খোলা চোখে ইয়ন মরগ্যানের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার যৌক্তিকতা নেই। ৫০ ওভারের ক্রিকেট তিনি বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র ‘ইংরেজ’ অধিনায়ক। ফলে, যেকোনো সময়, যেকোনো উইকেটে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে, যেকোনো দলের নেতা হওয়ার সামর্থ্য বা যোগ্যতা তাঁর আছে।
কিন্তু, গোলমালটা অন্য আরো কয়েকটা জায়গায়। প্রথমত টুর্নামেন্টটার নাম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। খেলাটা হচ্ছে ভারতে। ফলে ভারতের উইকেটে ম্যাচ রিড করতে পারার দক্ষতায় বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনিরা তো বটেই, এমনকি সাঞ্জু স্যামসন, লোকেশ রাহুল কিংবা ঋষাভ পান্তরাও তাঁর চেয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন।
আর এখানে শুধু নেতা মরগ্যান নন, ব্যাটসম্যান মরগ্যানও বিপদে পড়েন। চেন্নাইয়ের মন্থর উইকেটে তাঁর ব্যাটে বলে না হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে, ভারতীয় কন্ডিশনেও তাঁর মানিয়ে নিতে সমস্যা হবেই। এমনকি, মুম্বাইয়ের রানবন্যার ওয়াঙখেড়েতেও তিনি পারছেন না।
বোঝা যাচ্ছে মুম্বাইয়ের ব্যাটিং অর্ডারের মিসিং লিংক এই ইয়ন মরগ্যান। ফলে যাকে অধিনায়ক করলে এত সমস্যা, তাঁকে অধিনায়ক কেন রাখতেই হবে?
আইপিএলের ইতিহাসে বিদেশি অধিনায়ক হিসেবে সফল অনেকেই আছেন। বিশেষ করে শেন ওয়ার্ন, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বা ডেডিভ ওয়ার্নাররা এখানে রীতিমত কিংবদন্তিতুল্য অধিনায়ক। তবে, তাঁদের ব্যক্তিত্বটাই অন্যরকম ছিল। ওয়ার্ন-গিলক্রিস্টরা যখন নেতৃত্ব দিয়েছেন, তখন তাঁরা নিজেদের কাজে ছিলেন কিংবদন্তি – কন্ডিশন কিংবা উইকেট তাঁদের জন্য কোনো ঘটনাই ছিল না। তাই, তাঁরা দল নিয়ে সফল হয়েছেন, শিরোপাও জিতেছেন।
ওয়া্র্নারের ব্যাপারটা খুবই ইউনিক। তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবেও যথেষ্ট সফল। এর চেয়েও বড় ব্যাপার সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলের সাথে তিনি একদম মিশে যেতে পেরেছেন। ভারতীয় পালস ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের প্ল্যানিং-এক্সিকিউশনটা তিনি ধরেতে পেরেছেন।
কেকেআর মরগ্যানের কাছ থেকেও ঠিক একই ব্যাপারটাই আশা করছিল। কিন্তু, কোনো কারণেই হোক সেটা হচ্ছে না। ফলে, আবারো অধিনায়কত্ব নিয়ে মাঝ সাগরে ডুবু ডুবু অবস্থায় ভাসছে শাহরুখ খানের দল।
এখন তাহলে এখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায় কি? অধিনায়ক হবেন কে? কলকাতার যে স্কোয়াড তাতে খুব বেশি বিকল্প হাতে নেই। গেল আসরে শুরুতে অধিনায়কত্ব করেছিলেন দীনেশ কার্তিক। সেই ফলাফল ভাল নয়। মাঝপথেই তাই তাঁকে বাদ দিয়ে কলকাতার টিম ম্যানেজমেন্টকে ভরসা রাখতে হয় এই মরগ্যানের ওপর।
ফলে, দীনেশ কার্তিককে এই আলোচনার বাইরে রাখতে হবে। সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে বাকি থাকলেন – হরভজন সিং, সাকিব আল হাসান, আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইন। এখানে হরভজন সিংয়ে ফর্ম আর বয়স মিলে একাদশে থাকাটাই সব সময় নিশ্চিত না। আর তাঁর পেছনে লম্বা সময় বিনিয়োগ করতে পারবে না কলকাতা।
এরপর থাকেন সাকিব। সাকিব কলকাতা দলের চাহিদা সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারেন। অধিনায়ক হিসেবেও তিনি অভিজ্ঞ। কিন্তু, সমস্যা হল বিদেশি হওয়ায় তাঁরও একাদশে জায়গা পাওয়া নিশ্চিত নয়। ব্যাটিংটা টি-টোয়েন্টি মাফিক হলে চোখ বুজে সাকিবের ওপর ভরসা রাখা যেত। কিন্তু, সেটা এখন সম্ভব নয়।
এরপর থাকলেন দুই ক্যারিবিয়ান – আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইন। এদের দু’জনেরও আছে পারফরম্যান্সজনিত সমস্যা। ফলে, আগামী মৌসুমেই এই দু’জনকে যদি কেকেআর ‘রিটেন’ না-ও করে তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তরুণদের দিকে হাত বাড়াতে পারে কলকাতা। সেক্ষেত্রে ভাল বিকল্প হতে পারেন শুভমান গিল। ইয়ঙ ব্লাডের ওপর ভরসা রেখে আগে-পরে সাফল্য পেয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স কিংবা দিল্লী ক্যাপিটালস। ফলে, সেই উদাহরণগুলো মাথায় রাখা উচিৎ কলকাতার ম্যানেজমেন্টকে।
যদিও, একটা ব্যাপার ঠিক যে আসছে মৌসুমে গোটা দলটাকেই আরেকটু গোছানো দরকার কলকাতার। নাহলে নেতৃত্ব ও আনুষঙ্গিক সংকট ক্রমাগতই বাড়বে।