মনোনিবেশ করেছেন ব্যাটিংয়ের উপরে, যার বেশ ভালো ফলাফল পাচ্ছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
আইপিএলের গত মৌসুমে ১৪ ম্যাচে ৫১৬ রান করে মুম্বাইয়ের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। দলের অধিনায়ক রোহির শর্মা ইনজুরির কারণে টপ অর্ডারে উঠে ব্যাটিং করেছিলেন ঈশান। এছাড়াও দায়িত্ব নিয়েও বেশ ভালো ব্যাটিং করেছেন তিনি।
গত আইপিএলে রয়েল চ্যালেঞ্জার্সের ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে ৫৮ বলে ৯৯ রান ছিলো আইপিএলের ইতিহাসে রান তাড়া করতে নেমে অন্যতম সেরা ইনিংস। যদিও ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে সুপার ওভারে ম্যাচ হেরে যায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এই ইনিংস ঈশান কিষাণকে বেশ আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ঈশাণ কিষাণের প্রধান শক্তি। এই আত্মবিশ্বাসের জোরেই সাম্প্রতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে দূর্দান্ত পারফর্ম করতে সাহায্য করে। তাঁর এই দূর্দান্ত ফর্ম এইবারের আইপিএল আসরেও দেখা যেতে পারে।