শিশিরের জুতো-গাড়ি ও গুটিকয়েক লাইফলেস সমর্থক

সমর্থক হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের বিশ্বজুড়েই কোনো জুড়ি নেই। দেশ ও দেশের ক্রিকেট নিয়ে আবেগী তারা। কথাটা যেমন ইতিবাচক অর্থে বলা যায়, আবার বলা যায় নেতিবাচক অর্থেও। কারণ, কখনো কখনো কখনো এই আবেগ কিংবা কিছু ক্ষেত্রে অতি-আবেগ তারকাদের স্বাভাবিক সুন্দর জীবনের শান্তি নষ্ট করে।

যেমনটা হল সাকিব আল হাসানের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের ক্ষেত্রে। ফেসবুকে তিনি সম্প্রতি একটা ছবি দিয়েছেন। যাতে ছোট্ট চারকোণা লাল-সবুজ রঙা একটা ছাপ আছে। ব্যস, এক দল লোক ক্রমাগত মন্তব্য করতে থাকলো যে, জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করেছেন শিশির। আর তারা কেমন ধরণের অকথ্য ভাষা ব্যবহার করছেন, সেই প্রসঙ্গে আর নাই বা গেলাম।

শিশির বাধ্য হয়ে ‘কমেন্ট অফ’ করে রাখলেন। পরে জানা গেল, জুতোটা আসলে খ্যাতনামা ইতালিয়ান ব্র্যান্ড ‘গুচি’র। আর যে লাল-সবুজ ছাপটা দেখে লোকে গালমন্দ করছে সেটা আসলে গুচির লোগো। কি একটা কেলেঙ্কারি। দেশপ্রেম দেখাতে গিয়ে এতটা হিপোক্রেসি না দেখালেই কি নয়!

তবে, শিশির কিংবা সাকিবের এই হিপোক্রেসিতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কথা।

এই তো ঈদুল আজহার দিনে শিশির নিজের পেজে একটা মার্সিডিজ গাড়ির ছবি পোস্ট করে লিখলেন, গাড়িটা তিনি ঈদ সালামি হিসেবে পেয়েছেন সাকিবের কাছ থেকে। গাড়িটার দাম বাংলাদেশের মূল্যমানে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। লাইফলেস কমেন্টধারিরা সব বের করে ফেলেছে।

আবারও একদল লোক হৈহৈ রৈরৈ করে উঠলো। সমালোচনা হল বিস্তর। প্রশ্ন আসলো, করোনা ভাইরাস জনিত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন বিপর্যস্ত, বন্যার প্রকোপে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যখন মানবেতর জীবন যাপন করছে, তখন সাকিব-শিশিরের এত বিলাসিতা কেন?

অথচ, সাকিব তাঁর সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে দিন-রাত যে ত্রাণ সাহায্য দিয়ে যাচ্ছেন, কোভিড ১৯ মোকাবেলায় কাজ করছেন – সেটা কারো নজরেই আসলো না। সাকিব তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন, যেটা অনেকে সাধ্য থাকার পরও করছে না। তারপরও সকল সমালোচনা সহ্য করতে হয় সাকিব আর তার পরিবারকে। কেন? এর শেষ কোথায়?

সমস্যা হল, গুটিকয়েক সমর্থক সাকিবকে সাধারণের কাতারে নিয়ে আসতে একধরণের বিকৃত স্বস্তি পায়। মফস্বল থেকে আসা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে নিজের প্রতিভা ও পরিশ্রম দিয়ে সফল হয়েছেন, দেশের সম্মান বাড়িয়েছেন – এই অনুভূতিতে তৃপ্ত হলেও তাঁর বিলাসবহুল জীবনে একদল লাইফলেস বাঙালির মধ্যে একরকম হীনম্মন্যতা কাজ করে। আর সেখান থেকেই আসে হিপোক্রেসি। সাইবার বুলিংয়ের শিকার কখনো হন সাকিব, কখনো বা তাঁর স্ত্রী ও পরিবার। এর সাথে দেশপ্রেমের সম্পর্ক খুবই সামান্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link